বাবা তোমাকে ভালোবাসি”- এই কথাটা কোনদিন বলা হয় নি মুখে। কোনদিন বলব বলেও মনে হয় না। কখনো কি নিজেকে বলা লাগে ভালোবাসি? আমার কাছে বাবা আমার সত্ত্বা, আমার অস্তিত্ব। বাবা আছেন, এটাই “আমি আছি”-র সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কিন্তু তবুও কখনো এই ভালোবাসার মানুষটিকে যদি একটু আলাদা করে জানানো যায় “তুমি আছো তাই আমি আছি, ভালোবাসি , বাবা , ভালোবাসি” তাতে ক্ষতি কি? এতে বাবার সাথে সম্পর্কটা আবারও মধুর হয়ে যাবে। চলুন তবে এখন দেখে কিভাবে বাবাকে সারপ্রাইজ দিয়ে বাবা দিবস উদযাপন করা যায়, তাই দেখে নেই!
বাবা দিবস ঘিরে নানান কথা
বাবার সাথে আজ সম্পর্ক যেমন
বাবা দিবস এলেই আনমনে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। সেই কবে বাবার হাত ধরে দাঁড়াতে শিখেছিলাম, এটা এখন আর আমাদের মনে পড়ে না। তারপর হাঁটতে হাঁটতে অনেক পথ পেরিয়ে আসা তার আদরে ও শাসনে। অক্সিজেন-এ বাস করি বলে অনেক সময়ই ভুলে যাই আমরা যে, অক্সিজেন-এর মর্ম কী। তেমনি মাথার উপরে ছায়া হয়ে থাকা বাবারও যে মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের ছায়ায় বসতে ইচ্ছে হয়, সে কথা কয়জনই বা আমরা ভাবি?
আমি হচ্ছি সেই দুর্ভাগাদের একজন যাদের বাবা সরকারি চাকুরির সুবাদে ঘুরে বেড়ান শহরে শহরে। তাই বাবাকে কাছে পাওয়া হয় খুব অল্প সময়ের জন্য। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার-এর দূরত্বে থাকা বাবার সাথে কথা হয় না প্রায় দিনই। সারাদিন কাজ শেষে বাবা ও ঘরে ফেরেন, সারাদিন কাজ শেষে আমিও ঘরে ফিরি। আমি ফিরি আমার ফেইসবুক, মোবাইল , বন্ধু বান্ধব, টিভি-আমার রঙ্গিন জীবনের কাছে। কিন্তু দিন শেষে বাবা কার কাছে ফিরেন এই প্রশ্ন কি আমরা করি? একটু একটু করে বড় হওয়া ছেলে মেয়েটা যখন হঠাৎ করেই অন্য জগতে বাস শুরু করে, তখন বাবার কেমন লাগে সে কথা ভাবতে বসলেও আমার ভয় করে! এমন চিত্র কি আমরা বদলাতে পারি না?
কিভাবে বাবা দিবস উদযাপন করা যায়?
আজ রোববার বাবা দিবস। জানি মা দিবস, বাবা দিবস নিয়ে আছে নানা মত, বিতর্ক। তবুও এই একটা বিশেষ দিনেই না হয় শুরু হোক বাবার হাত ধরে সেই পুরনো পথ নতুন করে চলা! তো এই দিনে ঠিক করা যায় তা নিয়েই নানা কথা বলব এই আর্টিকেল-এ। তবে একটা কথা বলে নেই প্রথমেই- আপনার বাবাকে আপনি কি দিয়ে খুশি করতে পারবেন, সেটা শুধুমাত্র আপনিই জানবেন, সেটা আপনার চেয়ে ভালো বলবে এমন সাধ্য কারো নাই। এখানে আমি কিছু জেনারেল আইডিয়া দেওয়ার চেষ্টা করব শুধু।
বাবা দিবস উদযাপনে ৬টি আইডিয়া
চোখ বন্ধ করুন, ভাবুন বাবার কথা, ভাবুন শুধু একটা জিনিসের কথা যা প্রতিবারই আপনার বাবার মুখে হাসি নিয়ে আসে! কেউ খেতে ভালোবাসেন, কেউ ভালোবাসেন পড়তে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ডাক্তার বাবাদের নিয়ে। এই বাবারা আসলে কী যে ভালোবাসেন এটা বের করতে পারা বেশ চ্যালেঞ্জ-এর ব্যাপার। রোগী, হাসপাতাল, অপারেশন এসবের মাঝখানে পরে বাবা মানুষটি কবে যে নিজেই নিজের ভালো লাগাগুলো ভুলে যান তার সন্ধান থাকে না। কেউ যদি ডিসাইড করতে গিয়ে ঝামেলায় পরেন যে আসলে কী করলে বাবা খুশি হবেন, তাহলে তাদের জন্য কিছু সাজেশন!
১) বাবার সাথে তার প্রিয় রেস্টুরেন্ট-এ যান
টাকা দিয়ে কেনা গিফট-তো যে কাউকে হর হামেশা দেওয়া যায়, কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান যা একজনকে আপনি দিতে পারেন তা হলো নিজের সময়, নিজের হাতে বানানো কিছু-নিজের হাতে আয়োজন করা একটি সন্ধ্যা বাবার জন্য। সেই সন্ধাটা হতে পারে চিরচেনা ঘরটিতে বা বাবাকে নিয়ে চলে যেতে পারেন আপনার প্রিয় কোন রেস্টুরেন্ট-এ। খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন, বিশেষ করে প্রবাদে আছে “A man’s heart is through his stomach!”
২) ঘুরতে যান
আমি বাজি ধরে বলতে পারি বাবা আপনার প্রিয় জায়গাগুলো আপনার সাথে ঘুরে দেখতে , আপনার প্রিয় খাবারগুলো আপনার সাথে খেতে অনেক বেশি পছন্দ করবেন। আপনার জগৎটা তাকে ঘুরিয়ে দেখান, তাতে বাবা যেমন এই ভেবে খুশি হবেন যে আপনি তাকে নিজের জগৎ থেকে দূরে রাখছেন না, তেমনি ছেলে মেয়েকে আরো একটু ভালোভাবে জানতে পারা তাকে অনেক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবে।
৩) নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ান
আপনি যদি রাঁধতে ভালোবাসেন তাহলে বাবার জন্য সারাদিন বসে বানিয়ে ফেলতে পারেন তার প্রিয় ডিশগুলো। প্রিয় ডিশ কি সেটা না জানলে মা-র কাছ থেকে নিতে পারেন সাহায্য! সারাদিন অফিস শেষে ঘরে ফিরে আপনার আয়োজন দেখে আপনার বাবার মনে যেই আনন্দ হবে তা হয়ত লাখ টাকা খরচ করেও দিতে পারবেন না কখনো।
৪) ফুলের তোড়া দিন
কিংবা ধরুন সকালবেলা উঠে কোন ফুলের দোকানে গিয়ে নিজের ডিজাইন-এ বানিয়ে নিন একটি তোড়া। বাবার অফিসে গিয়ে কাউকে দিয়ে বাবা অফিস পৌছানোর আগেই পাঠিয়ে দিন বাবার ডেস্কে! সারপ্রাইজ! সারপ্রাইজ! ফুলের সাথে ছোট কার্ডে আপনার হাতে লেখা “বাবা ভালোবাসি” মন ভরিয়ে দিবে তার সন্দেহ নেই!
৫) গিফট
অনেকদিন ধরে বাবা কিনতে চাচ্ছেন এমন যদি কিছু থাকে , যদি আপনার সামর্থের মধ্যে হয় কিনে দিতে পারেন বাবাকে। সেটা হতে পারে পারফিউম বা বাবার প্রিয় ব্রান্ড-এর ঘড়ি। কিনে দিতে পারেন বাবার প্রিয় কোন বই, বা প্রিয় শিল্পীর গানের সিডি। অনেকের নানাধরণের কালেকশনের শখ থাকে। বাবার এমন কিছু শখ থেকে থাকলে এক্সক্লিউসিভ কিছু খুঁজে বের করতে পারেন তার কালেকশনের জন্য!
৬) বাবার বন্ধুদের দাওয়াত দিন
এবার বাবা দিবস নিয়ে একটা মাস্টার প্লান-এর কথা বলবো। আপনার দিন কাটে বন্ধু বান্ধবের সাথে, আর বাবার? ভাবুনতো বাবার সেই বয়সটার কথা যে বয়সটা আপনি এখন কাটাচ্ছেন। বাবার সেই কফি হাউজ-এর দিনগুলো আজ আর নেই। একটা বয়সের পর মানুষ ব্যস্ত হয়ে যায়। জীবনের নিয়েমে, হয়তো আপনাকে বড় করতে গিয়ে , আপনার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে করতে এখন বাবার কাছের বলতে সংসারই সব। কিন্তু এই সেই সোনালী দিনের স্মৃতি কি কখনো ম্লান হয়? বুকের ভেতর এক “গোপন ব্যথা” সে ব্যথা থাকে, যত পুরনোই হোক। হঠাৎ করে সেই পুরনো বন্ধুদের দেখা পেতে কি ভালোই না লাগবে তার! আর সেই প্ল্যান-টা যদি হয় আপনার করা হয়! বাবার জন্য সেটা হবে শ্রেষ্ঠ উপহার আপনার তরফ থেকে। তাহলে দেরি না করে শুরু করে দিন প্লানিং। বাবার পুরনো বন্ধুদের যাদেরকে সম্ভব দাওয়াত করুন। প্লান করে ফেলুন বাবার জন্য একটি অন্যরকম সন্ধ্যা। পুরনো আমেজে ফিরিয়ে নিন প্রিয় বাবাকে, হোক না তা কয়েক ঘন্টার জন্যই।
হয়তো ভাবছেন অনেক ঝামেলা হবে, অনেক সময় লাগবে আয়োজন করতে, ভাবুন একবার বাবা তার পুরোটা জীবনের সবটা সময় নির্দ্বিধায় ব্যয় করে ফেলেছে আপনার পিছনে। এতোটুকু কি তার পাওনা নয়? সাজগোজের সব পাঠক-পাঠিকার বাবারা যেন একগাল হাসি নিয়ে ঘুমাতে যেতে পারেন ছেলে মেয়ের সাথে কাটানো এক অসাধারণ দিন শেষে -সেই কামনায় শেষ করছি আজকের লেখা।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক