বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে অন্যতম হল ব্রোকলি, যা শুধু স্বাদে নয়, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতায়ও অসাধারণ। ব্রোকলি নানা ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। আমেরিকান ক্যান্সার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তালিকায় দশটি ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবারের মধ্যে অবস্থান করে নিয়েছে এই সবুজ রঙের ফুলকপি সদৃশ সবজিটি। ব্রোকলি খেলে যে ১০টি অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনি পাবেন, সেটাই আজ জানাবো।
ব্রোকলি খেলে যে উপকারগুলো পাবেন
১. পুষ্টির ভাণ্ডার
ব্রোকলি ভিটামিন এ, সি, কে, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ফাইবারসহ অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে, ত্বক ও চুল ভালো রাখে।
২. ক্যান্সার প্রতিরোধ
ব্রোকলিতে সালফোরাফেন নামক একটি যৌগ আছে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম। বিশেষ করে স্তন,কোলন ও ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে খুবই সহায়ক।
৩. হৃদযন্ত্র ভালো রাখা
ব্রোকলি খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ব্রোকলির ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। আর এতে থাকা ভিটামিন-কে রক্তনালীর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। এটি রক্তের জমাট বাঁধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্টের ব্লক হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৪. হজমে সহায়তা
ব্রোকলিতে থাকা ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি পেরিস্টালসিস (অন্ত্রের সঞ্চালন) বাড়ায়,যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা সালফোরাফেন পেটের ভেতর ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
৫. রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ
এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এর ফাইবার রক্তের গ্লুকোজ কে দ্রুত বাড়তে দেয় না। যে কারণে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
৬. অস্টিওপোরোসিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে আছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। আর ভিটামিন কে হাড়ের কাঠামো মজবুত রাখতে সহায়ক। তাই নিয়মিত ব্রোকলি খেলে এটি হাড় ক্ষয় রোধ করে এবং অস্টিওপোরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয়।
৭. ব্রোকলি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ
এই সবজিটি কম ক্যালোরি সম্পন্ন এবং উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ক্ষুধা কমায় এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন, তাদের ডায়েটে এটি থাকা চায়।
৮. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
ব্রোকলিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে ত্বকের সজীবতা বজায় রাখে। এটি ত্বকের টানটান ও মসৃণ ভাব বজায় রাখে। ব্রোকলি খেলে ফ্রি র্যাডিকেলসের কারণে সৃষ্ট ত্বকের ক্ষতি রোধ হয়, ফলে ত্বকের বয়সের ছাপ, বলিরেখা ও শুষ্কতা কমে আসে।
৯. চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা
ব্রোকলিতে থাকা লুটেইন ও জিয়াক্স্যান্থিন চোখের রেটিনাকে ক্ষতিকর আলোর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ও ক্যাটারাক্ট (ছানি) এর ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত ব্রোকলি খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং বয়সজনিত চোখের রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে।
১০. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ব্রোকলির অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ব্রোকলি শুধু একটি সুস্বাদু সবজি নয়, বরং এটি অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতার উৎস। শীতকালে এটি সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রতিদিন ব্রোকলি খেলে শরীর ও মন উভয়ের জন্যই উপকারী। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখতে এবং অনেক রোগের সম্ভাবনা কমাতে পুষ্টিবিদেরা তাই খাবারের তালিকায় ব্রোকলি রাখার পরামর্শ দেন।
ছবি- সাটারস্টক, health.com