ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদানের উপর আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্তে নির্ভর করে থাকি । কেননা এ সকল উপাদানে ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর এমন কোন পদার্থ থাকে না এবং এগুলো ব্যবহারের কোন পার্শপ্রতিক্রিয়াও নেই । কিন্তু এ সকল প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ত্বকের সমস্যা দূর করা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে সমস্যা দেখা দিলে অতিসত্ত্বর অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। অনেক সময় মারাত্মক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে এ সকল ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সময় মত সঠিক চিকিৎসা না নিলে পরবর্তীতে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
১. আঁচিল
শরীরে যে কোন স্থানে আঁচিল থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু আঁচিল যদি সম্প্রতি আকার পরিবর্তন করে বা আঁচিলের রঙ পরিবর্তিত হয় তাহলে তা অবশ্যই বিপদের কারণ হতে পারে। কারণ এটি মেলানোমা বা ত্বকের ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
২. ক্ষত
হাতে পায়ে সামান্য কেটে বা ছড়ে গেলে সাধারনত অ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে নিলেই কিছুদিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যদি কোন ক্ষত সপ্তাহ বা মাস চলে গেলেও না সারে তাহলে দ্রুত ত্বক বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে হবে। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও ভেতরে ত্বকের মৃত কোষগুলো আপনার অজান্তেই ত্বকের ক্যান্সারের রূপ ধারণ করতে পারে।
৩. ফোলা ত্বক
ত্বকের কোন অংশ যদি আঘাত প্রাপ্ত হয় তাহলে হালকা ফুলে যেতে পারে যা পরবর্তীতে ঠিকও হয়ে যায়। কিন্তু কোন আঘাত ছাড়াই যদি ত্বকের কোন অংশ দীর্ঘদিন যাবত ফোলা অবস্থায় থাকে তাহলে তা টিউমার আক্রান্ত হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে তা অনেক সময় ক্যান্সারে পরিবর্তিত হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক
ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশেষ করে শীতকালে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এ সময়ে ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। তবে ত্বক যদি অতিরিক্ত শুস্ক হয়ে গিয়ে লাল রঙ ধারণ করে এবং ব্যথা অনুভব হয় তবে তা থেকে একজিমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিলে শুরুতেই এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৫. অতিরিক্ত ঘাম
গরমে কাজ করলে বা ব্যায়াম করার পর স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশী ঘাম হয়ে থাকে। তবে অন্য সময়ও অতিরিক্ত ঘাম হলে তা অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। অনেক সময় দেহে হরমোনের বিশেষ করে থাইরয়েড মাত্রা কম বেশি হওয়ার কারণেও এরকম হয়ে থাকে। এছাড়া ডায়াবেটিস হলেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। তাই আপনার যদি মনে হয় আপনি মাত্রাতিরিক্ত ঘামছেন তাহলে অতিসত্ত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৬. নখে পরিবর্তন
ইদানিং যদি আপনার নখ পাতলা হয়ে ভাঙতে শুরু করে, নখের চারপাশের চামড়া শুকিয়ে মরা কোষ উঠতে থাকে কিংবা নখের রঙ পরিবর্তন হয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায় তাহলে তা আরথ্রাইটিস বা গেটে বাতের অন্যতম লক্ষণ। এছাড়া আপনার দেহে যদি ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় বিশেষ করে আয়রণের অভাব পরিলক্ষিত হয় তাহলেও এ লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। অভিজ্ঞ ডাক্তার এ সকল পরিবর্তন পরীক্ষা করে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় বলে দিতে পারেন।
৭. মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়া
প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক ধরে নেয়া হয়। এছাড়া প্রসব পরবর্তীকালে হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও একটু বেশি চুল ঝরতে পারে। কিন্তু এসব কারণ ছাড়াই যদি অতিরিক্ত চুল পড়তে থাকে তাহলে দ্রুত ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। আপনার এটুকু সতর্কতা অনেক মারাত্বক রোগের হাত থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
ছবি – পিক্সাবে ডট কম