কম্বিনেশন স্কিন অর্থাৎ মিশ্র ত্বকের পরিচর্যার বিষয়টি অনেকের কাছে বেশ একটু জটিলই মনে হয়। কারন এ ধরনের ত্বকের কিছু অংশ থাকে তৈলাক্ত তো কিছু অংশ হয় শুষ্ক বা স্বাভাবিক। তাই এ ধরনের ত্বকের পরিচর্যা তুলনামূলক বেশ ঝামেলার। অনেকেই বুঝতে পারেন না কম্বিনেশন স্কিনের যত্নে হাইড্রেশন প্রয়োজন কি না। হাইড্রেশন হলো মূলত ত্বকে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা ধরে রাখা। আর তাই এ ধরনের ত্বকের জন্য স্কিন কেয়ার রুটিনে অয়েল কন্ট্রোল করবে এমন উপাদানযুক্ত প্রোডাক্ট যেমন প্রয়োজন তেমনি দরকার হাইড্রেটিং প্রোডাক্ট।
কম্বিনেশন স্কিনের যত্নে হাইড্রেশনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি নেই তা জেনে নেওয়ার আগে প্রয়োজন আপনি কীভাবে বুঝবেন আপনার স্কিন কম্বিনেশন কি না।
যেভাবে বুঝবেন আপনার স্কিন কম্বিনেশনঃ
আমাদের মুখমন্ডলকে মূলত তিনটি জোনে ভাগ করা হয়, তা হলো “T” জোন ( কপাল ও নাকের অংশ) , “C” জোন (গালের অংশ) এবং “U” জোন ( চিবুকের অংশ)। যদি ত্বকের “T” জোন ও U” জোন তৈলাক্ত থাকে কিন্তু “C” জোন শুষ্ক হয় তাহলে আপনার স্কিন কম্বিনেশন টাইপ। ঘুম থেকে উঠে আয়নায় দেখে বা টিস্যুর মাধ্যমে পরীক্ষা করে যদি কপাল, নাক ও চিবুক তেলতেলে মনে হয় এবং গাল শুষ্ক মনে হয় তবে বুঝে নিতে হবে স্কিন কম্বিনেশন টাইপ।
যেহেতু কম্বিনেশন স্কিনে তেলতেলে অংশের পরিমাণই বেশি থাকে তাই অনেকেরই একটি ভুল ধারণা থাকে যে এ ধরনের স্কিনে হাইড্রেশনের প্রয়োজন নেই। অথচ স্কিনে তেল উৎপাদন হয় বলেই যে স্কিনে হাইড্রেশন ও ময়েশ্চারাইজেশনের প্রয়োজন নেই তা কিন্তু নয়। স্কিনে উৎপাদিত অতিরিক্ত তেল কখনোই স্কিন কে হাইড্রেশন দেয় না। যার ফলে স্কিন বাহির থেকে তেলতেলে দেখা গেলেও মূলত হাইড্রেটিং ও ময়েশ্চারাইজিং উপাদানের অভাবে স্কিন সেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। স্কিনে পানি ধরে রাখার পরিমান কমে যায়, স্কিন আর্দ্রতা হারায়, যার ফলে স্কিন ও ত্বকের শুষ্ক অংশ গুলো আরো বেশি করে শুষ্ক হতে থাকে। স্কিন ধীরে ধীরে তার উজ্জ্বলতা হারায় এবং স্কিনে এজিং দ্রুত চলে আসে। তাই কম্বিনেশন স্কিনের জন্যও হাইড্রেশন প্রয়োজন।
কীভাবে কম্বিনেশন স্কিনের সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখা যায়?
১. কম্বিনেশন স্কিন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার বাছাই:
অনেকেই স্কিন কেয়ার রুটিনে কম্বিনেশন স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার রাখতে চান না। কিন্তু এটা করা যাবেনা, ময়েশ্চারাইজার খুবই বেসিক একটি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। ময়েশ্চারাইজার স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখে, স্কিন কে রিজ্যুভিনেট ও রিপেয়ার করে। তাই এটি কখনোই স্কিপ করা যাবেনা।
২. হাইড্রেটিং প্রোডাক্ট স্কিন কেয়ারে যুক্ত করা:
যেহেতু কম্বিনেশন স্কিনের জন্য হাইড্রেশনের প্রয়োজন বেশি তাই হাইড্রেটিং প্রোডাক্ট স্কিন কেয়ারে যুক্ত করা উচিত। যেমন, হায়াল্যুরোনিক এসিড যুক্ত সিরাম বা টোনার অথবা যেকোনো হাইড্রেটিং সিরাম, টোনার, শীট মাস্ক এগুলো স্কিন কেয়ারে যুক্ত করলে স্কিন প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন পাবে।
৩. অতিরিক্ত ক্লেনজার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা:
কম্বিনেশন স্কিনের তৈলাক্ত অংশের তেলতেলে ভাব কমাতে অনেকেই স্কিন বারবার ক্লেনজার দিয়ে ক্লিন করে থাকে, যেটা মোটেই উচিত নয়। অনেকের ধারণা থাকে যে যতো বেশি ক্লেনজার দিয়ে স্কিন ক্লিন করা হবে ততোই তৈলাক্ত অংশের তেলতেলে ভাব কম হবে। কিন্তু বাস্তবে এতে করে স্কিনের তেল উৎপাদনের হার আরও বেড়ে যায়, অপরদিকে স্কিন ডিহাইড্রেটেডও হয়ে পড়ে। এছাড়াও শুষ্ক অংশ মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দিন রাত মিলিয়ে দুইবারের বেশি ক্লেনজার দিয়ে স্কিন ক্লিন করা উচিত নয়। স্কিন কেয়ারে কম্বিনেশন ত্বকের জন্য মানানসই প্রোডাক্ট যুক্ত করতে হবে, পাশাপাশি তৈলাক্ত ভাব কমায় এমন প্রোডাক্টও রাখতে হবে। এর ফলেই ত্বকে তেল উৎপাদন কমে আসবে।
৪. পরিমাণ মতো পানি পান:
বিশেষ করে শীতের সময় পানি পানের পরিমাণ অনেকেরই কমে যায়। শীতের সময় এমনিতেই স্কিন থেকে খুব দ্রুত আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। আর পানি আমাদের স্কিনের আর্দ্রতা ধরে রাখে। কিন্তু পানি পানের পরিমাণ কম হলে স্কিন আরো বেশি শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ । তাই এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এর ফলে স্কিন হাইড্রেটেড থাকবে, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে স্কিন ও ঠোঁট ফাটার পরিমানও অনেক কমে যায় । আর স্কিন শুষ্কতার হাত থেকেও রক্ষা পায়।
৫. ফাইবার যুক্ত খাদ্য গ্রহণ:
হাই ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন শাক সবজি, ফলমূল প্রতিদিন পরিমাণ মতো খেতে হবে। ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন শরীর সুস্থ রাখে তেমনি স্কিন রাখে সুন্দর ও হাইড্রেটেড। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যে কারণে কম্বিনেশন স্কিনের তৈলাক্ত অংশের তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত হয় সাথে শুষ্ক অংশের সঠিক আর্দ্রতা বজায় থাকে।
৬.পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও তরল খাদ্য গ্রহণ করাঃ
স্কিন কে হাইড্রেট রাখতে বা ত্বকে পানি ধরে রাখতে ডাবের পানি, ফলের রস, তরল খাদ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও হায়াল্যুরোনিক এসিড, মধু, এলোভেরা, গ্লিসারিন ইত্যাদি উপাদান যুক্ত প্রোডাক্ট স্কিন কেয়ারে যুক্ত করলে তা খুব সহজেই স্কিন কে হাইড্রেট রাখবে।
ড্রাই স্কিন হোক অথবা কম্বিনেশন, সব ধরনের স্কিনের যত্নেই হাইড্রেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। হাইড্রেশন স্কিন কে রাখে নমনীয়, সুস্থ ও কোমল। তাই স্কিন যেমনই হোক না কেন, হাইড্রেশনের ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আজ এ পর্যন্তই, আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে।
ছবিঃ সাজগোজ