বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠীর পোস্ট প্রেগনেন্সি ওয়েট লস জার্নি কেমন ছিল, এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ আছে, তাই না? আসলে মা হওয়া একজন নারীর জীবনে অপার সুখময় একটি অধ্যায়। আর মা হওয়ার এই সময়টায় একজন নারীকে অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রেগনেন্সির এই জার্নিতে স্বাভাবিকভাবেই মায়েদের ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু মা হওয়ার পর এই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আবার নিজের আগের রূপে ফিরে যাওয়াটা যেন একটা যুদ্ধের সমান। শিশুর জন্মের পর যেহেতু তাকে বুকের দুধ পান করাতে হয় তাই সন্তানের পুষ্টির কথা ভেবে ডায়েট কন্ট্রোল করা নিয়েও অনেকটা সন্দিহান হয়ে পড়তে হয় নতুন মা-কে।
প্রেগনেন্সির পর বাড়তি ওজন কমিয়ে আগের রূপে ফিরে যাওয়া এবং নিজের ফিটনেস ধরে রাখা সব নতুন মায়ের জন্যই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সেজন্য চাই দৃঢ় সংকল্প এবং সঠিক গাইডলাইন। বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং ফিটনেস আইকন শিল্পা শেঠী সেই যাত্রায় এক অনন্য উদাহরণ। প্রথম সন্তান জন্মের পর প্রায় ৩২ কেজি ওজন বেড়ে যায় শিল্পার। কিন্তু সঠিক ডায়েট এবং লাইফস্টাইল মেইনটেইন করে মাত্র ৩ মাসে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন এই বলিউড ডিভা। কী ছিল তাঁর ডায়েট চার্টের স্পেশালিটি?
আজকের লেখায় আমরা শিল্পার সেই ডায়েটের প্রতিটি ধাপ তুলে ধরবো যা তাঁকে শুধু ফিটই রাখেনি, বরং তিনি হয়ে উঠেছেন অনেক নতুন মায়েদের রোল মডেল।
শিল্পা শেঠীর পোস্ট প্রেগনেন্সি ডায়েট
১) না খেয়ে থাকা নয়ঃ
শিল্পা তাঁর পুরো ফিটনেস জার্নিতে কখনই না খেয়ে থেকে ওজন কমানোর চেষ্টা করেননি। তিনি তাঁর ডায়েটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার ওপর। সারাদিনে যখনই খাবার খেয়েছেন, সেটি যেন ঘরে তৈরি সাধারণ ভারতীয় খাবার হয় সেদিকে তিনি সবচেয়ে বেশি খেয়াল রেখেছেন। পাশাপাশি চেষ্টা করেছেন খাবার যেন হয় প্রোটিন রিচ এবং লো-কার্ব।
২) অ্যালোভেরা জুস ও গরম পানি পানঃ
প্রতিদিন সকালে শিল্পা শেঠী ১৫ মিলি অ্যালোভেরা জুস পান করতেন। সাথে ১০টি তুলসি পাতা, গুড় ও আদা। পরিমিত পরিমাণে অ্যালোভেরা জুস পান করলে স্কিন হেলদি থাকে, সেই সাথে এটি ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে। এই জুসের পর শিল্পা শেঠী পান করে থাকেন ২ গ্লাস কুসুম গরম পানি। সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি পান করলে তা বডির ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে, হজমের উপকার হয় এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়।
৩) ব্রেকফাস্টে প্রোটিন ও ফাইবারঃ
শিল্পা শেঠীর পোস্ট প্রেগনেন্সি ডায়েটে সকালের নাস্তা ছিলো বৈচিত্র্যময় এবং সবসময় হাই ফাইবার যুক্ত। কখনো তিনি খান রোলড ওটসের সাথে বিভিন্ন রকম বাদাম ও ফলের মিশ্রণ, সাথে থাকে লো ফ্যাট মিল্ক। কখনো নেন দুটো ডিমের সাথে হোল হুইট টোস্ট। সাথে প্রতিদিন খেয়ে থাকেন ভেজানো কাঠবাদাম। এধরনের হাই ফাইবার এবং প্রোটিনযুক্ত ব্রেকফাস্ট দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে সাথে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এই ব্রেকফাস্টের পর শিল্পা কিন্তু এক কাপ দুধ চাও খেতেন, তবে অবশ্যই চিনি ছাড়া। চিনির বদলে শিল্পার চায়ে থাকতো গুড়।
৪) মিড-মর্নিং মিলঃ
সকালের নাস্তার পর বেলা ১১টার দিকে শিল্পা শেঠী বিভিন্ন রকম ফলের একটি ফ্রুট সালাদ খেতেন। এতে থাকতো পেঁপে, স্ট্রবেরি, আপেল, কমলা ইত্যাদি। এর সাথে থাকে টক দইয়ের একটি স্মুদি। এ ধরনের খাবার স্ন্যাক্স হিসেবে রাখলে দিনের মাঝামাঝি সময়ের ক্ষুধা যেমন মিটে যায়, অপরদিকে লো ক্যালোরি হওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই সাথে টক দইয়ের স্মুদি শরীরকে ইনস্ট্যান্ট এনার্জিও দেয়।
৫) লাঞ্চঃ
ওজন কমানোর কথা মাথায় এলেই আমরা সবার আগে ভাত বাদ দিতে চাই, তাই না? অবাক ব্যাপার হলো শিল্পা শেঠী বেশিরভাগ সময় লাঞ্চ করতেন একবাটি লাল চালের ভাত, তাতে এক চামচ ঘি, সবজি আর মুরগির মাংস দিয়ে। কখনো কখনো মুরগির বদলে থাকতো গ্রিলড ফিশ। মাঝে মধ্যে ভাতের পরিবর্ত খেতেন রান্না করা বিনস , একটি গাজর আর সল্টেড ছাছ ( টক দৈ দিয়ে তৈরি একধরনের ড্রিংক)। নিজের সুইট ক্রেভিং মেটাতে শিল্পা কখনো কখনো খেতেন অনেক কিশমিশ আর খেজুর দিয়ে তৈরি লাউয়ের হালুয়া বা এক টুকরো গুড়ের পিনাটবার। দেখাই যাচ্ছে শিল্পার লাঞ্চ একটি সম্পূর্ণ ব্যালান্সড ডায়েট। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেলস এর একটি সুন্দর কম্বিনেশন মেইন্টেন করেই খাবার খেয়েছেন তিনি।
৬) বিকেলের স্ন্যাকসঃ
বিকেলের স্ন্যাক্সে শিল্পা কিন্তু মোটেই ভারি কিছু বা তেলে ভাজা মশলাদার কোনও খাবার খেতেন না। এ সময় তিনি খেতেন ৮-১০ টা ড্রাই রোস্টেড মাখানা বা ৫টি আখরোট বাদাম আর কিশমিশ। মাখানাতে থাকে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এটি হার্ট ও হাড়ের জন্যেও ভালো। আর আখরোট মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। স্বাদ বদলাতে কখনো কখনো শিল্পা ক্র্যাকার্স খেতেন, সাথে খেতেন প্রোটিন রিচ কোনও dip যেমন অ্যাভোকাডো বা লো ফ্যাট হুমাস (চানার ডালের পেস্ট, লেবুর রস, তাহিনি, জিরা ও সামান্য অলিভ অয়েল সহযোগে তৈরি একটি dip)। মাঝে মধ্যে শুধু দুটো ডিমও থাকতো শিল্পার ইভিনিং স্ন্যাকসে।
৭) ডিনারঃ
ইভিনিং স্ন্যাকস নেওয়ার ৪ঘণ্টা পরই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শিল্পা তাঁর রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। এ সময় ভেজিটেবল স্যুপ বা চিকেন স্যুপ তার অবশ্যই চাই। সাথে থাকতো আপেল, স্প্রাউটস, বিটরুট, টমেটোর একটি ফ্রুট সালাদ। এখানেই কিন্তু শিল্পার সারাদিনের ডায়েট শেষ হয়ে যেতো না। এর কিছুক্ষন পর তিনি আরও খেতেন মুগ ডালের ছিলা ( এক ধরনের প্যানকেক) সাথে পনির। তারপর খেতেন গ্রিলড বা স্টিয়ার ফ্রাইড চিকেন এবং সবজি, বা মুরগির বদলে স্টিমড ফিশের সাথে বিনস বা ব্রোকলি ও মাশরুম আর একটি গাজর। অর্থাৎ রাতের খাবারেও বেশ ভালো পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেছেন শিল্পা শেঠী। আর তেলের ব্যবহার রাখতেন একদম অল্প। একঘেয়েমি দূর করতে প্রতিদিন একই খাবার না খেয়ে ক্যালোরি মেইনটেইন করে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।
শিল্পা শেঠীর পোস্ট প্রেগনেন্সি ওয়েট লস ডায়েট কিন্তু ছিল বেশ বৈচিত্র্যময় এবং পুষ্টিতে ভরপুর। কখনোই কোনও বেলার খাবার স্কিপ করতেন না তিনি। এতো খাবার খেয়েও শিল্পা কিন্তু বেশ দ্রুত তাঁর ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন, কারণ তিনি ক্যালোরি মেইনটেইন করে খাবার খেয়েছেন আর সাথে নিয়মিত এক্সারসাইজ তো ছিলই।
ওজন কমাতে গিয়ে পুষ্টির ঘাটতি কিন্তু একদমই হতে দেওয়া যাবে না। আপনার প্রেগনেন্সি পরবর্তী ওয়েট লস ডায়েটে চিনি ও চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন, তেলে ভাজা হাই ক্যালোরি খাবার সরিয়ে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন। তাহলে সহজেই ফিরে পাবেন আপনার আগের ফিটনেস। মনে রাখবেন, একেকজনের ওজন কমতে একেকরকম সময় লাগতে পারে। খুব দ্রুত ওজন কমাতে গেলে কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই আস্তে আস্তে সময় নিয়ে ওয়েট লস জার্নি মেইনটেইন করতে হবে। তাহলেই ফিরে পাবেন আপনার আগের ফিগার আর স্ট্যামিনা দুটোই।
লেখা- জান্নাতুল কাওসার
সোর্স- টাইমস অফ ইন্ডিয়া
ছবি- hdwallpapers.in, health.com, youtube.com