তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীকের ঝামেলার শেষ নেই। কসমেটিক নির্বাচনে একটু এদিক সেদিক হলেই ব্রণের মতো জেদি সমস্যায় পড়তে হয়। তাই তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে ও তৈলাক্ত ত্বকে মেকাপ ঠিক রাখতে আপনাকে আজ সহজ কিছু পণ্য ব্যবহারে কথা বলব। যা ত্বকে আপনার মেকাপ অনেক দীর্ঘ সময় সুন্দর আর সাবলীল রাখবে আর সাথে সাথে আপনার তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিবে। আসুন জেনে নিই তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অপরিহার্য কসমেটিক সম্পর্কে-
[picture]
(১) প্রাইমার
আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তবে আপনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল প্রাইমার। আপনার মেকাপ দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রাইমার ব্যবহার আবশ্যক। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আপনার মেকাপ সহজেই তেলতেলে হয়ে ওঠে আর গলে যায় মুখে। তাই ফাউন্ডেশন লাগানোর আগে অবশ্যই মুখে প্রাইমার লাগাবেন, এটা আপনার মেকাপের স্থায়িত্ব বাড়াবে । এটা আপনার হাই লাইটার বা ব্লাশও হতে পারে। প্রাইমার এগুলিকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। যা প্রয়োজন তা হল অল্প একটু প্রাইমার আপনার ত্বকে লাগিয়ে ত্বক ফ্ললেস করে তোলা প্রথমেই।
(২) ক্লিঞ্জার
যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা প্রায়শই যে ভুল করে তা হল, তারা এমন সব ফরমুলা পছন্দ করে যা কদিনের মধেই তাদের ত্বক নিস্প্রাণ আর শুষ্ক করে ফেলে। এসব ফরমুলা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয় আর এজন্যই আপনার তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে হালকা মানের অয়েল ফ্রি ক্লিঞ্জার বাছাই করা উচিত। যার ভালো স্ক্রাবিং শক্তি থাকবে ও ত্বকের আসল সৌন্দর্য বের করে আনবে। ক্লিঞ্জার ত্বকের লোমকুপ বন্ধ হওয়া রোধ করে আর বাতাস চলাচলে সাহায্যও করে।
(৩) ফেসিয়াল মাস্ক
ফেসিয়াল মাস্ক মূলত তৈরি করা হয় তৈলাক্ত ত্বকের জন্য। এই পণ্যটি আপনার ত্বকে অতিরিক্ত তেল বের হওয়া রোধ করে। তবে আপনি যদি বাজারের রাসায়নিক পণ্য দিয়ে রূপচর্চা করতে না চান তবে বাসায় কোন ঘরোয়া প্যাক তৈরি করে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। এছাড়া স্কিন কেয়ারের ক্ষেত্রে শিট মাস্কগুলো বেশ ভালো কাজ করে।
(৪) স্ক্রাব
স্ক্রাব আপনার তৈলাক্ত ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। এছাড়া স্ক্রাব আপনার ব্লাক হেডস দূর করে, পোর পরিষ্কার করে ও ত্বকের অন্যান্য খুঁত দূর করে। আপনার পছন্দের স্ক্রাব অল্প হাতে নিয়ে আলতো করে ২ মিনিট মুখে ঘষে ঘষে লাগান। কিছুক্ষন রাখুন আর তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(৫) স্টিমার
আপনার তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে স্টিমার খুব দরকারী। এটি আপনার ত্বকের পোর খুলতে সাহায্য করে আর ত্বকের ময়লা বের করে আনতে সাহায্য করে। আপনার বাড়ীতে স্টিমার না থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। একটি বাটিতে গরম পানি নিয়ে তাতেও স্টিম নিতে পারেন।স্টিম নেয়ার সময় টাওয়েল দিয়ে মাথা ঢেকে দিবেন যাতে গরম হাওয়া বের হয়ে যেতে না পারে।
(৬) পানি নিরোধক কাজল ও আই লাইনার
আপনার ত্বক যদি হয় তৈলাক্ত তবে আপনি অবশ্যই পানি নিরোধক কাজল আর আই লাইনার ব্যবহার করবেন না হলে আপনার তৈলাক্ত ত্বকের চোখের পাতায় নিয়মিত আইলাইনার তেলতেলে হয়ে উঠে যেতে পারে।
(৭) অয়েল ফ্রি কমপ্যাক্ট
অয়েল ফ্রি কমপ্যাক্ট ত্বক চকচকে রাখার সাথে সাথে ত্বকের গ্রিজিনেস কমিয়ে ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করে, আপনি লুজ পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন । আপনাকে এমন কমপ্যাক্ট নিতে হবে যা হালকা এবং সহজে ত্বকে মিশে যায় আর ত্বকে ম্যাট ফিনিশ দেয়। আরেকটি ভালো দিক হল এই ধরনের হালকা কমপ্যাক্ট আপনার ত্বকের পোর বন্ধ করে দেবে না । যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের উচিত non-comedogenic products ব্যবহার করা যাতে পোর বন্ধ না হয় ।
(৮) মিনারেল ফাউন্ডেশন
যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের বেছে নিতে হবে হালকা ফাউন্ডেশন যা পোর বন্ধ করবে না। মিনারেল ফাউন্ডেশন হালকা , অয়েল ফ্রি আর এতে আপনি পাবেন ম্যাট ফিনিস। এতে রয়েছে এস পি এফ যা রোদে পোড়া থেকে ত্বক রক্ষা করবে। মিনারেল ফাউন্ডেশন সংবেদনশীল ও তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও উপজুক্ত ।
(৯) অয়েল ব্লটিং সীট
অয়েল ব্লটিং সীট তৈলাক্ত ত্বকের মেকআপ করতে একটি অনন্য পণ্য । যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা অনেক বেশি কমপ্যাক্ট পাউডার ব্যবহার করেন ত্বক ম্যাট করার জন্য। কিন্তু এতে ত্বকের পোর বন্ধ হয়ে যায়। তাই অয়েল ব্লটিং সীট সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি ত্বকের তেল শুষে নেয় তৎক্ষণাৎভাবে আর ত্বক উজ্জ্বল শাইনি করে তলে। এটি আপনার মেকাপের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না । এগুলি নরম আর সিল্কি যা ব্যবহারও অনেক আরামদায়ক আর সহজ।আপনার ত্বকে ‘টি- জোন’ এর বা অয়েলি জায়গাগুলিতে লাগিয়ে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়াতে পারবেন অনায়াসেই।
(১০) মেকাপ সেটিং স্প্রে
আপনার তৈলাক্ত ত্বকে যদি সহজেই ফাইন্ডেশন নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আপনি একটি মেকাপ সেটিং স্প্রে কিনতে পারেন, যা আপনার মেকাপকে দিনভর ঠিক রাখবে। আপনি শুধু কয়েক পাম্প আপনার মুখের ত্বকে স্প্রে করবেন । ব্যাস, এতেই আপনার ত্বক থাকবে দিনভর অয়েল ফ্রি আর ফ্রেশ।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আপনার রূপচর্চার জন্য ব্যবহৃত পণ্য সামগ্রীতে উপরের পণ্যগুলি খুবই দরকারী যা আপনার ত্বকের যত্নেও মেকাপ ঠিক রাখতে আপনাকে অনেক বেশি সাহায্যও করবে।
ছবি – অয়লিস্কিনকজেস ডট কম
লিখেছেন – রোকসানা আকতার