জন্মের পরপরই নবজাতকের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। নবজাতকের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের ত্বক খুব সহজে চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় আমাদের অজ্ঞতার কারণেও এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অতি সহজেই এ জাতীয় জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই নবজাতকের চর্মরোগ হলে করণীয় কী।
নবজাতকের চর্মরোগ ও এর প্রতিকার
১. প্রিকলি হিট বা ঘামাচি
দিনের তাপমাত্রা বেশি থাকা অবস্থাতেও আমাদের দেশে দাদী নানীরা নবজাতককে অনেক সময় চারদিক থেকে গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখেন। এর থেকে সাদা অথবা লাল রং বিশিষ্ট পানি আকারে ঘামাচির দানা দেখা দেয়। এ জাতীয় ঘামাচি চেনার উপায় হচ্ছে, ঘামাচি কখনো লোমের গোড়াতে হয় না। ঘামাচিকে যদিও মনে হতে পারে সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এ থেকে অনেক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—এ থেকে শরীরে অনেক ফোঁড়ার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সাড়ানো একটু কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আবহাওয়া যদি গরম থাকে, তবে জন্মের পর শিশুকে একটু খোলামেলা রাখা উচিত। ঘরের জানালা খোলা থাকা উচিত। ঘামাচিতে যেকোনো ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার উপকারে আসে।
২. এরিথেমা টক্সিকাম নিউন্যাটোরিয়াম বা মাসিপিসি
গ্রামের মা-চাচিরা এ জাতীয় চর্মরোগকে মাসিপিসি বলে থাকেন এবং এটি নবজাতকদের হয়েই থাকে বলে তাদের ধারণা। সত্যিই এটি খুব সাধারণ ব্যাপার। জন্মের তিন থেকে চার দিনের দিন শিশুর শরীরে লাল লাল র্যাশ দেখা দেয়। এর সঙ্গে জ্বর বা অসুস্থতার অন্য কোনো উপসর্গ থাকে না। ১০ দিনের দিন কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়।
৩. ডায়াপার র্যাশ বা ন্যাপকিন র্যাশ
ডায়াপার বা ন্যাপি পরানোর কারণে নবজাতকের ত্বকে লাল লাল ভাব নিয়ে অ্যালার্জির মতো র্যাশ দেখা দিতে পারে। এ জাতীয় র্যাশ শরীরের যে সব স্থান কাপড়ের সংস্পর্শে আসে, সেই জায়গায় হয়ে থাকে। অর্থাৎ উরুতে হবে, তবে উরুর ভাঁজ বা কুঁচকির ভাঁজে হবে না। এমন অবস্থায় কাপড় সাময়িকভাবে বর্জন করা উচিত। যেসব বাচ্চার ন্যাপি বা ডায়াপার সারা রাতে একবারও বদলানো হয় না, তাদেরই এ সমস্যাটি বেশি হয়। প্রস্রাবের ইউরিয়া থেকে অ্যামোনিয়া তৈরি করে ত্বকে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি সৃষ্টি হয়।
৪. ক্যানডিডিয়াসিস বা ফাঙ্গাস
নবজাতকের মুখের ভেতর, বিশেষ করে জিহ্বাতে দুধের সরের মতো আস্তরণ দেখা দেয়। যে সমস্ত জায়গা সব সময় ভিজা থাকে, যেমন কুঁচকি, পায়ুপথের আশপাশ, গলার ভাঁজ, সে সমস্ত জায়গাতেও ক্যানডিডা দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া লাল লাল ভাব হয়ে যায় এবং এর ওপর সাদা সাদা ছোপ দেখা দেয়, সাথে প্রচণ্ড চুলকায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আক্রান্ত স্থানকে অবশ্যই শুকনো রাখতে হবে।
৫. ক্যারাডাল ক্যাপ
কোনো কোনো নবজাতকের মাথায় চামড়া পুরু হয়ে জমতে দেখা যায়। এগুলো অনেকটা খুশকির মতো। সাধারণত হলুদ অথবা বাদামি রঙের হয়। কখনো কখনো বাজে গন্ধ হয় এবং তেলতেলে ভাব দেখা যায়। এটি ছয় মাস বয়সে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। সাময়িকভাবে পরিষ্কারের জন্য অলিভ অয়েল রাতে মেখে সকালে গোসল করাতে পারেন।
৬. স্ক্যাবিস বা পাঁচড়া চুলকানি
খোসপাঁচড়া ছোঁয়াচে রোগ। এটি নবজাতকের চর্মরোগ গুলোর মধ্যে তুলনামূলক জটিলতম। প্রতিটি আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে, কব্জিতে, হাত ও পায়ের তালুতে, বগলে, নাভি, যৌনাঙ্গে, গলা এমনকি সমস্ত শরীরে ছোট ছোট গোটা আকারে চুলকানি দেখা দেয়। তাই দ্রুত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে এর চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ, খোস পাঁচড়াগুলো পেকে যেতে পারে এবং এ থেকে কখনো কখনো কিডনি আক্রান্ত হতে পারে।
যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডা: এর পরামর্শ নিবেন।
লিখেছেন- ডা: তাজরিনা রহমান জেনি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
ছবি- সাটারস্টক