বাগান করা আমাদের অনেকের শখ হলেও ঢাকা শহরের এই যান্ত্রিক পরিবেশে হয়ত হয়ে ওঠে না। শুধু যে বাগান করা তা নয়, নিজের বাসাটি একটু অন্যরকমভাবে ডেকোরেট করতে এই ইনডোর প্ল্যান্টের আইডিয়াটি ব্যবহার করতে পারি। এতে দু’ধরনের উপকার হবে। প্রথমত, আপনার ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে এটি খুবই কার্যকর, আবার কিছু কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট আছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। দ্বিতীয়ত, এটি আপনার ঘরকে একটি ভিন্ন রকম লুক এনে দিবে। তবে আপনি যদি ঠিকভাবে প্ল্যান করতে না পারেন তা হলে কিন্তু উল্টোটাও হতে পারে। কারণ এলোমেলোভাবে গাছ সাজালে ভালো নাও লাগতে পারে। তবে চলুন দেখে নিই কীভাবে ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো যায়-
ইনডোর প্ল্যান্ট ও শোভা বর্ধনকারী গাছ হিসাবে ব্যবহার করা যায়, এসি প্ল্যান্ট (বিশেষ ধরণের গাছ যা এসি রুমে বেঁচে থাকতে পারে), সিলভার কুইন, হাইডেনজিয়া, পান্থপথ, চায়নিজ পাম, পিচুটিয়া পাম, রেড পাম, ফনিক্র গাস, কচু পাস, বাঁশ পাতা, ড্রাসিলা, রাসি পাস, মনোট্রিট, ড্রাসিনা, গোলডেন ড্রাসিনা, টেরিস, ক্যাকটাস, আলপেনিয়া, বিভিন্ন প্রকার অর্কিড এবং ফার্ন এর প্রজাতি, পাতাবাহার এর বিভিন্ন প্রজাতি, মানিপ্লান, বনসাই, ফরচুন ট্রি, মালপুচিয়া, লাভলিক, এরিকা পাম, তুলসি ইত্যাদি। ঘরের বিভিন্ন স্থানে আকার ও উচ্চতা অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা যায় এসব গাছগুলো।
- ঘরের দরজা বা লিফট এর সামনে রাখা যায় মাঝারি আকৃতির গাছ (মানিপ্লান্ট, ড্রাসিনা)।
- আকটু বড় ধরনের গাছ রাখা যায় বসার ঘরের কর্ণারে (পাতাবাহার, অর্কিড), অপেক্ষাকৃত ছোট গাছ রাখা যায় শোবার ঘরে (অর্কিড, ফার্ণ, ক্যাকটাস), বিভিন্ন প্রজাতির পাম, পাতাবাহার, তুলসি রাখা যায় খাবার ঘরে।
- লো-হাইট এর টেবিলে ক্যাকটাস, বনসাই।
- ঘরের কর্ণারে টবে লাগানো গাছ ও বারান্দা সাজানো যায় যেকোন ধরণের গাছ দিয়ে। জানালা ও বারান্দার গ্রীলে ঝুলিয়ে দেয়া যায় ঝুলন গাছ। বিভিন্ন প্রকার ফার্ণ ও লতানো উদ্ভিদ ব্যবহার করা যায় ঝুলানো গাছ হিসাবে (ফার্ণ, পোলিওনিয়া, পুলক্রো, ফিলোডেলড্রন, সিলোন গোল্ড ইত্যাদি)। ছোট ছোট মাটি, প্লাস্টিক বা বাঁশের তৈরি টবে করে জানালা ও বারান্দার গ্রীল এর সাথে ঝুলানো যায় গাছগুলো।
- প্লাস্টিক বা টিনের কন্টেইনারে পানি ভর্তি করে ঘরের কর্ণারে রাখা যায় পানিতে জন্মে এমন গাছ (কচুরিপানা, শাপলা, পদ্ম)।
– গাছ লাগানোর পর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে যত্ন নেয়া। অল্প আলো ও অল্প জায়গায় জন্মানো এসব ইনডোর প্ল্যান্ট এর পরিচর্যার দিকে নজর দিতে হবে শত ভাগ।
– এসব গাছ লাগানোর জন্য বেলে ও বেলে-দোঁআশ মাটি উপযুক্ত। মাটির সাথে জৈব সার সমানভাবে মিশিয়ে টবে ভরতে হবে।
– বাজারে সুন্দর ডিজাইন করা মাটি, তামা, পিতল, প্লাস্টিক, সিরামিক ও সিমেন্টের তৈরি টব পাওয়া যায়।
– যেহেতু জায়গা আনেক কম সেহেতু অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি আকৃতির টব নির্বাচন করা ভাল।
– ঝুলানো গাছের ক্ষেত্রে ৮-১০ ইঞ্চি বাশেঁর ঝুড়ি, মাটি বা প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করা ভাল।
– মাটি ও প্লস্টিক টবের উপরের কোনাগুলো ছিদ্র করে গাছসহ টবটিকে রশি বা গুনার (লোহার তৈরি রশি) সাহায্যে ঝুলিয়ে দিলেই হয়ে গেল ঝুলন গাছ। শিকা কিনে তাতে করেও ঝুলিয়ে দেয়া যায় টব।
– গাছগুলো এমন ভাবে ঝুলাতে হবে যাতে অনায়াসে পানি দেয়া এবং পরিচর্যা করা যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে ১-২ বার গাছে পানি দিতে হবে। টবের মাটি ভেজা থাকলে পানি না দেয়াই ভাল। অতিরিক্ত পানি দিলে গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাঝে মাঝে স্প্রেয়ারের সাহায্যে গাছের পাতা ধুয়ে দিলে ভাল হয়।
– সপ্তাহে একবার গাছগুলো রোদে দিতে হবে। ২-৩ দিন পর পর রোদে দিলে ভাল হয়।
– গাছের পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করতে তরল সার ব্যবহার করতে হবে। মাঝে মাঝে গাছের গোড়ার মাটি উল্টেপাল্টে দিতে হবে।
– পোকামাকড় আক্রমণ করলে বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। পানিতে গাছ থাকলে সপ্তাহে একবার পানি পরিবর্তন করতে হবে।
ইনডোর গার্ডেন করার জন্য আপনি আপনার পছন্দমত গাছ সংগ্রহ করতে পারেন দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নার্সারী এবং হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে।
লিখেছেন – পাপিয়া সুলতান
ছবি – গার্ডেনারস.কম