বাচ্চাদের খুব কমন একটি সমস্যা ‘কোষ্ঠকাঠিন্য’। বাচ্চাকে নিয়ে এই সমস্যায় পড়েনি এমন মা-বাবা খুঁজে পাওয়া কঠিন। সপ্তাহে তিনবারের বেশি টয়লেট না হওয়া বা টয়লেট করার সময় শিশু যদি ব্যথা পায় ও কষ্ট অনুভব করে, তাহলে শিশুটি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে বলে ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে বেশি দেখা যায়। কিন্তু এর থেকে ছোট শিশুদেরও এই সমস্যা হতে পারে। চলুন একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছ থেকে জেনে নেই বাচ্চাদের কন্সটিপেশনের সমস্যা কেন হয় এবং এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের করণীয় কী।
কারণ
১.খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো না হওয়া
শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ালে এবং তা সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি করতে না পারলে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবে মায়েরা শিশুকে খুব পাতলা করে দুধ তৈরি করে খাওয়ান। কিন্তু দুধ পাতলা করে তৈরি করলে তাতে পর্যাপ্ত খাদ্যসার থাকে না, ফলে শিশুর মল তৈরি হতে পারে না। এছাড়া যেসব শিশু দুধ ছাড়া অন্যান্য খাবার খাওয়া শুরু করেছে, তাদের খাবারে আঁশের (ফাইবার) পরিমাণ পর্যাপ্ত না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে। শাকসবজি, ফলমূল এসব খাবার কম খাওয়া বা একদমই না খাওয়ার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
২. কম পানি খাওয়া
শিশুকে পরিমাণের তুলনায় পানি কম খাওয়ালে সে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগবে। পানি কম খেলে শরীর পানিশূন্য হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
৩. অভ্যাস না করানো
শিশুকে সময়মতো প্রতিদিন টয়লেটের অভ্যাস করানো ভালো। কেননা অনিয়মিতভাবে পটি করালে বা অভ্যাস না করালে সহজেই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৪. ভীতি
একবার কোনো শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে টয়লেট করার ব্যাপারে তার মনে এক ধরনের ভীতির জন্ম নেয়। সে ভাবে, পটি করতে গেলে বুঝি আবার কষ্ট হবে। এটা চিন্তা করে সে মল চেপে রাখার চেষ্টা করে। এর ফলে কন্সটিপেশন হয়ে যায়।
৫. অসুখ-বিসুখ
কিছু কিছু অসুখ-বিসুখের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
- মলদ্বারে ফিশার বা ক্ষত
- মলদ্বারের বা মলনালীর অস্বাভাবিক গঠন
- অন্ত্রের আবদ্ধতা
- হার্সপ্রাং ডিজিজ
- থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা হ্রাস প্রভৃতি
৬. ওষুধপত্র
কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহারের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। যেমন- অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, পেটব্যথার ওষুধ প্রভৃতি। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য শিশুকে বারবার পারগেটিভ জাতীয় ওষুধ দিয়ে টয়লেট করালে শিশু এর প্রতি স্বাভাবিকভাবেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন কোষ্ঠকাঠিন্য লেগেই থাকে।
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য এর লক্ষণ
- পটি করার সময় কষ্ট অনুভূত হওয়া
- কান্নাকাটি করা
- শক্ত বা অল্প পরিমাণে মলত্যাগ হওয়া
- পেটে ব্যথা বা পেট ফুলে থাকা
- বমি বমি ভাব
- রক্ত যাওয়া
- খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া
করণীয়
- জন্মের পর পূর্ণ ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে
- যদি ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ান, তাহলে সঠিক প্রণালীতে তৈরি করে খাওয়াতে হবে
- ছয় মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চার পরিপূরক খাবারে পর্যাপ্ত ফাইবার ও পানি যেন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
- এক বছর বয়সের পর থেকে বাচ্চাকে সকালে খালি পেটে পানি দিতে হবে ও নাস্তার আগে অবশ্যই পটি ট্রেনিং করাতে হবে
- বাচ্চার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পানি আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
- বাচ্চাদের অবশ্যই প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে
- ঘরোয়া ব্যায়াম ও নিজের কাজ গোছানোর মতো বিষয়গুলোতেও অভ্যাস করানো জরুরি, এতে কায়িক পরিশ্রম হবে, হজমশক্তি বাড়বে এবং পেট পরিষ্কার থাকবে
- বাইরের জাংক ফুড ও বেশি পরিমাণে রেড মিট না খাওয়ানোই ভালো
- সেই সাথে শিশুর মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে হবে
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য গুরুতর হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মা-বাবা একটু সচেতন হলেই শিশুর এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। আজ তাহলে এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন।
লিখেছেন- ডা: তাজরিনা রহমান জেনি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্রগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ
ছবি- সাটারস্টক