রোদের প্রখরতা কমে গেছে। হিম ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। এসবই তো শীতের আগাম বার্তা। এখন থেকেই আপনার বাচ্চার প্রতি নজর আরেকটু সতর্ক করার সময়। শীতের শুরু থেকেই সন্তানের যত্নের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ঠাণ্ডা জ্বর, কাশি, সর্দি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভভ।
বাচ্চারা চঞ্চল আর অদম্য হবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের প্রতি সতর্কতা বাড়িয়ে দেয়ার মানে এই না যে তাদের খেলতে দিবেন না। অবশ্যই খেলবে তারা তবে ঠাণ্ডায় যাতে ক্ষতি না হয় নিজেরাই নিজেদের যত্ন নিতে পারে এমন কিছু টিপস তাদের মাথায় ধুকিয়ে দিন।এতে করে আপনার সন্তান যেমন আনন্দে শীত উপভোগ করবে তেমন আপনার দুশ্চিন্তাও কমে যাবে।
১. হাত ধোয়া
প্রথম টিপসটি খুব সাধারণ। বড়ছোট সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী। কেননা সাধারণ এই অভ্যাসটি করে নিতে পারলে অনেক রোগ থেকেই দূরে থাকা যায়। তাই আপনা সন্তানকে অন্তত পক্ষে ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ভালোভাবে রাব করে ধুতে বলুন। ৩০ সেকেন্ড সময় কাউন্ট করতে না পারলে সন্তানকে বলুন হাত ধোয়ার সময় দু’বার হ্যাপি বার্থ ডে সুর করে বলতে আর হাত ধুতে।
২. ভিটামিনযুক্ত খাবার
স্কুলের টিফিনে, ব্রেকফাস্টের সময়, দুপুরের খাবারে এমন কি বিকেলের নাস্তায় আপনার বাড়ন্ত সন্তানের খাবারের তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার আছে এবং তা সে খাচ্ছে কি না দেখুন। বাচ্চারা সাধারণত সবজি মাছ খেতে চায় না। মাদের কত না ঝক্কি পোহাতে হয়। এ ক্ষেত্রে আপনার সন্তারের পছন্দের কার্টুন, মুভি হিরো (স্পাইডারম্যান,ব্যাটম্যান) ক্যারেক্টারের কথা বলে। যেমন “স্পাইডারম্যানের এতো শক্তি বা হাত থেকে জাল বের হয় কি করে জান! ও সবজি মাচ খায়।” এভাবে যে কোন কিছুর সাথে রিলেট করে খাওয়াতে পারেন। আর এতেও যদি কাজ না করে তবে যখন ফ্লু বা ঠাণ্ডায় কষ্ট পাচ্ছে তখন হালকা করে মনে করিয়ে দেয়া তুমি যদি এই খাবারগুলো খেতে তাহলে খাবারের পুষ্টিগুন তোমার জার্মের সাথে যুদ্ধ করে জিতে যেত তুমি সুস্থ থাকতে। এভাবে বুঝিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বোঝানো উচিত। মা নিজে সব জানি এমন ভাব কিন্তু মটেই আনা যাবে না।
৩. শেয়ার না করা
শুনতে একটু খারাপ লাগছে। সন্তানকে প্রত্যেক বাবা-মাকেই এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত যেন সাবার সাথে খাবার থেকে সুখ-দুঃখ সবই যেন শেয়ার করতে শিখে। কিন্তু শীতের এই সময়টাতে শেয়ার না করাই ভালো। খাবার, হাঁচি দেয়ার পর তা না ধুয়ে হ্যান্ড শেক বা সেই হাত দিয়েই মুখে হাতানো, রুমাল একই পোশাক এসব শেয়ার করা থেকে আপনার সন্তানকে বিরত রাখুন। তবে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলুন।
৪. সিজনাল অসুখ-বিসুখ
শীতের শুরুতে ঠাণ্ডা জ্বর। শেষের দিকে বসন্ত(পক্স)এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া তো বড়দের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আপনার বাচ্চাটি যদি ছোট হয়ে থাকে তবে যে সময়ে ফ্লুর প্রকোপ বেড়ে যায় সে সময় নবজাতককে নিয়ে বাইরে না যাওয়াটাই ভালো। এক্ষেত্রে বাসায় আসা মেহমানদের কোলে বেবিকে দেয়ার আগে ভেবে চিনতে দিন। অবশ্য আজকাল আমরা সবাই বাচ্চাদের কোলে নেয়া এবং আদর করার সময় বেশ সচেতনভাবেই করেই থাকি। একই সাথে বাইরে থেকে এসে হাত না ধুয়ে বাচ্ছাকে ছোঁয়া ঠিক না এবং ঠোঁটে চুমু দেয়া থেকে শুরু করে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁচি দেওয়া যে ঠিক নয় তা সকলেই জানি।
কিন্তু যাদের সন্তানরা স্কুলে যান তারা কীভাবে এসব ফ্লু থেকে রক্ষা করবেন? ছোট বাচ্চাদের মতই এই সময়টাতে বাড়ন্ত ছেলেমেয়েকে বাইরে বেশি মানুষের মেলামেশা থেকে বিরত রাখুন। প্রয়োজনে মাস্ক পরিয়ে বাইরে বের করুন।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম
একটা সময় ছিল যখন রাত ১০ তা মানেই ঘুমতে যাওয়া আর সকাল ৬ টা মানেই ঘুম থেকে ওঠা। আজকাল বাচ্চাদের মধ্যেই যেন রাত জেগে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কেবল শীতের সময়েই নয় বাচ্চাদের সবসময়ই রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ার অভ্যাস করা উচিত। কেননা পর্যাপ্ত ঘুম দেহের ইমিউন সিস্টেমকে দৃঢ় করে এবং রোগ জীবাণু মোকাবিলা করে শরীরকে সুস্থ-সবল রাখে।
লিখেছেন – আসমা আখতার
ছবি – ফটোগ্রাফারস.ক্যানভেরা.কম