একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে মেয়েদের জীবনের অর্ধেক সময় নাকি রান্নাঘরেই পার হয়ে যায়! যাই হোক না কেন, রান্না করতে গেলে কিন্তু রান্নাঘর অপরিষ্কার হয়েই যায় আর রান্নাঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা অবশ্য কর্তব্য। কারণ এর সাথেই আমাদের সুস্বাস্থ্য জড়িয়ে রয়েছে৷ আর রান্নাঘর সুন্দরভাবে গোছানো থাকলে কাজ করতেও বেশ সুবিধা হয়। আজ আপনাদের রান্নাঘরের ডিপ ক্লিনিং টিপস অ্যান্ড ট্রিকস সম্পর্কে জানাবো।
রান্নাঘরের ডিপ ক্লিনিং
সিংক ঝকঝকে রাখার উপায়
রান্নাঘরের সিংক বার বার ব্যবহারের কারণে ময়লা হয়ে যায়। এটি স্যানিটাইজ করতে এক আউন্স ব্লিচ, ১/২ কোয়ার্টার পানি, ১ চা চামচ ডিশ ওয়াশের মিশ্রণ ছিটিয়ে দিন। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর একটি বড় ব্রাশ দিয়ে স্ক্রাব করুন। কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফ্লোর ডিপ ক্লিন করার জন্য টাইলসে হাফ কাপ বেকিং সোডা আর ১ কাপ ভিনেগার ছিটিয়ে দিন এবং গরম পানি ঢেলে দিন। খুব সহজে সিংক আর ফ্লোর পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রেফ্রিজারেটর ডিপ ক্লিনিং করতে ভুলবেন না
American Cleaning Institute survey এর তথ্যমতে ৪১% মানুষ শেষ কবে রেফ্রিজারেটর ক্লিন করেছিলো সেটা মনেই রাখতে পারে না! অথচ বেশিদিন ফ্রিজ ক্লিন না করলে এটিতে জীবাণু আর ছত্রাকের আস্তানা তৈরি হয়। তাই নিয়মিত রেফ্রিজারেটর ক্লিন করা উচিত।
১) প্রথমে আপনার রেফ্রিজারেটরটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিন। তারপর সব কিছু বের করে রেখে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এতে ভেতরের সব জমাট বাধা বরফ গলে বের হয়ে আসবে। এবার পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পানি মুছে নিন।
২) রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাকে ১ কাপ পানি, হাফ কাপ সাদা ভিনেগার আর ১ চা চামচ ডিশ ওয়াশের মিশ্রণ দিয়ে স্প্রে করুন। একটি ভেজা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে পুরোটা মুছে নিন।
চুলা পরিষ্কার করুন প্রতিদিন
চুলার উপরে ও নিচে ১ কাপ পানি ও ১ চা চামচ ডিশ ওয়াশের মিশ্রণ দিয়ে স্প্রে করুন। চুলার উপরের অংশে গ্লাস থাকলে নরম কাপড় ও স্টিলের হলে শক্ত মাজুনী ব্যবহার করুন। তারপর শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিন, চকচকে হয়ে যাবে। প্রতিদিন এই কাজটি করুন, তেল-মসলা আর জমে থাকবে না! একটি ট্রিকস শেয়ার করি, কিচেন কাউন্টার এর উপর রান্নার আগে কাগজ দিয়ে নিতে পারেন। এতে করে রান্নার সময় তৈলাক্তভাব থাকবে না; হলুদ, মসলা এগুলো পড়লেও চুলার আশপাশে ময়লা হবে না! রান্নার পর কাগজটি সরিয়ে ফেলুন।
একজোস্ট ফ্যান পরিষ্কার করার নিয়ম
এখানেই সবচেয়ে বেশি তেল, ময়লা, ধুলো ইত্যাদি জমা হয় তাই সাধারণ সাবানে যদি এটি পরিষ্কার না হয়, তবে বেকিং সোডা মিশিয়ে ভালো করে স্টিলের মাজুনী দিয়ে ক্লিন করে নিন। তবে এগুলো ক্লিন করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য, তাই পেশাদার লোক দিয়ে ৩/৪ মাস পরপর ক্লিন করিয়ে নিতে পারেন।
ওভেন ক্লিনিংয়ের সহজ উপায়
র্যাক বের করুন এবং হালকা গরম পানি ও ডিশ ক্লিনার দিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখুন। স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। পানি ঝরিয়ে নিন। এবার ওভেনের ভেতরে ক্লিনিং এর জন্য এক বাটি পানিতে ভিনেগার বা লেবুর রস মিশিয়ে তা ওভেনে এক মিনিট গরম করে নিন। এতে গরম পানির বাষ্প পুরো ওভেনে ছড়িয়ে পড়বে, মুছতে সুবিধা হবে।
আরেকটি উপায় বলে দিচ্ছি- ১ কাপ পানি, ২ চা চামচ লেবুর রস, ২ টেবিল চামচ ডিশ ওয়াশের দ্রবণ দিয়ে ভিতরের অংশে স্প্রে করুন, পাঁচ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করে তারপর একটি ভেজা কাপড় দিয়ে সোয়াইপ করুন। ওভেনের বাইরেও একইভাবে ক্লিন করে নিন।
মাসে ২ বার ক্লিন করুন কেবিনেট
কিচেন কেবিনেটে তেলাপোকাসহ অন্য পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে। মাসে অন্তত দুইবার চেষ্টা করুন কেবিনেট ক্লিন করার। সব নামিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। এতে স্যাঁতস্যাঁতেভাব থাকবে না, তেলাপোকার উপদ্রব হবে না, আবার কোনো গন্ধও হবে না।
বোনাস টিপস
স্টেনলেস স্টিলের কিচেন গ্যাজেটস যত্নে না রাখলে তাতে জং পড়ে যেতে পারে, তাই প্রতিদিন ব্যবহারের পর সেগুলো শুকনো কাপড়ে দিয়ে মুছে নিন৷ নিয়মিতভাবে ক্লিন করলে জং পরার সম্ভাবনা কমে যায়। রান্না শেষে বেকিং সোডা মিশিয়ে কিচেনের ফ্লোর মুছে নিন। এতে মেঝে ঝকঝকে হয়ে উঠবে৷ কারন, তেল চিটচিটে টাইলস পরিষ্কারের জন্য বেকিং সোডা বেশ কার্যকরী।
পরিশেষে বলতে চাই, রান্নাঘর ছোট হোক বা বড়, ফ্রিজ, ওভেন, চুলা, গ্যাজেটস ইত্যাদি নিয়মিত ক্লিন করা এবং যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে পারলে রান্নাঘর পরিষ্কার করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া রান্নার তৈজসপত্র, টুকিটাকি জিনিসগুলো কাবার্ডের ভেতরে রেখে দিলেও পরিষ্কার থাকে৷ সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো প্রতিদিন রান্নার পরপরই রান্নাঘর ক্লিন করে ফেলা। এতে কিচেন ক্লিন থাকে এবং পরিশ্রমও কম হয়।
ছবি- সাটারস্টক