মসুর ডাল একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল। প্রাচীন কাল থেকে মসুর ডাল তাই খাবারের পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও বিভিন্নভাবে ব্যাবহার করা হয়ে আসছে। একটা সময় আমাদের দাদি নানিরা এই ডাল দিয়েই সারতেন তাদের রুপচর্চা। আর তাদের স্কিন ও ছিল কিন্তু দেখার মতন। কারণ তারা আমাদের মতো এটা সেটা আর কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্টের হাতে নিজেদেরকে সপে দেননি। তারা প্রাকৃতিক উপাদানগুলোকে বেছে নিয়ে ছিলেন তাদের টানটান উজ্জ্বল ত্বকের হাতিয়ার হিসেবে।
[picture]
আমার নিজের মা’য়ের কথাই যদি বলি। আম্মার বয়স ৫৫+। কিন্তু তার উজ্জ্বল টলটলে স্কিন দেখলে এখনো হা করে তাকিয়ে থাকে সবাই! আমার বান্ধবিরা তো রীতিমতো আম্মাকে হিংসা করে! অথচ আমার আম্মাকে কখনোই দেখিনি মুখে সাবান পর্যন্ত লাগাতে। সারা জীবনই তিনি শুধু এই মসুরের ডাল বাটাই ব্যবহার করে গেলেন! অথচ তার স্কিন এখনো উঁনিশ কুঁড়ির মেয়েদের মতো টানটান আর ব্রাইট। এই মসুরের ডাল দিয়ে এমন কয়েকটি ফেসপ্যাক বানানো যায় যা ব্যাবহারে ত্বকের মৃতকোষ ঝরে যাবে, ত্বকের স্মুথনেস বাড়বে, মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর হবে এবং মুখের উজ্জ্বলতা বাড়বে কয়েক শেড এবং সাথে সাথে টানটান-ভাব বাড়বে অর্থাৎ স্কিনের ঝুলে পড়া ভাব কমে যাবে একদম।
(১) মসুর ডাল ও মধুর প্যাক
আমাদের মধ্যে যাদের স্কিন ড্রাই মসুর ডাল তাদের জন্য হতে পারে দারুণ একটা সমাধান। মসুর ডাল আর মধু স্কিনের মৃতকোষ দূর করে স্কিনে সফটনেস আনবে খুব এফেক্টিভভাবে। মধু আর মসুর ডাল এই উভয় উপাদান স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুন কাজ করে। ফলে স্কিনের স্মুদনেস বাড়ার সাথে সাথে উজ্জ্বলতাও বাড়বে। এর জন্য যা করতে হবে-
- এক চা চামচ মধু আর এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে পরিস্কার মুখে লাগাতে হবে।
- ১৫ মিনিট পরে হালকা হাতে ঘষেঘষে তুলে ফেলতে হবে।
- তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
(২) মসুর ডাল, টক দই আর বেসনের উপটান
যদি কেউ চায় ত্বকের রঙ ভীষনভাবে উজ্জ্বল করতে, কার্যকরভাবে ব্রণ ও সান ট্যান দূর করতে তাহলে এই উপটান তাদের জন্যই। সাথে সাথে এটি স্কিনকে করবে খুব স্মুদ এবং লাবন্যময়। এটি বানাতে যা করতে হবে হবে তা হল-
- সমপরিমান মসুর ডাল বাটা, টক দই আর বেসন এক সাথে মিশাতে হবে।
- এর সাথে নিতে হবে এক চিমটি হলুদ গুড়া।
- ভালো করে মিক্স করে মুখে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
- একদম শুকিয়ে গেলে হাত পানিতে ভিজিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই প্যাকটি বডি ফেয়ারনেস বাড়াতেও সমানভাবে কাজ করে।
(৩) দুধ ও মসুর ডালের এক্সফলিয়েটর
যারা সিম্পল কিন্তু কার্যকর এক্সফলিয়েশন পছন্দ করেন, মসুর ডাল তাদের জন্য দারুন এক উপাদান। মুখের মৃতকোষ সরিয়ে মুখের ত্বক উজ্জ্বল আর স্মুদ করতে মসুর ডালের জুড়ি মেলা ভার। সেই সাথে দুধের ল্যাকটিক এসিড ত্বককে করে কোমল ও ফর্সা।
- মসুর ডাল বেটে এর সাথে এক চা চামচ দুধ মিশিয়ে কোমল হাতে মুখে মুখে ঘষে ঘষে ম্যাসাজ করতে হবে ২/৩ মিনিট।
- এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ভালো করে। খেয়াল রাখবেন মুখে যেন একটুও লেগে না থাকে।
(৪) মসুর ডালের হেয়ার রিমুভাল প্যাক
এই প্যাকটি একবারেই যে সব অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলবে তা নয় কিন্তু রেগুলার ব্যবহারে অবাঞ্ছিত লোমের গ্রোথ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দিবে এবং মুখে থাকা অবশিষ্ট লোমগুলোকে একদম তুলে ফেলবে সেই সাথে ব্রণের দাগ হালকা করবে এবং ব্রাইটনেস বাড়াবে।
- এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা, এক চা চামচ মিহি করা চালের গুড়া, এক চা চামচ বেসন আর ২/৩ ফোটা আমন্ড অয়েল এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে।
- মিনিট দশেক পরে শুকিয়ে আসলে আলতো করে ঘষেঘষে তুলে ফেলতে হবে।
- এই একই প্যাক বডির আনওয়ান্টেড হেয়ার রিমুভ করার কাজেও ব্যবহার করা যায়।
(৫) মসুর ডাল ও গাঁদা ফুলের প্যাক
গাঁদাফুল আমাদের দেশে খুব সহজলভ্য একটি ফুল। এটি শুধু যে বাগানের সৌন্দর্য্যই বাড়ায় তাই না সাথে সাথে এতে আছে স্কিনের যত্নের নানা উপাদান।
- মসুর ডাল বাটা ও গা্ঁদাফুল এর পাপড়ি বাটা এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে এটি স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়াবে।
- যদি চান এর সাথে স্কিনে আসুক গোলাপি আভা তাহলে মিশিয়ে নিন এক চা চামচ গোলাপের পাপড়ি বাটা।
- স্কিনের প্রেমে পড়ে যাবেন নির্ঘাত।
ছবি – রিডার্স ডাইজেস্ট ডট কম
লিখেছেন – সুমনা ফাল্গুনী