ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ জ্বরে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি খাবারের রুচি একদম কমে যায়। তাই জ্বরের তীব্রতা কমানোর পাশাপাশি রোগীর দেহের সঠিক পুষ্টি চাহিদা বজায় রাখার জন্য এ সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় রোগীর খাবার এমন হওয়া উচিত যা পুষ্টিকর, দ্রুত হজম হয় এবং সেই সাথে খেতেও ভালো লাগে। চলুন তাহলে জেনে নিই, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর খাবার কেমন হওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্যতালিকা
প্রথমত ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে দেহকে কীভাবে হাইড্রেটেড রাখা যায়। সারাদিনে কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। জ্বর হলে অনেক সময় পানি পান করতে অনীহা দেখা যায়, তাই পানির চাহিদা পূরণ করতে পানির পাশাপাশি তাজা ফলের রস, ডাবের পানি পান করতে হবে।
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল
ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সাথে দ্রুত আরোগ্য লাভেও সহায়তা করে। মাল্টা, কমলা, লেবু, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, পেঁপে, পাকা বেল, নাশপাতি, আনারস, ডালিম সহ পানি জাতীয় ফল ও ফলের রস খাওয়া এ সময় অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে ডাবের পানি বা লেবুর শরবত দেওয়া যেতে পারে। এগুলো শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে।
তরল জাতীয় খাবারের প্রয়োজনীয়তা
ডেঙ্গু জ্বরের সময় রোগীকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে তরল জাতীয় খাবার। তরল খাবার হজমে সহজ এবং এগুলো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতেও সহায়তা করে। তরল খাবার হিসেবে যে খাবারগুলো দেওয়া যেতে পারে সেগুলো হলো মিক্সড ভেজিটেবল স্যুপ, টমেটো স্যুপ, চিকেন বা কর্ণ স্যুপ দেওয়া যেতে পারে। এতে পানির চাহিদা পূরণ হবে, পাশাপাশি প্রোটিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ হবে।
সহজপাচ্য খাবার
তরল খাবারের পাশাপাশি অর্ধতরল খাবার যেমন- নরম সেদ্ধ করা খাবার, জাউ ভাত, ভাতের মাড়, চিড়া ভেজানো পানি, সুজি, সাগু ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। এসব খাবার সহজপাচ্য এবং এ সময় দ্রুত শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
এই সময়ে কিছু খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। যেমনঃ ভাজা পোড়া, বাসি খাবার, বেশি মশলা যুক্ত খাবার, পনির, বাদাম, ঘি, তৈলাক্ত খাবার, গরু বা খাসির মাংস, মাংসের চর্বি ইত্যাদি। এগুলো খেতে মুখে অনেক সময় সুস্বাদু লাগলেও আসলে ডেঙ্গু রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব খাবার রোগীর হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং অসুস্থতা বৃদ্ধি করতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে। এ সময় খাবারে রুচি না থাকলেও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে আর ভালোভাবে বিশ্রাম নিতে হবে। যে কোনও ধরনের জটিলতা যেমনঃ জ্বর খুব বেশি বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত পেটে ব্যথা বা কোনও ধরনের রক্তপাত দেখা দিলে সাথে সাথে হাসপাতালে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, যেন সহজে এ জ্বরে আক্রান্ত না হয়। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখবেন, সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
লিখেছেন- সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি, পুষ্টিবিদ, সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল
ছবি- .healthifyme.com, india.com