প্রতি শীতেই নতুন নতুন বডি লোশন, অয়েল আর বডি বাটার ট্রাই করার অভ্যাস হয়ে গেছে। আর এবারের শীতের শুরুতেই তাই কয়েকটি বডি কেয়ার প্রোডাক্ট টার্গেট করে রেখেছিলাম, যাতে সুযোগ পেলেই ট্রাই করে ফেলতে পারি। আর এই নমিনিদের মধ্যে বিশেষ একটিকে নিয়েই আজ এই রিভিউ।
প্রোডাক্টের নাম প্যারাসুট ডিপ নরিশ বডি লোশন। আর নারকেল তেলের জন্য বিখ্যাত এই ব্র্যান্ডের বডি কেয়ার রেঞ্জ থেকে এই প্রথম আমি কোন প্রোডাক্ট ট্রাই করলাম। আমার কেমন লাগলো এই সহজ লভ্য, সাশ্রয়ী প্রোডাক্টটি, তা জানার জন্য পড়তে থাকুন।
দামঃ
দামের দিক থেকে খুবি সাশ্রয়ী। ১০০ মিলি লোশনের দাম মাত্র ৮০ টাকা। আর এই প্রোডাক্টটি আপনি আপনার আশেপাশের যেকোনো কস্মেটিক শপে পেয়ে যাবেন।
কার জন্য?
এই পার্টিকুলার প্রোডাক্টটি ‘এক্সট্রা ড্রাই’ স্কিনের জন্য ফরমুলেটেড। সুতরাং যারা এই শুষ্ক আবহাওয়ায় নিজের আরও রুক্ষ ত্বক নিয়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এবং হাত পা ফেটে যাওয়া টাইপ সমস্যায় পড়ে পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্টস বাধ্য হয়ে ইউজ করছেন তাদের জন্য প্যারাসুটের ডিপ ময়েশ্চারাইজিং এই ফর্মুলাটি বেশ ভালো হবে।
উপাদানঃ
মেইন ইনগ্রিডিয়েন্টসগুলো উল্লেখ করে দিলাম-
Cocos Nucifera oil, Coconut Milk, Hydrogenated vegetable oil, Propyl paraben, fragrance, carbomer, titanium dioxide, phenoxyethanol, BHT, Disodium EDTA etc.
এই প্রোডাক্টের স্টার উপাদান হচ্ছে কোকোনাট অয়েল এবং কোকোনাট মিল্ক। আর ড্রাই স্কিনের যত্নে কোকোনাট মিল্কের ভূমিকা কে না জানে?
আমার অভিজ্ঞতাঃ
প্যারাসুটের অন্যান্য বডি লোশনের মত এই বোতলের শেপটিও hourglass , এবং আছে স্ট্যান্ডার্ড ফ্লিপ ক্যাপ। যে কারণে বোতলটি খুব ইজিলি শাওয়ারে থাকার সময় ধরে রাখা যায়। এবং পিছলে পড়ার ভয় থাকে না। এই প্রোডাক্ট ইউজ করতে গিয়ে প্রথমেই এই জিনিসটি আমার ভালো লেগেছে।
আর লোশনটার কন্সিসটেনসিও আমার ভালো লেগেছে। এটা অস্বচ্ছ সাদা রঙের এবং খুব সহজেই পরিমান মত বোতল থেকে নিয়ে নেয়া যায়। খুব বেশি লিকুইড না, যে অনেকখানি ঝপ করে পড়ে প্রোডাক্ট ওয়েস্ট হবে। শরীর একটু তাওয়াল দিয়ে চেপে মুছে নিয়ে সাথে সাথে লাগালে খুব তারাতারি স্কিনে বসে যায়। তেল বা পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্টের মত স্কিনের উপরে চটচটে হয়ে বসে থাকে না। তাই আমার মত যারা শীতের প্রসাধনীর চটচটে, তেলতেলে / স্টিকিভাব অপছন্দ করেন এবং বডি লোশন লাগাতে ভয় পান তাদের জন্য এই প্রোডাক্টটি বেস্ট হবে।
নিচের ছবিতে প্রোডাক্টের কন্সিসটেনসি আর লাগানোর আগে পড়ে আমার হাতের স্কিনের ছবিটি একটু খেয়াল করে দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন।
লোশন অ্যাপ্লাই করার আগেঃ ড্রাই, ফ্লেকি স্কিন
লোশন অ্যাপ্লাই করার পরেঃ স্মুথ স্কিন
দেখছেন, লোশন লাগানোর আগে আমার হাতে ডেড সেলস ফ্লেকি হয়ে আছে? আর পড়ের ছবিটি দেখুন, কোন চিকচিকে স্টিকিভাব দেখবেন না। আর স্কিন ড্রাই লাগছে না।
আমি প্রথম যখন প্রোডাক্টটি ইউজ করি, সত্যি কথা বলতে এত হাই হোপ নিয়ে ইউজ করিনি। কিন্তু নিজে যে ভিজিবল চেঞ্জ তাও আবার এই অত্যন্ত সাশ্রয়ী প্রোডাক্ট থেকে পেয়েছি সেটা আপনাদের দেখানোর লোভ সামলাতে পারলাম না!!
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, আমার হাল্কা ড্রাই স্কিনে একবার এই প্রোডাক্ট ইউজ করার পর প্রায় ১২ ঘণ্টা আবার লাগানোর প্রয়োজন হয় না। (বার বার লোশন লাগানোর যন্ত্রণা কার ভালো লাগে বলুন? ) যাদের স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই তারা গোসলের সময় একবার আর রাতে ঘুমাতে যাবার সময় বডির সবচেয়ে ড্রাই পার্টসগুলোতে একটু লাগিয়ে নিলেই যথেষ্ট।
এই প্রোডাক্টের যে পয়েন্টগুলো আমার ভালো লেগেছেঃ
মোটের উপরে এই প্রাইজ রেঞ্জে এই প্রোডাক্টের কোয়ালিটি নিয়ে আমার একেবারেই কোন কমপ্লেন নেই।
– নরমাল থেকে ড্রাই স্কিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত আদ্রতা যোগায় (এই শুষ্ক আবহাওয়ায়)
– খুব সহজে স্কিন শুষে নেয়।
– কোন চটচটে , অয়েলি ফিল দেয় না।
– যেকোনো বয়সে যে কেউ ইউজ করতে পারবে
– ইজিলি বোতল ধরে ভেজা শাওয়ারে ইউজ করা যায়।
– প্যাকেজিং খুব ভালো। অযথা এতটুকু প্রোডাক্টও ওয়েস্ট হয় না।
– প্রচণ্ড সাশ্রয়ী। খুবি অল্প মুল্যে বেশ ভালো কোয়ালিটির প্রোডাক্ট!!
এই প্রোডাক্টের যে পয়েন্টটি আমার ভালো লাগে নিঃ
পয়েন্টটি বললাম কারণ আমার একটু সন্দেহ আছে এই প্রোডাক্টের ঘ্রান সবার ভালো লাগবে কিনা তা নিয়ে। তাও থাকতো না যদি ঘ্রান ইউজ করার কিছুক্ষন পর মিলিয়ে যেত। কিন্তু ঘ্রান অনেক্ষন স্কিনে থাকে। এটা অনেক ইউজারের কাছে প্লাস পয়েন্ট মনে হতে পারে। কিন্তু পছন্দ প্রত্যেকের আলাদা হয় বলে এটা নিয়ে বললাম।
আমি কি আবার এই প্রোডাক্ট কিনব?
হ্যাঁ, এবার নতুন প্রোডাক্ট ট্রাই করার লভে ছোট সাইজ কিনেছি। কিন্তু ইউজ করে আমার মনে হয়েছে এরপর বড় সাইজটি কেনা যেতেই পারে।
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মীম
ছবি – বিউটিএন্ডমেকাপলাভ.কম