এর চেয়ে বেশি কষ্টদায়ক আর কি হতে পারে যে আপনি কষ্ট করে বাজার ঘেঁটে টাটকা সবজি ফল বাসায় নিয়ে আসলেন, অথচ কিছু সময় অথবা কিছু দিন পর তা বাসি সবজি ফলে পরিণত হল। এতে একে তো খাবারের অপচয় তার উপর টাকার অপচয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণের অভাবে এ ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ক্ষতি বলতে আমি খাবারের পুষ্টিগুণকেও বুঝাচ্ছি।
শুধুমাত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করেই অসময়ে ফল সবজির পচন রোধ করা সম্ভব। সংরক্ষণ বলতে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনে করি ফ্রিজে রাখা। তা কিন্তু নয়। কেননা এমন অনেক ফল এবং সবজি রয়েছে যা ফ্রিজে রাখলেই বরং তাড়াতাড়ি পচে যায়।
[picture]
আজ মূলত ফ্রিজে কোন ধরণের সবজি ফল রাখা যাবে আর কোনটা রাখা যাবে না সে ব্যাপারটাই আপনাদের জানাবো। যেসব ফল সবজি রেফ্রিজারেট করবেন:
(১) সবুজ শাকপাতা
সবুজ শাকপাতার মধ্যে রয়েছে ধনেপাতা, পেঁয়াজপাতা, লেটুসপাতা ইত্যাদি আর বিভিন্ন ধরণের শাক। এসব দীর্ঘ দিন টাটকা রাখার জন্য এসব পেপার ব্যাগে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখুন।
(২) অ্যাভোকাডো
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অ্যাভোকাডো বাইরে রাখা হয়। কিন্তু এতে অ্যাভোকাডো তাড়াতাড়ি পেকে যায়। তাই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। সংরক্ষণের জন্য যখনই অ্যাভোকাডো ভালোভাবে পেকে যাবে, তা ফ্রিজে রেখে দিন। ফলে এর পেকে যাওয়ার হার কিছুটা কমে যাবে, আরও ৩ থেকে ৪ দিন বেশি ব্যবহার করতে পারবেন।
(৩) সবুজ মরিচ
সবুজ মরিচ ফ্রিজে রেখে অনেক দিন খাওয়া যায়। ফ্রিজে রাখার আগে মরিচ ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এতে মরিচ ৯/১০ দিনের মত টাটকা থাকবে। অন্যান্য ধরণের মরিচও ফ্রিজে রাখলে ভালো থাকে।
(৪) গাজর
গাজর ফ্রিজে ঠান্ডা অবস্থায় বেশ ভালো থাকে। গাজর ভালোভাবে ধুয়ে নিন, তারপর কেটে কোনো কন্টেইনারে রেখে মুখ বন্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিন। এতে পরবর্তী ব্যবহারের জন্যও সহজ হবে।
(৫) সবুজ সবজি
ঝিঙা, পটল, ধুন্দল, ঢেঁড়স, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি সবুজ সবজির পচনশীলতা এড়াতে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
(৬) আঙ্গুর
অপেক্ষামূলক ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় আঙুর ভালো থাকে। তাই আঙুর ফ্রিজে রাখুন। বাইরে রাখলে নরম হয়ে পড়ে। ফ্রিজে অন্যান্য সবজি ফল থেকে দূরে পেপার ব্যাগ দিয়ে রাখতে পারেন।
এ তো গেলো যা ফ্রিজে রাখতে পারবেন। এমন কিছুই আছে যা ফ্রিজে রাখতে পারবেন না। যেসব সবজি ফল ফ্রিজে রাখতে পারবেন না-
(১) কলা
ফ্রিজে কলা রাখার কথা কখনও চিন্তাও করবেন না। ফ্রিজে না রেখে কোনো কাউন্টার টপের উপর রাখুন। এক্ষেত্রে পচনশীল অন্যান্য খাবার কলা থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন নচেৎ তাড়াতাড়ি কলা পেকে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
(২) শশা
শশা খুবই সেনসিটিভ হয়। ঠাণ্ডায় শশা নরম হয়ে যায়। তাই এটিকে রুম টেমপারেচারে সংরক্ষণ করুন। অন্যান্য ফুড আইটেম থেকে শশাকে দূরে রাখাই ভালো, কেননা অন্যান্য ফল কিংবা সবজি থেকে যে গ্যাস বের হয় তা শশার পচনশীলতার কারণ হতে পারে।
(৩) আলু
আলু ফ্রিজে রাখবেন না। ফ্রিজের ঠাণ্ডায় এর স্বাদ নষ্ট হয় এবং নরম হয়ে যায়। তাই পেপার ব্যাগ দিয়ে কেবিনেটে স্টোর করে রাখতে পারেন।
(৪) পেঁয়াজ
ফ্রিজে পেঁয়াজ রাখলে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই পেঁয়াজ নেটের ব্যাগে রেখে শুষ্ক স্থানে রাখুন।
(৫) টমেটো
টমেটো ফ্রিজে থাকলে এর স্বাদ নষ্ট হয়, তাছাড়া নরম হয়ে যায়। আবার ফ্রিজের বাইরে পেপার ব্যাগে রাখলেও টমেটো তাড়াতাড়ি পেকে যাবে। তাই খোলা স্থানে রাখুন, কিন্তু ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে রাখবেন না।
ফল আর সবজি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু টিপস অনুসরণ করে খাবার আর টাকার অপচয় থেকে বাঁচুন।
ছবি – লাইভস্ট্রং.কম
লিখেছেন – নীল