শীতকাল আমাদের অনেকের জন্য আনন্দের হলেও এ সময় আমাদের অনেকেরই গলা ব্যথা, কাশি ও ঠাণ্ডার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। শীতের সময় আবহাওয়ার পরিবর্তন আমাদের শরীরকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। আর তখনই দেখা দেয় গলা ব্যথার মত অস্বস্তিকর সমস্যা। তবে সাধারণত গলা ব্যথার উপশমে তেমন কোনও ওষুধের দরকার পড়ে না। ঘরোয়া চিকিৎসাতেই আরাম পাওয়া যায়। আজ আমরা জানবো গলা ব্যথার উপশমে কার্যকর এমন ৯টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
গলার ব্যথার লক্ষণ
গলার ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গলার ভেতরে জ্বালা করা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, ঢোক গিলতে এবং কথা বলতে কষ্ট হওয়া, গলার কাছে ফোলাভাব ইত্যাদি। অনেক সময় কাশি বা ঠাণ্ডার সঙ্গেও গলা ব্যথা থাকতে পারে।
গলা ব্যথার উপশমে ঘরোয়া উপায়
১. হলুদ দুধ
হলুদ দুধ বা গোল্ডেন মিল্ক গলা ব্যথার উপশমে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদে আছে কারকিউমিন যা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি ব্যথা কমাতে ও ঠাণ্ডা নিরাময়ে খুব কার্যকরী।
এক গ্লাস দুধ ফুটিয়ে তাতে আধা চামচ হলুদ মিশিয়ে নিন। তারপর এটি গরম গরম খেতে পারেন। এটি গলার ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
টিপ: ব্যথা মৃদু হলে দিনে একবার খাওয়া যাবে, আর ব্যথা হলে দিনে দুইবার খেতে পারেন।
২. আদা চা
আদা চা একটি সহজ উপায় যা গলার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আদা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এটি ঠাণ্ডা ও গলা ব্যথায় প্রশান্তি দেয় এবং দ্রুত নিরাময় পেতে সাহায্য করে।
প্রস্তুতি: চা তৈরির মতো সাধারণভাবে চা বানান, কিন্তু এতে আধা চা চামচ কুঁচি করা আদা যোগ করুন। গরম গরম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
টিপ: আরও ভাল ফলাফলের জন্য, আপনি এতে সামান্য গোল মরিচও যোগ করতে পারেন।
৩. তুলসি পাতার রস
তুলসি একটি ঔষধি গাছ যার পাতার রস ঠাণ্ডা, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় বেশ কার্যকর।
প্রস্তুতি: এক গ্লাস পানিতে তুলসি পাতা, আদা, গোলমরিচ ও লবণ দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর এটি ছেঁকে গরম গরম পান করুন।
৪. লেবু পানি
লেবু পানি গলার ব্যথা উপশমের জন্য একটি চমৎকার উপায়। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
প্রস্তুতি: এক চামচ লেবুর রস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
৫. পিপারমিন্ট পানি
পিপারমিন্ট সাধারণত খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে এটি গলার ব্যথা ও ঠাণ্ডা কমাতে সাহায্য করে।
প্রস্তুতি: এক কাপ পানিতে কিছু পিপারমিন্ট পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর গরম গরম পান করুন।
টিপ: স্বাদের জন্য আপনি চাইলে এতে লবণ বা চিনি যোগ করতে পারেন।
৬. মধু পানি
মধু গলার ব্যথা কমাতে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া মধুর আছে আরও অনেক ধরনের উপকারিতা। মধু পানি পান করলে দেখবেন সাথে সাথেই অনেকটা ভালো বোধ করছেন।
প্রস্তুতি: এক গ্লাস গরম পানিতে দুই চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
টিপ: ডায়াবেটিস রোগীরা মধু ব্যবহারের আগে ডাক্তারদের পরামর্শ নিন।
৭. অ্যাপল সিডার ভিনেগার দিয়ে গার্গল করা
অ্যাপল সিডার ভিনেগার গলার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সহায়ক। এর এসিডিক উপাদান গলার প্রদাহ কমায় এবং মিউকাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
প্রস্তুতি: এক গ্লাস গরম পানিতে দুই চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে গার্গল করুন।
টিপ: ব্যথা বেশি হলে গার্গল করা বার বার করুন।
৮. লবন পানি গার্গল
অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পরিবর্তে লবণ পানি দিয়েও গার্গল করতে পারেন। এটিও গলা ব্যথা কমানোর একটি দ্রুত ও কার্যকর উপায়। এটি প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
প্রস্তুতি: এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ লবন মিশিয়ে গার্গল করুন।
৯. গরম স্যুপ
শীতে গরম স্যুপের সাহায্যে গলা ব্যথা উপশম করা যেতে পারে। ঘরে বানানো শীতের সবজির স্যুপ হতে পারে সেরা উপাদান। গরম গরম স্যুপ খেলে গলায় আরাম বোধ হয় সেই সাথে দ্রুত সুস্থতা লাভ করা যায়।
প্রস্তুতি: আপনি যেকোনো স্যুপ খেতে পারেন, তবে খুব বেশি ঝাল বা লবণ যেন তাতে না থাকে। পালং শাকের স্যুপ, বাঁধাকপি স্যুপ এগুলো খুব ভালো।
গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনি ঘরোয়া চিকিৎসাগুলি সহজেই প্রয়োগ করতে পারেন। তবে যদি গলা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়ে যায়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ছবিঃ সাটারস্টক