এক্সারসাইজ শুরু করা নিয়ে অলসতা, এটি কিন্তু খুবই কমন! আমরা অনেকেই এক্সারসাইজ করতে চাই, কিন্তু অলসতা আমাদের আটকে রাখে। একদিকে আমরা জানি, শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম কতটা জরুরি, অন্যদিকে সেই ব্যায়াম শুরু করার কথা মনে হলেও গড়িমসি করতে থাকি। এর ফলে আমরা অনেক সময় এই ভালো অভ্যাসটি গড়তে পারি না। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন, এ বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা পেলে হয়তো পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
শুরুর শুরুটা কীভাবে?
অলসতা কাটিয়ে এক্সারসাইজ শুরু করতে হলে প্রথমে একটি সহজ পরিকল্পনা তৈরি করুন। দিনে ২০-৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। নিজের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করুন, যেমন সকালে বা সন্ধ্যায়। বন্ধুদের সাথে একসাথে ব্যায়াম করলে উদ্দীপনা বাড়ে। এক্সারসাইজের সময় মিউজিক শুনুন বা পছন্দের ভিডিও দেখুন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের ধরন পরিবর্তন করুন, যেমন যোগ বা জগিং। বিষয়টাকে ইন্টারেস্টিং করে তুলতে পারলেই দেখবেন অলসতা কেটে যাবে! লক্ষ্য স্থির করুন এবং প্রতিদিন কিছুটা অগ্রগতি করুন। মনে রাখুন, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এক্সারসাইজ করতেই হবে। নিয়মিত চর্চা করলে অলসতা কাটিয়ে উঠবেন সহজেই।
বিগেইনার ফ্রেন্ডলি এক্সারসাইজ
নতুনদের জন্য এক্সারসাইজের শুরুটা খুবই সহজ হওয়া উচিত। যদি আপনি আগে কখনো ব্যায়াম না করেন, তাহলে আপনার জন্য হাঁটা বা হালকা দৌড়ানো সবচেয়ে ভালো বিকল্প। দিনে ২০-৩০ মিনিট হাঁটা শুরু করুন। শরীরকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে আপনি যোগব্যায়াম, পুশ-আপ বা স্কোয়াট করার মতো সহজ ব্যায়াম যোগ করতে পারেন। এইভাবে শুরু করলে এক্সারসাইজ আপনার জন্য ক্লান্তিকর না হয়ে বরং আনন্দময় হয়ে উঠবে।
স্টুডেন্ট লাইফে এক্সারসাইজ
ছাত্রদের ক্ষেত্রে, পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সারসাইজ করার সময় খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে সকালে বা সন্ধ্যায় মাত্র ৩০ মিনিট বের করে হাঁটা, জগিং বা যোগব্যায়াম করা সম্ভব। স্কুল বা কলেজের ব্যস্ত সময়সূচির মাঝে কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজও করতে পারেন। স্কুলের স্পোর্টস অ্যাকটিভিটিতে অংশ নিন সব সময়। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্য ভালো থাকলে পড়াশোনায়ও মনোযোগ বেড়ে যায়।
চাকরিজীবীদের জন্য এক্সারসাইজ
চাকরিজীবীদের জন্য এক্সারসাইজ করা আরও কঠিন মনে হয়। কাজের চাপে সময় বের করা সহজ নয়, কিন্তু এটি অসম্ভবও নয়। আপনি অফিসে বসে কাজ করার সময় প্রতি ঘণ্টায় চার/পাঁচ মিনিট হাঁটুন। একটানা বসে না থেকে একটু উঠে দাঁড়ান। অফিসে সিঁড়ি ব্যবহার করা বা লাঞ্চের সময় হাঁটা একটি সহজ উপায় হতে পারে। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথেও কলিগদের সাথে হাঁটা যায়। যদি ব্যায়ামে নিয়মিত হতে চান তাহলে কাজের পর জিমে যাওয়ার বা সন্ধ্যায় হাঁটার জন্য কিছু সময় নির্ধারণ করুন। কর্মজীবীদের ক্ষেত্রে ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
ব্যায়ামের শারীরিক গুরুত্ব
এক্সারসাইজ শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ঝুঁকি কমে। এটি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক্সারসাইজ পেশী ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
মানসিক গুরুত্ব
ব্যায়াম কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক কার্যকলাপের সময় মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মন ভালো রাখে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে এবং ঘুম ভালো হয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার আরেকটি পজেটিভ সাইড হচ্ছে, এটি আমাদের কর্মউদ্দীপনা বাড়ায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আল্টিমেটলি, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই, মন ভালো রাখতে এক্সারসাইজ একটি কার্যকরী মাধ্যম।
বয়স অনুযায়ী এক্সারসাইজ
বয়স অনুযায়ী এক্সারসাইজের ধরন পরিবর্তিত হয়। ছোটদের জন্য নিয়মিত খেলাধুলা, দৌড়ঝাপ বা শারীরিক কার্যকলাপ প্রয়োজন, যাতে তারা সুস্থ থাকে। ইয়াং জেনারেশনের জন্য জিম, সুইমিং বা রেসিং ভালো। বয়স্কদের জন্য হালকা হাঁটা, ইয়োগা ও স্ট্রেচিং উপকারী। বয়স অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে একজন ফিটনেস ইন্সট্র্যাকটরের সাথে কথা বলে নিন।
সবশেষে বলবো, অলসতা কাটিয়ে উঠতে হলে প্রথমে উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে, এর গুরুত্ব বুঝতে হবে। ব্রেইন তখন সিগন্যাল দিবে যে এটি করা জরুরি! এক্সারসাইজ শুরু করার জন্য আজ থেকেই পদক্ষেপ নিন। আপনার শরীর, মন ও জীবনের মান উন্নত করার জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ। তাই আর দেরি না করে আজই শুরু করুন।
ছবি- সাটারস্টক