হেলদি লাইফস্টাইল ও সেলফ কেয়ার নিয়ে এখন কম-বেশি সবাই বেশ কনসার্নড। আচ্ছা, এই সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য কী, বলুন তো? আমার কাছে মনে হয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা, নিজেকে বেটার ফিল করানো ও নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোই এর মূল লক্ষ্য। নিজেকে ভালো রাখাই সবচেয়ে বেশি জরুরি, কারণ আপনি নিজে ভালো থাকলে আশেপাশের সবাইকেই ভালো রাখতে পারবেন। ফিজিক্যাল হেলথের সাথে সাথে মেন্টাল হেলথ এর দিকেও সমানভাবে নজর দেওয়া উচিত। অথচ মানসিক সুস্থতার বিষয়টি আমরা অনেকেই এড়িয়ে চলি! মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে কী কী করা যায় অর্থাৎ কীভাবে ভালো থাকা যায়, আজকের আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।
মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করবে যে ৬টি অভ্যাস
‘Unrealistic Beauty Standards’ ফলো না করা
সোশ্যাল মিডিয়াতে বলিউড-হলিউডের সেলিব্রেটি ও মডেলদের ফ্ললেস স্কিন দেখে অনেকেই ধরে নেয় যে এটিই স্বাভাবিক। আর এই প্রশ্নটাই মনে ঘুরপাক খায়, ‘ওদের স্কিন এত স্মুথ, বাটারি; কিন্তু আমার স্কিনে ওপেন পোরস, একনে, স্পট কেন?’ মিলিয়ে দেখুন তো এমন চিন্তা আপনার মনেও কখনো এসেছে কিনা! এগুলো মেকআপ, ক্যামেরা, লাইটিং আর এডিটিং এর কারসাজি। বাস্তবে সবারই কম বেশি স্কিন কনসার্ন থাকে। এই কনসার্নগুলোই আমাদের মানসিক সুস্থতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একনে, ডার্ক সার্কেল, স্পট, বয়সের ছাপ- এগুলোকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করুন। নিজেকে পারফেক্ট দেখানোর জন্য আমরা বডিকে স্ট্রেস না দেই, আনরিয়েলিস্টিক বিউটির পেছনে না ছুটি। বরং হেলদি লাইফস্টাইল আর প্রোপার সেলফ কেয়ারের দিকেই আমরা ফোকাস করি। এতেই আল্টিমেন্ট বেনিফিট পাওয়া যাবে।
স্ট্রেস থেকে দূরে থাকা
স্ট্রেস, টেনশন এগুলো হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কিন্তু অনেক বড় গুণ। প্রথমে জানতে হবে স্ট্রেসের সোর্স আসলে কী আর এটি আমার জীবনে কতটুকু গুরুত্ব বহন করে। ছোটখাটো বিষয়ে স্ট্রেস নিয়ে আমরা নিজের অজান্তেই কিন্তু অনেক সময় নিজের মেন্টাল হেলথ এর ক্ষতি করে ফেলি। এই চিন্তাগুলো দূর করে নিজের প্রোডাকটিভিটি বাড়ানোর দিকে ফোকাস দিতে হবে। স্ট্রেস ফিল হলে বাইরে কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন, এমন কারো সাথে বিষয়টি শেয়ার করুন যে আপনাকে পজেটিভলি মোটিভেট করতে পারবে। স্ট্রেস কমাতে ব্রিথিং এক্সারসাইজ, মেডিটেশন বেশ হেল্পফুল।
পজেটিভ থিংকিং এ ফোকাস করা
ভালো ও খারাপ- দু’টো জিনিসই আমাদের লাইফে ঘটে থাকে। কোনো খারাপ মুহূর্ত অথবা নেগেটিভ ফিডব্যাক যেন আপনাকে দমিয়ে না দিতে পারে। মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। খারাপের পর ভালো আসবেই- এই মনোভাব আপনাকে আরও উদ্যমী করে তুলবে। তাই পজেটিভ থিংকিং প্র্যাকটিস করুন। এতে দেখবেন আপনি নিজেও ভালো থাকবেন, মোটিভেটেড ফিল করবেন এবং অন্যের প্রতি সহমর্মিতাও আসবে।
প্রতিনিয়ত মন ভালো রাখার রিহার্সেল করা
এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে জীবনে প্রতিকূলতা আসবে। নিজের আদর্শ ও লক্ষ্য ঠিক রেখে যেকোনো পরিস্থিতি সামলে ওঠা শিখে নিতে হবে। হাসিখুশি থাকা, মন ভালো রাখা- এগুলো অনেকটা রিহার্সেল এর মতো। এই প্র্যাকটিসটা আমাদের গড়ে তোলা উচিত। ইমোশন যেন আপনাকে কন্ট্রোল না করতে পারে, আপনাকেই ইমোশন কন্ট্রোল করতে হবে।
স্টাডি করা ও ব্রেইনকে প্রস্তুত করা
আমরা অনেকেই জানি না বা বুঝতে পারি না যে, বাচ্চা হওয়ার অনেক মায়েরা পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে যায়। যদি আপনি জেনে থাকেন যে এই বিষয়টি হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশনের কারণে সব মায়েদেরই কম বেশি হয়, তাহলে আপনি যখন এই ফেইজ পার করবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিকে মেনে নিবেন। সেজন্য নিজের সমস্যা সম্পর্কে স্টাডি করে খুঁটিনাটি জানতে হবে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যেই সিচুয়েশনে মনে হয় ‘আমি তো একাই ভুগছি!’ আসলে তা না! আপনি যত বেশি জানবেন, ব্রেইনকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে পারবেন। তখন অনেক জটিল পরিস্থিতিও সহজে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হবে এবং মানসিক সুস্থতা বজায় থাকবে।
নিজেকে কোয়ালিটি টাইম দেওয়া
মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে ‘মি টাইম’ এর কোনো বিকল্প নেই। সেলফ প্যাম্পার করলে মনটা খুশি খুশি লাগে, খেয়াল করেছেন কখনো? আসলে, সেলফ কেয়ার নিজেকে ভালোবাসারই একটি অংশ। ব্যস্ত জীবনযাত্রা থেকে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। আপনার শখের কাজ করুন এই সময়। ক্র্যাফটিং করতে পারেন, গার্ডেনিং করতে পারেন, কিছুটা সময় খোলা বাতাসে এক কাপ গরম চা নিয়ে বসতে পারেন, পার্কে হাঁটতে যেতে পারে, মুভি দেখতে পারেন, মানে যে কাজ আপনাকে আনন্দ দেয়, সেটিই করুন।
শেষে এই কথাটাই বলতে চাই, মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে জীবনকে সহজভাবে ভাবুন। মন খুলে হাসুন এবং নিজেকে ভালোবাসুন, অন্যকেও ভালো রাখুন।
ছবিঃ সাটারস্টক