একটু বাড়তি ওজন কমানোর জন্য হেলদি লাইফস্টাইল, পরিমিত ডায়েট করার চিন্তা করছেন। তাই ভাবলাম আপনাদের একটু হেল্প করি।
সারাবছর উল্টোপাল্টা খাবার দাবার খেয়ে স্বাস্থ্য নষ্ট করে দেহে বিশেষ করে পেটে অতরিক্ত মেদ জমিয়ে ফেলার মত মানুষ অনেক আছেন এখানে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল, তারা সবাই বিশ্বাস করেন, এই রোজার একমাস না খেয়ে থেকে তারা সারা বছরের ড্যামেজ দূর করে ফেলবেন!! অনেকে আবার একমাস রোজা রেখে ১০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলার স্বপ্নও দেখেন।
হেলদি হওয়ার আশা করাটা দোষের না, কিন্তু আমি আপনি, আমরা সবাই আসলে কিন্তু জানি, সঠিক ডায়েট এবং এক্সারসাইজ ছাড়া আসলে কোন কিছুই কোন রেজাল্ট দেবে না। আর রোজার মাসেও আমরা কিন্তু সাধারন সময়ের মতই খাই, স্বাভাবিক ৩ বেলা, তাই না?? অনেকে আবার ইফতারিতে এত অস্বাস্থ্যকর খাবার খান যে, সাধারন সময়ের চেয়েও বেশি ক্যালোরি ইনটেক হয়ে যায়… ফলাফল, যেখানে রোজা রেখে ১০ কেজি ওজন কমানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্টো সেখানে রোজার মাস শেষে ৫ কেজি ওজন বেড়ে যায়!! সত্যি কিনা? আর ঈদের খাওয়া দাওয়ার কথা তো বাদ ই দিলাম।
তো রোজার মাসের হেলদি ফুড চয়েস কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি লিখব। আজ একটু রোজায় ওজন কমানোর জন্য খাবার আর এক্সারসাইজের পাশাপাশি আর একটা ছোট টিপ দেই। রোজায় আর সব কিছুই কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া হয়। কিন্তু দিনে ৩ লিটার পানি কতজন খেতে পারেন?
অনেকেই রোজায় পানি অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম খান। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর ব্যাপার, পানির বদলে রোজা মুখে বেশি স্বাদের আশায় অনেকে বেছে নেন প্রচুর চিনিযুক্ত শরবত!! অথবা একদম ফাইবার বিহীন ফ্রুট জুস! যা থেকেও চলে আসে অনেক বেশি ক্যালোরি। কেউ বুঝতেও পারেন না মাত্র কয়েক ঢোঁক তরল আপনার শরীরে কতটা অতিরিক্ত ফ্যাট যোগ করছে!!
আপনাদের জন্যই আজকের স্পেশাল বেলি ফ্যাট রিডিউসিং ডিটক্স ওয়াটার রেসিপি। রোজার যতদিন আছে ততদিন শরবতের বদলে এটা খেতে পারেন। অতিরিক্ত ক্যালরির হাত থেকেও বাঁচবেন, পেটের ফ্যাট কমাতে এটা প্রচুর হেল্প করবে, সাথে সাথে আপনি দেখবেন ১ মাস রেগুলার ডিটক্স ওয়াটার পান করায় আপনার স্কিন কতটা ব্রাইট আর গ্লোইং হয়েছে …
উপকরণ
– ১ টা কাঁচের জগ
প্লাস্টিকের বোতলে ডিটক্স ওয়াটার বানাবেন না। ফুড গ্রেড প্লাস্টিক না হলে যেকোনো প্লাস্টিকে দীর্ঘসময় পানি আর ফল সবজি রেখে দেয়া ঠিক না। চেষ্টা করুন অবশ্যই কাঁচের পাত্রে ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করতে।
– একটা বড় সাইজের শসা (খোসাসহ, শসা ছিলবেন না)
শসা দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আর এতে আছে প্রচুর পরিমানে ডায়েটারি ফাইবার
– একটা কমলা।
কমলার খোসায় থাকে ফ্ল্যাভিনয়েড, যা ইমিউন সিস্টেমকে চাঙ্গা রাখে। এটা কোলেস্টেরল লেভেল ও কমায়।
– একটা বড় সাইজের লেবু
লেবুর রস দেহে জমে থাকা টক্সিন দূর করে এবং মেদ কমাতে সাহায্য করে। লেবু বদহজমেও সাহায্য করে।
– একমুঠো পুদিনা পাতা
(যেহেতু পুদিনা পাতা ইউজ করা হচ্ছে তাই কোনভাবেই অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এই ড্রিঙ্কটি ট্রাই করবেন না, পুদিনা প্রেগন্যান্ট অবস্থায় খাওয়া বা ইউজ করা ঠিক না)
পুদিনা আমাদের খাবারের ফ্যাটকে দ্রুত ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে। এবং এর ব্যবহার এই ডিটক্স ওয়াটারে একটা হাল্কা মিষ্টি টেস্ট নিয়ে আসে। যেটা রোজা মুখে বেশ ভালো লাগে।
[picture]
কীভাবে বানাবেন?
– শসা গোল চাকা চাকা করে কেটে নিন। একইভাবে কমলাও খোসাসহ গোল চাকা করে কেটে নিন। আবারো বলছি, কমলা বা শসা কোনটারই খোসা ফেলবেন না।
– লেবু খোসাসহ গোল চাকা করে কাটুন
– পুদিনা পাতাগুলো হাত দিয়ে একটু মুচড়ে নিন। এতে খুব জোরালো পুদিনা ফ্লেভার আসে, এটা আমার খুব পছন্দ। আপনার যদি পছন্দ না হয়। পাতা মুচড়ে নেয়ার দরকার নেই।
– সব উপকরণ জগের ভেতরে রাখুন। এবার নরমাল টেম্পারেচারের ১ লিটার পানি ঢেলে দিন জগে।
– এবার জগটা ফ্রিজে রেখে দিন। এটা পান করার জন্য ১২ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখতে হবে। সুতরাং আপনি ইফতার বা সেহরির সময় এক জগ বানিয়ে রেখে দিতে পারেন ফ্রিজে পরদিন ইফতারের সময় থেকে খাওয়া শুরু করবেন। শেষ হয়ে গেলে আবার সেহরির সময় নতুন করে তৈরি করে ফ্রিজে রাখবেন।
– একদিনের ফল এবং সবজি পরের দিন ইউজ করবেন না। একদিনের ওয়াটার শেষ হয়ে গেলে ওগুলো ফেলে দিন। আবার নতুন করে কাটুন।
রোজার মাসে প্রতিদিন ইফতার থেকেই শরবত আর জুসের বদলে এই ডিটক্স ওয়াটার দিয়ে ইফতারের তরলের প্রয়োজন মেটান।চাইলে দুটো বরফের কিউব দিয়ে দিন সাথে। দেখবেন কতো টেস্টি একটা ড্রিঙ্ক পেয়ে যাচ্ছেন কিন্তু অতিরিক্ত একদানা চিনিও খাওয়া হচ্ছে না। এর সাথে সাথে এক্সট্রা আরও ৪-৫ গ্লাস পানি খান। দেখতে না দেখতেই আপনার ২.৫ লিটার পানি খাওয়া হয়ে যাবে। এতে রোজার ডিহাইডড্রেশন, ক্লান্তি আর অসুস্থতাও আপনাকে আর ছুঁতে পারবে না। সাথে সাথে এটা রোজায় আপনার ওজন কমানোর যুদ্ধেও হেল্প করবে। তো আজ থেকেই ট্রাই করুন না…!!
ছবি – রেসিপি.হাবস.কম
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মীম