গত ৬-৭ বছরে কে-বিউটি অথবা কোরিয়ান বিউটি ট্রেনড এর যে বুম পুরো পৃথিবী দেখেছে তাতে ওয়েস্টের কসমেটিক জগতকে বলতে গেলে প্রায় ওভারহোয়েলমড। কি নেই কোরিয়ান কসমেটিকসের ভাণ্ডারে?? ১০ স্টেপের কেয়ারফুলি সিলেক্টেড স্কিনকেয়ার রুটিন থেকে শুরু করে আজকালকার বিজি লাইফের কর্মজীবী নারীদের জন্য অত্যন্ত সহজ অল ইন ওয়ান সলিউশন পর্যন্ত … এই জাদুর দুনিয়ায় যেন যা চাইবেন তাই পাবেন…!!
কোরিয়ান স্কিনকেয়ার এবং আমাদের দৈনিক জীবনে তা কীভাবে অত্যন্ত সহজে ইনটিগ্রেট করা যায় তা নিয়ে অন্য একদিন বিস্তারিত লিখব… আজ এই গল্প শুরু হলে লেখা আর শেষ হবে না। এর চেয়ে আজ বরং কথা বলি এই কোরিয়ান সর্বাধুনিক স্কিনকেয়ারের এক বড় অবদান, শিট মাস্ক নিয়ে…
[picture]
শিট মাস্ক…! সেটা আবার কি?
জানি এটাই চিন্তা করছেন অনেকে, সহজ কথায় বলতে গেলে শিট মাস্ক হচ্ছে আগে থেকে প্রিপেয়ার করা প্যাকেটজাত ফেসিয়াল মাস্ক।
তাহলে আবার প্রশ্ন, টিউবে করে যেসব মাস্ক পাওয়া যায়, তার সাথে এই জিনিসের ডিফারেন্স কোথায়?
উত্তর- বাজারের টিউবের মাস্ক বা যাকে ভালোভাবে বললে বলতে হয়- ওয়াশ অফ মাস্ক , ব্যবহারের আগে স্কিন ক্লিন করে এই ওয়াশ অফ মাস্ক লাগিয়ে ওয়েট করতে হয়, তারপর শুকিয়ে গেলে অথবা নির্দিষ্ট সময় পর এই মাস্ক ধুয়ে ফেলতে হয়।
কিন্তু, শিট মাস্কের কনসেপট পুরোপুরি আলাদা, এই ক্ষেত্রে, একটি প্যাকেটে পুরোপুরি এসেন্স অথবা সিরামে ভেজানো একটি মাস্ক থাকে, যাতে থাকে মুখের, নাকের এবং চোখের ফুটো। এই মাস্ক মুখ ক্লিন করে মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। ১৫-২০ মিনিট পরে সিরাম স্কিনে শুষে নিলে মাস্কটি তুলে ফেলে দিতে হয়। কিন্তু এরপর আর মুখ ধোয়ার কোন দরকার হয় না। এতে ঝঞ্ঝাট যেকোনো ওয়াশ অফ মাস্ক থেকে অনেক কমে যায়। এবং বিজি লাইফের এক্সট্রা কোন সময় ও নষ্ট হয় না স্কিন কেয়ারের পেছনে।
শিট মাস্ক দেখতে এরকম-
[picture]
কখন শিট মাস্ক বেছে নেয়া আপনার জন্য ভালো হবে?
আসুন জেনে নিই, শিট মাস্কের কিছু স্পেশাল কোয়ালিটি। এতে আপনি নিজেই ডিসাইড করতে পারবেন শিট মাস্ক আপনার জন্য পারফেক্ট কি না –
– যদি আপনি খুবই ব্যস্ত থাকেন এবং সপ্তাহে ২-৩ বার ঘরে মাস্ক তৈরি করে ইউজ করার সময় না হয় তবে শিট মাস্ক হতে পারে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড।
– আপনার স্কিন যদি অত্যন্ত ড্রাই এবং এজেড হয়, শিট মাস্কের গ্লিসারিন বেসড ময়েশ্চারাইজার এসেন্স সপ্তাহে ২ দিন ইউজেই আপনার স্কিনে সিগ্নিফিকান্ট চেঞ্জ আনতে পারবে।
– আপনি যদি স্যালন ট্রিটমেনট, যেমন-ফেসিয়াল, ম্যাসাজ এসবের পিছনে আর টাকা অথবা সময় কিছুই অপচয় না করতে চান।
– শিট মাস্কের সবচেয়ে মজার দিক হচ্ছে এর বিভিন্ন ধরণের ফরমুলেশন। আপনি আপনার ত্বকের সমস্যা বিবেচনা করে ডিফারেন্ট উপাদান এবং ফ্লেভারের শিট মাস্ক কিনতে পারবেন, এবং ১ বার ব্যবহারের পর পার্লারের ফেসিয়ালের মতই ২-৪ দিন স্কিন গ্লোইং থাকবে। তাই শিট মাস্ক স্পেশালি কোন পার্টি অথবা স্পেশাল অকেশনের আগে পার্লারের ঝক্কি এবং খরচ দুটোই বাচিয়ে দিতে পারবে খুব সহজে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন শিট মাস্ক?
আসুন ছবিসহ দেখে নিই শিট মাস্ক কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।
– ১ টি প্যাকেটে ১ টি মাস্ক থাকে, যা একবার ব্যবহার করা যায়। প্রথমেই শিট মাস্ক ইউজের আগে নিজের মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং চাইলে টোনার লাগিয়ে নিন।
– এবারে শিট মাস্কের প্যাকেটের উপরের অংশ টান দিয়ে ছিঁড়ুন/ কেটে ফেলুন। কোন ভাবেই হেঁচকা টান দেবেন না যাতে ভেতরের নরম কাপড়/ কাগজের মাস্ক ছিঁড়ে যায়…!
– এবারে আলতো হাতে মাস্কটি প্যাকেট থেকে বার করুন। মাস্কটি এই মুহূর্তে ভাজ করা অবস্থায় আছে। আস্তে আস্তে ভাঁজ খুলুন।
– এবার ঠিক নিচের ছবির মতো করে চোখ নাকের ফুটো ঠিক রেখে নিজের মুখে মাস্কটি বসিয়ে নিন। মুখে ঠিকভাবে ফিট না করলেও সমস্যা নেই। এগুলো যাতে সবার মুখে ফিট করে সেজন্য অনেক বড় করে বানানো হয়। জাস্ট খেয়াল রাখুন মুখের সব অংশ যেন মাস্কের টাচ পায়। কোন বাবল থাকলে ওখানে মাস্ক সমান করে দিন।
– এবার ২০ মিনিটের মত অপেক্ষা করুন। এ সময় আপনার জরুরী যেকোনো কাজ করতে পারেন। কোন সমস্যা নেই।
– ২০ মিনিট পর মাস্কের সিরাম স্কিনে শুষে নেয়া হয়ে যাবে। মাস্কটি তুলে ফেলে দিন।
দেখুন শুকনো মাস্ক…
– খেয়াল করবেন এখন আপনার স্কিন সিরামে ভিজে আছে। আপনার হাত পরিষ্কার করে নিয়ে পরিষ্কার হাতে আস্তে আস্তে প্যাট করুন/ একটু ম্যাসাজ করতে থাকুন। ৩০ সেকেন্ডের মাথায় আপনার ত্বক বাকি সিরামটুকুও শুষে নেবে।
– ব্যস, হয়ে গেল আপনার ডেইলি স্কিন কেয়ার!! কি বেশ সহজ না? শিট মাস্ক থাকলে আপনাকে আর এটা বাট, ওটা মাখ, মুখ ধোও , হাত ধোও, বাটি ধোও এসব সমস্যার মধ্যে যেতে হবে না…!!!
– মনে রাখবেন শিট মাস্ক সপ্তাহে দুটো ব্যবহার করাই যথেষ্ট। এবং কোনভাবেই ইউজড মাস্ক দ্বিতীয় বার ইউজ করার ট্রাই করবেন না।
– একটা ছোট্ট টিপ, এই গরমে কয়েকটি শিট মাস্ক ফ্রিজে রেখে দিন। রাতে রিলাক্স করতে করতে অথবা বাইরে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে এই ঠাণ্ডা শিট মাস্ক ইউজ করে নিজেই অবাক হবেন। আমি এই কাজই করছি আজকাল…!!!
কোথায় পাবেন শিট মাস্ক?
বেশ কয়েকটা অনলাইন শপ আজকাল কোরিয়ান কসমেটিক আনে। এছাড়াও স্যাফায়ারেও অনেকদিন হলো শিট মাস্ক দেখছি। আপনার সুবিধামত অনলাইনে অথবা শো রুম থেকে নিজের স্কিন টাইপ এবং সমস্যা অনুযায়ী শিট মাস্ক কালেক্ট করে নিতে পারেন।
আর আমার পছন্দের কিছু শিট মাস্কের কথাও আপনাদের বলে দেই, নিচের প্রোডাক্টগুলো ইউজ করে আমার বেশ ভালো লেগেছে। চাইলে এই শিট মাস্কগুলোই ট্রাই করতে পারেন।
১।বারলানটি শিট মাস্ক (হোয়াইটেনিং)-
এও যারা রোদে পোড়া কালো ছোপ ছোপ দাগ এবং ত্বকের রংয়ের অসামঞ্জস্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য এটাকে ভালো শিট মাস্ক। ভালো হয় সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে পারলে। এভাবে ব্যবহার করলে আপনি নিজেই ত্বকের গ্লোয়িং ভাব প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। দাম ২০০ টাকা।
২। কোসে ক্লিয়ার টার্ন বেবিইস ফেস মাস্ক ও বেবিইস ময়েশ্চার রিচ ফেস মাস্ক-
এই দুটো মাস্কই কোসে ব্র্যান্ডের। আর দুটোই আমার ফ্রিজে রেখে বাইরে থেকে আসার পর ইউজ করতে খুবই ভালো লাগে। স্পেসালি সেনসিটিভ ও রোদে লাল হয়ে যাবার সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য খুবই ভালো হবে এগুলো। আর এই মাস্কগুলো শপে একসাথে ৭ পিস এর প্যাকেটে পাবেন। তাই ইউজ করে সুবিধা। এর দাম ১২৫০ টাকা।
ময়েশ্চার রিচ ভারিয়েন্টটা ড্রাই স্কিনের জন্য বেশি ভালো হবে।
৩। কোসে ক্লিয়ার টার্ন হোয়াইট শিট মাস্ক উইথ বি৫/ ভিটামিন সি-
স্পেসালি যাদের স্কিনে ট্যান আছে এবং এই রোদে পোড়া কালচে ভাব দূর করতে চান। এই মাস্কটি জাপানিজ কসমেটিকসের বেশ পপুলার একটি প্রোডাক্ট। এবং সপ্তাহে ১ টি ইউজ করলে ভালো ফল পাবেন। স্পেসালি ভিটামিন সি মাস্কটা আমার বেশি পছন্দ হয়েছে কারণ এটা কেবল পোড়া দাগ দুরের সাথে সাথে ত্বকে গ্লোয়িং ইফেক্ট নিয়ে আসে। দাম ২৫০ টাকা।
৪। ক্রেসি একনে কেয়ার মাস্ক-
বিশেষ করে যাদের ত্বক তৈলাক্ত এবং ব্রণের সমস্যা আছে তাদের জন্য। এই মাস্কটি ব্যবহারে ব্রণের সমস্যা তো কমবেই সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে। এর দাম ২৫০ টাকা।
৫। সো ইজিএফ এফেক্টর টাইমলেস মাস্ক-
এটা খুবই লাক্সারিয়াস একটা মাস্ক। মাস্কের সাথে একটি আই অ্যাম্পুল পাবেন । অ্যাম্পুল এবং মাস্ক দুটি একটি ছোট ২ স্টেপের স্কিন কেয়ার রুটিন তৈরি করবে। এবং এটা বিশেষ করে যারা একটু বয়স্ক এবং মুখে ফাইন লাইনস এবং রিঙ্কেল দেখছেন তাদের জন্য খুবই ভালো হবে। দাম ৩২০ টাকা।
৬। ইন্নিসফ্রি ইট’স রিয়েল স্কুইজ মাস্ক-
এদের অনেক ডিফারেন্ট ফ্লেভারের মাস্ক আছে। আমার পার্সোনাল ফেবারিট রাইস, লাইম, গ্রিন টি, টি ট্রি, বিজা শিট মাস্ক।
৭। ডিয়ার ক্লেয়ার’স রিচ ময়েসট সুথিং শিট মাস্ক-
এই সিজনে ড্রাই স্কিনের জন্য বেস্ট। যাদের রোদে মুখ জালাপোরা করে তাদের জন্য ও ভালো হবে। আমি শীতকালে এই মাস্কটা ইউজ করে খুবই আরাম পেয়েছি। দাম ১৫০ টাকা পার পিস।
এই তো গেল আমার মোস্ট ফেবারিট মাস্কগুলোর কথা, এছাড়াও কম দামে কিছু স্পেশাল মাস্ক ইউজ করে আমার ভালো লেগেছে, যেমন হলিকা হলিকা পিগ নোজ ক্লিয়ার কিট- এটা ঠিক ফেস মাস্ক নয়, বাট যাদের নাকের উপরের ব্ল্যাক হেড গুলো একটু বেশি জেদি তাদের জন্য ৩ স্টেপ এর উইকলি কেয়ার সিস্টেম। জেদি ব্লাকহেড থাকলে ট্রাই করে দেখতে পারেন। উপকার পাবেন।
এছাড়াও আছে জেসি জেয়জুন মাস্ক- এটাও ২ স্টেপ এর। এটাও একটু বয়স্ক স্কিনের জন্য ফরমুলেটেড। এর দাম ৩২০ টাকা। একি সাথে রিঙ্কেল এবং আনইভেন স্কিন টোন সমস্যার জন্য এই মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন।
তো, যারা নতুন কিছু ট্রাই করতে চান এবং একি সাথে টাকা এবং সময় দুটোই বাচাতে চান তারা জলদি উঠে পড়ুন এশিয়ান স্কিনকেয়ারের জাহাজে…!!
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মীম