আমাদের উপমহাদেশে সবচেয়ে আকষর্ণীয় ও অসাধারণ সুন্দর পোশাকটি কি বলুনতো?হ্যাঁ আপনি ঠিক ধরেছেন ।সেই অনন্য সুন্দর পোশাকটি হল শাড়ী ।শাড়ীতে বাঙালী নারীদের যত মানায় তা আর অন্য কোন পোশাকেই মানায় না ।আর শাড়ী আসলেই যে জিনিসটি খুব মনে পড়ে তা হল ব্লাউজ ।যদি শাড়ী হয় কোন শিল্পীর রঙ্গে আঁকা ক্যানভাস তবে ব্লাউজ তার ফ্রেম ।মোটকথা ব্লাউজ আজকের যুগে ফ্যাশনে নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে ।অনেক শাড়ী শুধুমাত্র একটি সুন্দর আর ফ্যাশনেবল ব্লাউজের কারণে অনেক গুণ মোহনীয় করে তুলতে পারে আপনাকে ।আবার একটি সুন্দর শাড়ী মানানসই ব্লাউজের অভাবে হারিয়ে ফেলতে পারে তার মাধূর্য। তাই ব্লাউজটি হতে হবে ফ্যাশনেবল এবং মানানসই ।চলুন তাহলে জেনে নেই শাড়ীর সাথে কিভাবে মানানসই ব্লাউজ পরে আপনি নিজেকে মোহণীয় করে তুলবেন –
- এই গরমে হাল্কা সুতি বা লিনেন এর ব্লাউজ প্রথম পছন্দ হোক ।কেননা তা হালকা এবং আরামদায়ক ।খাদির নরম বুনোটের ব্লাউজও এই গরমে আরাম দিবে খুব।স্লিভলেস বা হাতকাটা ডিপ নেকে যদি একটু লেসের হাল্কা ফ্রিল জুড়ে দেন তাহলে ব্লাউজটি হয়ে উঠবে আরও ফ্যাশনেবল ।ছাপা বা ব্লকের ব্লোড প্রিন্টের বোটনেক ব্লাউজ এক রঙ্গা শিফনের শাড়ী দিয়ে স্বান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে পড়ে চমকে দিতে পারেন সবাইকে ।
- ব্লাউজ পড়বেন কন্ট্রাস্ট করে ।সুতির শাড়ীর সঙ্গে সিল্কের ব্লাউজ এবং প্রিন্টের শাড়ীর ক্ষেত্রে প্রিন্টের যে রঙ্গটি বেশী ফুটে উঠে সেই রঙ্গের
- ব্লাউজ পড়লে ভালো লাগবে ।সামনে কুচি দেয়া ও থ্রি কোয়াটার হাত ।হাত আর গলায় লেইস দেয়া , ঠাকুরবাড়ির ব্লাউজ হিসেবে পরিচিত ব্লাউজগুলো পড়তে পারেন পহেলা বৈশাখ ও বাঙালিয়ানা দিনগুলোতে ।এছাড়া বর্তমানে ব্লাউজ ঘটি হাতের জনপ্রিয়তা খুব চোখে পড়ার মত।গ্রামীণ চেক ,ঢাকাইয়া শাড়ীর সাথে খুব মানায় ঘটি হাতা আর পিছনে ডিপ নেকের ব্লাউজগুলি ।ব্লাউজে পাথর বা চুমকির কাজ করে এটিকে আরো গর্জিয়াস করা যায় তবে এই টাইপের ব্লাউজের সাথে খুব ভারী কাজের শাড়ী না পড়ে হালকা টাইপের শাড়ী পড়লে ভালো লাগবে।
- ছাপা ,চেক ,স্ট্রাইপ ,কাতান কাপড়ের ব্লাউজ এখন অনেক চলছে ।ব্লাউজের গলাটি গোলাকার ,ডিম্বাকার ,ইউশেপ ,স্কয়ার ,ভি ,বক্স বিভিন্ন শেপের করতে পারেন ।
- থ্রি কোয়াটার বা স্লিভসহ ব্লাউজ ও পড়তে পারেন ।তবে তা গরমকালের চেয়ে শীতকালেই বেশী আরামদায়ক ও মানানসই ।কিছুটা কোর্তা ধরণের ব্লাউজ ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেশী উপযোগী ।
এখন জেনে নিন বেশ কিছু ব্লাউজের ধরন –
০১. কলার স্টাইল:
ব্লাউজে কলার দিলে একটা কর্পোরেট লুক আসে ।এয়ারলাইন্স ও ফাইভস্টার হোটেল গুলোতে কর্মরত মেয়েদের এই টাইপ ব্লাউজ পড়তে দেখা যায় ।
০২. ব্যাকলেস চোলি:
এই টাইপ ব্লাউজে পিঠের অনেকটা অংশ থাকে উন্মূক্ত । কমবয়সী মেয়েরা এই ব্লাউজ পড়তে পারেন অনায়াসে ।তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে পিঠটি যেন আকর্ষণীয় হয় ।পিঠে দাগ থাকলে বা পিঠ মসৃণ না হলে ,ফুসকরি টাইপ কিছু থাকলে ব্যাকলেস ব্লাউজ না পড়াই ভালো ।এই টাইপের ব্লাউজ পরার আগে পিঠের যত্ন নেয়া প্রয়োজন ।ব্যাক পলিশ করে নেয়া উচিত্ ।
০৩. হল্টারনেক:
মূলত ফিতে বক্ষ বন্ধনী হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।কাঁধের একটি বিরাট অংশ, গলা ও পিঠ উন্মুক্ত থাকে ।
০৪. সিঙ্গেল সোল্ডার :
একটি কাধে ব্লাউজের সোল্ডার থাকে অন্য কাধটি থাকে উন্মুক্ত ।যাদের কাধের অংশটি চওড়া তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন ।
আপনার সাধের ব্লাউজটি রেডিমেড কিনে নিতে পারেন ।তবে এগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ফিটিং হয় না ।তাই কেনার পর অল্টার করে নিতে হবে ।তবে বেশী তাড়াহুড়া না থাকলে ব্লাউজ না কিনে একেবারে বানিয়ে নেওয়া ভাল ।এতে ফিটিং ভাল হয় ।আর মনের মত ডিজাইন দিয়েও ব্লাউজ বানিয়ে নিতে পারবেন ।
কেমন ফিগারে কেমন ব্লাউজ পড়বেন:
- যারা অনেক চিকন তারা হল্টার নেক ,স্লিভলেস ব্লাউজ সিফনের শাড়ী দিয়ে পড়তে পারেন ।এছাড়া চিকন স্বাস্থ্য হলে হাইনেক বা কলার ব্লাউজ পড়লে ভাল লাগবে ।বেশী শুকনা শরীরে বেনারসি পড়লে একটু ফোলানো স্লিভসহ ব্লাউজ পড়লে ভাল লাগবে ।
- যাদের শরীর একদম ফিট মানে যাদের ফিগার ভালো তারা যেকোন টাইপের ব্লাউজ পড়লেই ভালো লাগবে ।তবে শর্ট স্লিভের ডিপ কাট নেক ও ব্যাকের ব্লাউজ পড়লে বেশী ভালো লাগবে ।
- যারা একটু মোটা তারা পারতপক্ষে স্লিভলেস ব্লাউজ পড়া থেকে বিরত থাকুন।তার থ্রি কোয়াটার বা ফুল স্লিভ বা ফুল হাতা ও ভি কাটের গলার ব্লাউজ পড়তে পারেন ।
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয় :
- ব্লাউজটি যেন অবশ্যই অনেক ফিটিং হয় ।
- স্লিভলেস পড়ার জন্য অবশ্যই হাত হতে হবে সুঢৌল,মেদহীন,লোকমুক্ত ।
- অতিরিক্ত মোটা আর ক্ষীণকায় হাত হলে স্লিভলেস না পড়াই ভাল ।
- স্লিভলেস ব্লাউজ পরার জন্য নিজেকে আত্নবিশ্বাসী হতে হবে ।স্লিভলেস পড়ে নিজে অস্বস্তি ফিল করলে আশেপাশের মানুষও অস্বস্তি ফিল করবে।
- পরিবেশ ,অনুষ্ঠান ,বয়স ও রুচিবোধ অনুযায়ী ব্লাউজ পড়ুন ।
- মেরুন ,হালকা গোল্ডেন ,সিলভার এবং ব্ল্যাক রঙ্গের ব্লাউজ অনেক শাড়ীর সাথে মানিয়ে যায় ।তাই এই রঙ্গের ব্লাউজগুলো বানিয়ে রাখতে পারেন ।
- প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে সিম্পল টাইপের ব্লাউজ পড়া উচিত্ ।কেননা তা আরামদায়ক এবং মানানসই ।
ব্লাউজ পড়ার সময় একটা জিনিস মনে রাখবেন- যেই ব্লাউজই পড়েন না কেন তা কেরি করার ক্ষমতা আপনার থাকতে হবে ।শুধু হালের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে ফ্যাশনাবল একটি ব্লাউজ পড়লেই হবেনা ।আপনাকে যা মানায় তাই পড়ার চেষ্টা করবেন ।ফ্যাশন সচেতন অবশ্যই হবেন তবে একটু বুঝে শুনে ।আর তাতেই হয়ে উঠবেন আপনি অনন্যা ।
লিখেছেনঃ লিলাবতী লিমা