আয়োডিন মানব শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। থাইরয়েডগ্ল্যান্ডের কাজ ঠিকঠাক হয়ার জন্য এই খনিজউপাদানটি সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারনা থাকা দরকার। আমাদের মানব শরীরের বৃদ্ধি ও বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাইরয়েড নামক গ্ল্যান্ড। আপনার শরীরে যদি আয়োডিনের অভাব হয় তাহলে আপনার মধ্যে নিম্ন লিখিত লক্ষনগুলি দেখা দিতে পারে-
- ক্লান্তি
- ঝিমুনি আসা
- উচ্চ কোলেস্টেরল
- বিষণ্ণতা
- থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়াসহ আরও অনেক কিছু ।
[picture]
আর গর্ভবতী মায়েদের যদি এই আয়োডিনের সমস্যা হয় তাহলে শিশুর জন্মের সময়ও জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও আমাদের দেশের ৩৩% মানুষ আয়োডিনের ঘাটতি জনিত সমস্যায় রয়েছেন। ২০০৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিশুদের মধ্যে ৪% ও মহিলাদের মধ্যে ৪.৫% আয়োডিন স্বল্পতায় ভুগছেন। আপনি সঠিক মাত্রায় আয়োডিন গ্রহণ করছেন কি না তা জানা যায় প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত আয়োডিনের পরিমাণ এর পরীক্ষা থেকে। আমরা খাবারের মাধ্যমে যে আয়োডিন গ্রহন করি তার ৯০% প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বের হয় । প্রস্রাবে আয়োডিনের মাত্রা জানলে জানা যাবে যে , আমরা সঠিক পরিমাণে আয়োডিন গ্রহন করছি কিনা। প্রতি লিটার প্রস্রাবে আয়োডিনের গড় মাত্রা যখন ১০০-২০০ মাইক্রোগ্রাম হবে তার মানে হল আপনার শরীরে কোন ঘাটতি নেই। প্রস্রাবে আয়োডিনের গড় মাত্রা গড় আয়োডিন সেবন শরীরে আয়োডিনের পুষ্টিগত অবস্থা-
(মাইক্রোগ্রাম/লিটার) (মাইক্রোগ্রাম/লিটার)
- <২০ <৩০ আয়োডিনের চরম ঘাটতি
- ২০-৪৯ ৩০-৭৪ মাঝারি পর্যায়ের ঘাটতি
- ৫০-৯৯ ৭৫-১৪৯ স্বল্পমাত্রার ঘাটতি
- ১০০-১৯৯ ১৫০-২৯৯ আদর্শ (সঠিক) মাত্রায় আছে
- ২০০-২৯৯ ৩০০-৪৪৯ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আছে ।
প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ১৫০মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন গ্রহণ করাই যথেষ্ট। তবে কোন খাবারগুলিতে আয়োডিন আছে তা জানা থাকলে আপনি সহজেই আপনার খাদ্য তালিকায় আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারবেন। আসুন জেনে নিই, সেসব খাবারের নাম যাতে আয়োডিন রয়েছে-
(১) হিমালায়ান লবন
হিমালয়ান সল্ট আয়োডিনযুক্ত লবন হিসেবে খ্যাত। সাধারণ লবনে যে পরিমান আয়োডিন থাকে তার চেয়ে বেশি আয়োডিন থাকে এই লবনে। .০৫ গ্রাম হিমালয়ান সল্ট ২৫০ গ্রাম আয়োডিন এর উৎস। তাই লবন কেনার সময় আয়োডিনের পরিমান দেখে লবন কিনুন ।
(২) আলু
গোল আলু আয়োডিনের একটি ভালো উৎস। সিদ্ধ আলু শুধু আয়োডিনেই সমৃদ্ধ নয় বরং এর ক্যালরিও কম থাকে। মাঝারি আকারের একটি সিদ্ধ আলুতে ৬০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন থাকে।
(৩) সামুদ্রিক শৈবাল
সামুদ্রিক শৈবালে প্রচুর পরিমানে আয়োডিন থাকে। আপনার প্রতিদিনের আয়োডিনের চাহিদা পুরণে সামুদ্রিক শৈবাল চমৎকার একটি খাদ্য উপাদান । আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ৭ গ্রাম শুষ্ক সামুদ্রিক শৈবালে আয়োডিন আছে ৪,৫০০ মাইক্রোগ্রাম।
(৪) পাউরুটি
দিনের আয়োডিনের প্রয়োজনীয়তা মেতাতে পাউরুটি একটি উৎস হতে পারেন। মাত্র ২ স্লাইস সাদা পাউরুটিতে ৪৫ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন রয়েছে যা আপনার আয়োডিনের দৈনিক চাহিদার ৩০% পূরণ করতে পারে।
(৫) দুধ
দুধ ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি উৎস। মাত্র ১কাপ দুধে ৫৬ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন বিদ্যমান। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়োডিনের প্রয়োজনটা মিটাতে প্রতিদিন দুধ পান করা আবশ্যক।
(৬) গলদা চিংড়ি
গলদা চিংড়ি আয়োডিনের একটি দারুন উৎস। একটি ১০০গ্রাম গলদা চিংড়িতে ১০০ গ্রাম আয়োডিন রয়েছে । যদিও গলদা চিংড়ি একটি দামি মাছ যা সবার কেনার সাধ্য থাকে না সব সময়।
(৭) স্ট্রবেরি
প্রতিটা স্ট্রবেরি তে রয়েছে ১৩ গ্রাম আয়োডিন। এই সুস্বাদু ফলটি সম্ভব হলে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন সব সময়।
(৮) দই
টক দই আপনার আয়োডিনের চাহিদা পুরণে অনেকখানি সাহায্যও করতে পারে। ১ কাপ টক দই আপনার শরীরে ৯০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন জোগাতে পারে।
(৯) সিদ্ধ ডিম
ডিমে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় আয়োডিন পাবেন। প্রতিটা সিদ্ধ ডিমে ১২ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন সরবারাহ করতে পারে। এছাড়া ডিম ভিটামিন এ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি ভালো উৎস।
(১০) টুনা মাছ
আপনি ক্যানে পাবেন এই মাছটি। ক্যানড টুনায় অনেক বেশি আয়োডিন থাকে। ৩ আউন্স এর একটি ক্যানে ১৭ আউন্স আয়োডিন থাকে।
(১১) ভুট্টা
ভুট্টা আয়োডিনের বিশাল উৎস। পপ কর্ণ বা স্যু্পের সাথে আপনি ভুট্টা খেতে পারেন। ১/২ কাপ ভুট্টায় আপনি পাবেন ১৪ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন।
তাই আজ থেকেই আপনার খাবার তালিকায় নজর রাখুন যে সঠিক পরিমান আয়োডিন প্রতিদিন আপনার পরিবাবের সবাই গ্রহণ করছে কি না।
ছবি – ফুডহেলথ ডট কম
লিখেছেন – রোকসানা আকতার