বর্তমানে স্কিন কেয়ারে যে টার্মটি সবচেয়ে বেশি হাইপ তুলেছে তা হলো কোরিয়ান বিউটি, যেটিকে সংক্ষেপে কে-বিউটি বলা হয়ে থাকে। কোরিয়ান স্কিন কেয়ার পুরো বিশ্বে এখন খুবই জনপ্রিয়, কেননা বিভিন্ন ধরনের ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস এই রেঞ্জের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে ব্যবহার করা হয়, যেগুলো কোনো ক্ষতি ছাড়াই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আজকের ফিচারে কোরিয়ান স্কিন কেয়ারে জনপ্রিয় এমন ১০ টি ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট নিয়ে জানাবো।
কোরিয়ান স্কিন কেয়ারে জনপ্রিয় কিছু ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট
রাইস ওয়াটার
যে ভাত ছাড়া আমাদের এক বেলা ও কাটে না, সেই রাইস বা রাইস ওয়াটার স্কিন কেয়ারে ব্যবহার করছে কোরিয়ানরা। কারণ রাইসে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি, ই ও মিনারেলস, যা ত্বকের হাইপার পিগমেন্টেশন কমায়। সেই সাথে ত্বকের ব্লেমিশ ও স্পটও কমিয়ে ফেলে। এর আরেকটি উপকারী দিক হলো এটি স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। ড্রাই স্কিনের পাশাপাশি যেকোনো স্কিন টাইপে রাইস বেইসড প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।
গ্রিন টি
গ্রিন টি এর নাম শুনলে এর স্বাদের কথা ভেবে মুখ বাংলা পাঁচের মতো হয়ে যায় অনেকেরই। গ্রিন টি পান করা যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমন স্কিনের জন্য এটি বেশ উপকারী। এটি একটি পাওয়ারফুল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও সুদিং এজেন্ট যা স্কিনের একনে, ইরিটেশন ও সান ড্যামেজ কমিয়ে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড ও নারিশড রাখার কাজেও এটি খুবই জনপ্রিয়, কারণ এটি ভিটামিন-ই ও L Theanine অ্যামাইনো অ্যাসিডের ভালো উৎস। এছাড়াও গ্রিন টি অয়েল কনট্রোল করে স্কিনের ড্রাইনেস কমিয়ে দেয়। তাই অয়েলি, ড্রাই বা কম্বিনেশন যেকোনো স্কিনেই এটি ভালোভাবে মিশে যায়।
সেন্টেলা এশিয়াটিকা
একটু কঠিন লাগছে তাই না এই বৈজ্ঞানিক নামটি? নাম কঠিন হলেও এটি আমাদের হাতের কাছে পাওয়া সবচেয়ে পরিচিত একটি ভেষজ গাছ থানকুনি বা আদামণি। এই ছোট গাছটি আমাদের ত্বকের যত্নে জাদুর মতো কাজ করে। এতে আছে হাইড্রেটেটিং, সুদিং, হিলিং, অয়েল কনট্রোল ও অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টিজ। সব মিলিয়ে এটি যেন এক কমপ্লিট প্যাকেজ আপনার স্কিনের জন্য।
প্রপোলিস
কোরিয়ান স্কিন কেয়ারে আরেকটি জনপ্রিয় উপাদান হলো প্রপোলিস। এটি মৌমাছির চাকে থাকা হানি বি দ্বারা তৈরি রেসিনের মতো টেক্সচারের একটি ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট। একনে প্রন স্কিনের জন্য এটি বেস্ট চয়েস, কারণ এতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাংগাল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ। তাই এটি ব্যবহারে স্কিনের ইরিটেশন, র্যাশ ও ব্লেমিশ সহজেই কমে যায়। এটি রেগুলার ব্যবহার করলে ডেড স্কিন সেল রিমুভ হয়ে স্কিন ভিতর থেকে হেলদি হয়ে উঠে।
স্নেইল মিউসিন
স্নেইল বা শামুকের শরীর থেকে নিঃসৃত হওয়া হাই গ্লাইকোসাইলেটেড প্রোটিন, যাতে আছে স্নেইল মিউসিন নামে একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট। এতে আছে ন্যাচারাল প্রোটিন যা স্কিনের কোলাজেন ও ইলাস্টিন বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও আছে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড যা একটি এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে এবং এতে থাকা অ্যালানটোইন স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে। ওভারঅল গ্লোয়িং ও ফ্ললেস স্কিন পেতে স্নেইল মিউসিনের জুড়ি নেই। যদিও এটি সেইফ ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসাবে বিবেচিত, তবে অনেকের এতে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া জরুরি।
মাগওয়ার্ট
সাউথ কোরিয়াতে এই ছোট ভেষজ উদ্ভিদের বেশ ব্যবহার রয়েছে স্কিন কেয়ারে। মেডিসিনাল টনিক, টি,প্যানকেক এমনকি বাথ সোপ হিসেবেও মাগওয়ার্ট ব্যবহৃত হয়। এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাংগাল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ স্কিনকে ডিটক্সিফাই করে নতুন সেল গঠনে সাহায্য করে। তাই এটি যেকোনো প্রবলেম্যাটিক স্কিনের জন্য খুবই ভালো কাজ করে।
জিনসেং
কোরিয়ান বিউটির কথা আসলে এই জিনসেং এর কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। এটা সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত কারণ এতে প্রচুর মিনারেল, ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যা স্কিনের ফ্রি রেডিক্যালসের সাথে ফাইট করে সেলুলার ড্যামেজ কমায়। এটি স্কিনের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে ফাইন লাইনস ও ডালনেস কমায় এবং অয়েল প্রোডাকশন ব্যালেন্স করে।
লিকোরাইস
ডার্ক স্পট ও হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে লিকোরাইস সাহায্য করে। এটি স্কিনের মেলানিন প্রোডাকশন স্লো করে সান ড্যামেজ কমায় এবং প্রি ম্যাচিউর এজিং প্রতিরোধ করে। এর পাশাপাশি যাদের মুখে ওপেন ও লার্জ পোরস রয়েছে, তাদের স্কিনের জন্য লিকোরাইস বেইজড প্রোডাক্ট- স্পেশালি টোনার বা সিরাম বেশ ভালো কাজ করে। কারণ এটি পোর মিনিমাইজ করে পাশাপাশি স্কিনকে ইভেন টেক্সচার দেয়।
ইউজা
লেবুজাতীয় কোরিয়ান এই সাইট্রাস ফলে তিন গুণ বেশি ভিটামিন-সি আছে সাধারণ লেমনের তুলনায়। তাই ফলে অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে এটি দারুণ কাজ করে। এছাড়াও এটি ডার্ক স্পট কমিয়ে স্কিন ব্রাইট করতেও সাহায্য করে। এটি স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়, স্কিনকে সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে প্রোটেকশন দেয় এবং স্কিনকে ন্যাচারালি ময়েশ্চারাইজ করে।
ক্লে
স্কিন কেয়ারে বেশি ব্যবহৃত ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো ক্লে। ক্লেনজিং ও স্কিন পিউরিফাই করার ক্ষেত্রে ক্লে বেশ পপুলার। সফট ও ফাইন গ্রেইনের এই মিনারেল উপাদান স্কিনের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে স্কিনকে ভিতর থেকে ক্লিন করে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্লে পাওয়া যায়। যেমনঃ বেনটোনাইট, কেওলিন,রেড ক্লে ইত্যাদি। এর মাঝে বেনটোনাইট ও কেওলিন ক্লে বেশ পরিচিত। বেনটোনাইট ক্লে ভলকানিক বা আগ্নেয়গিরি থেকে এক্সট্রাক্ট করা হয় এবং এটি অয়েলি স্কিনের জন্য বেশ ভালো। আর ড্রাই বা সেনসিটিভ স্কিনের জন্য কেওলিন ক্লে ভালো।
এই ছিল কোরিয়ান স্কিন কেয়ারে ব্যবহার করা হয় এমন দশটি ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট এর নাম এবং এগুলোর উপকারী দিকসমূহ। আপনারা নিজেদের ত্বকের ধরন ও কনসার্ন বুঝে স্কিন কেয়ার রুটিনে এগুলো অ্যাড করতে পারেন। অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টসের জন্য আমি সবসময়ই সাজগোজ এর উপর ভরসা রাখি। আপনারাও ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
লিখেছেনঃ রুজাইয়াত তানজিল
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ