কোকো শ্যানেলের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, “ A girl should be two things- Classy and Fabulous”. কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা কয়জন এটার অর্থ বুঝি। একজন নারীকে সবার মাঝেও অনন্যা হয়ে উঠতে কী লাগে? দামি জামাকাপড়? ব্র্যান্ডের মেকাপ? বা ফর্সা রঙ? না, এসব কিছুই লাগেনা। আপনার ব্যবহার, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা এসব মিলিয়ে যখন নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন তখনই আপনি হয়ে উঠবেন সবার মাঝে আলাদা। কিন্তু সেটা কীভাবে? খুব সহজ, শুধু মাথায় রাখতে হবে কিছু বিষয়।
সুন্দর হতে হলে খুব ফর্সা গায়ের রঙ বা চেহারার গঠন যতটা ভূমিকা রাখে, তার চেয়ে বেশি জরুরি আপনি নিজেকে কতটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখছেন সেটা । এক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
পরিচ্ছন্নতাঃ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে সুন্দর থাকার প্রথম শর্ত। তেল চিটচিটে এলোমেলো চুল, মুখে দুর্গন্ধ, অপরিচ্ছন্ন রুক্ষ শুষ্ক হাত-পা হলে, আপনি দেখতে যতই সুন্দরী হন না কেন লোকজন আপনাকে classy বা fabulous কোনটাই বলবেনা। তাই এই বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসল করুন, হাত-পায়ে মইয়েশ্চারাইযার লাগাবেন এবং সেই সাথে হাত পায়ের নখের ব্যাপারেও লক্ষ রাখুন। খুব বড় নখ না রাখাই ভালো।
পোশাকঃ পোশাকের ব্যাপারে অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে। তার মানে এই নয় যে, আপনাকে খুব দামি পোশাক পরতে হবে বা প্রতিদিন নতুন নতুন পোশাক পরতে হবে। যাই পরবেন, সেটা যেন পরিস্কার এবং আয়রন করা হয়। এক্ষেত্রে কয়েকটি দিক অবশ্যই মনে রাখা উচিৎ সবার।
- নিজেকে হাল ফ্যাশনের দাস বানিয়ে ফেলবেন না। এমন অনেক কিছুই হাল ফ্যাশনে আছে যা সবাইকে মানায় না। নিজেকে মানায় এমন পোশাক পরুন। যেমন- লেগিন্স এখন খুব জনপ্রিয়। হালকা পাতলা মেয়েদের এটাতে ভালো লাগলেও, আপনি যদি ভারী স্বাস্থ্যের হয়ে থাকেন, তাহলে লেগিন্স বা খুব চাপা জিনস এড়িয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
- জায়গা বুঝে পোশাক পরুন। যেটা পরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবেন, সেটা পরে নিশ্চয়ই ক্লাসে যাবেন না আপনি। আর যাই পরবেন সেটা কমফোরটেবল হওয়া চাই। যে পোশাক ক্যারি করতে পারবেন না সেটা পরবেন না।
- খুব রিভিলিং বা প্রভোক্যাটিভ জামাকাপর পরার ব্যাপারে অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে। নাহলে মানুষের কাছে আপনার ভুল ইমেজ তৈরি হতে পারে।
কথা বলার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ রাখুন
- সুন্দর করে গুছিয়ে, আস্তে কিন্তু স্পষ্ট ভাবে কথা বলার অভ্যাস করুন। ডিপার্টমেনট বা অফিসের করিডোরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কথা বলবেন না। এমনকি ফ্যাশন হাউজ বা কোন দোকানে ঢুকলেও উচ্চস্বরে কথা বলবেন না।
- ভাষার ব্যবহারে যত্নশীল হতে হবে। কথায় কথায় গালি বা অশ্লীল শব্দের প্রয়োগ করা বন্ধ করুন। এমনকি বন্ধুদের আড্ডাতেও না। গালি দেয়া বা অশ্লীল কথা বলা কখনোই ভালো ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। সেটা বাইরেই হোক বা ঘরের ভেতরেই হোক। মনে রাখবেন, আপনার ভাষা আপনার মনের প্রতিনিধিত্ব করে।
- সারাক্ষন অন্যের সমালোচনা করবেন না বা অন্যের বিষয়ে মুখরোচক আলোচনা করবেন না। তার বদলে অন্যদের প্রশংসা করুন। আর খারাপ কিছু থাকলে সেটা বলা থেকে বিরত থাকুন।
- নিজেকে সবার মাঝে আলাদা করে তুলতে সুন্দর মার্জিত ভাষার কোন বিকল্প নেই। ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে, ভুল বাংলা উচ্চারনে কথা বলা কোন ভাবেই আপনাকে ক্লাসি বা ফ্যাবিউলাস করে তুলবে না।
- যা বলবেন, ভেবে বলবেন। কোন বিষয়ে না জেনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। কাউকে কথা দেবার আগে ভেবে কথা দিন, সেটা রাখতে পারবেন কিনা। কথা দিলে অবশ্যই সেটা রাখার চেষ্টা করুন। এতে আপনি সবার কাছে বিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
- মুখে খাবার নিয়ে কথা বলবেন না।
- অন্যের প্রশংসা করুন। দেখবেন সেটা নিজের দিকেও ফিরে আসবে।
- কথায় কথায় টাকা-পয়সার প্রসঙ্গ তুলবেন না। কোনটা কত টাকা দিয়ে কিনলেন এসব বলা মোটেই রুচিশীল কাজ নয়।
- অল্পে রেগে যাওয়ার অভ্যাস থাকলে আস্তে আস্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। কখনোই রাগের মাথায় অন্যের সাথে কথা বলতে যাবেন না।
সাজসজ্জাঃ সাজগোজ করতে আমরা সকলেই ভালবাসি। কিন্তু সেটার বেলায়ও মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সাজগোজের ক্ষেত্রে স্থান, কাল বিবেচনায় রাখুন। যেমন ঠোঁটে খুব কড়া রঙের লিপস্টিক দিয়ে আড্ডা দেয়া বা বেড়ানো গেলেও অফিস বা ক্লাসে সেটা মানায় না। মেকাপ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে সেটা শিখুন। কারণ মুখে খানিকটা মেকাপ ঘসে নেয়া কখনোই আপনাকে সুন্দর করে তুলবে না। পত্র পত্রিকা বা টিভিতে মডেল বা নায়িকা যেভাবে মেকাপ করেন, সেটা আপনাকেও মানাবে এমনটা কিন্তু নয়। মনে রাখবেন, বাস্তব আর রুপালি পর্দা আলাদা জিনিস।
এগুলো ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো মেনে চলা উচিৎ।
- বসার সময় সোজা হয়ে ঠিক কভাবে বসুন।
- হাঁটার সময় শব্দ করবেন না বা র্যাম্প মডেলদের মত হাঁটবেন না।
- ছোট কিংবা বড়, ধনী বা গরিব সবার সাথেই ভদ্র এবং মার্জিত আচরণ করুন।
- রাস্তা-ঘাটে, বা কারো সাথে কথা বলার সময় আঙ্গুল ফোটাবেন না, নাক খুটবেন না, বা মুখে হাত দেবেন না।
- সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নিজের মতামত বা ছবি প্রকাশের ব্যাপারে যত্নশীল হোন। দিনে ৪/৫ বার উদ্ভট ভঙ্গীতে সেলফি
তুলে আপলোড দিলে আপনার ফলোয়ার বাড়তে পারে, কিন্তু আপনার ইমেজ এর জন্য সেটা ভালো নয়।
- আড্ডা বা কথা বলার সময় মোবাইল নিয়ে অযথা ব্যস্ত থাকবেন না।
- কথা বলার সময় পজিটিভ কথা বলুন।
- সারাক্ষন নিজের কথা না বলে, অন্যের কথা শুনতেও মনোযোগী হোন।
- পড়াশোনা করুন, খবর দেখুন, পত্র পত্রিকা পড়ে নিজেকে আপডেটেড রাখুন। মনে রাখবেন, জ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নেই।
- অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করুন। নিজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন। আত্মউন্নয়নের চেষ্টা করুন।
সবশেষে, নিজেকে নিয়ে হতাশা বা হীনমন্যতায় ভুগবেন না। অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করবেন না। প্রতিটি মানুষই আলাদা। তাই চেষ্টা করুন নিজের একটা স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলতে। সুন্দর থাকুন, ভালো থাকুন।
ছবি: গ্যালারিহিপ.কম
লিখেছেন: মাহবুবা বীথি