রূপচর্চা ও স্বাস্থ্যগুণে পরিপূর্ণ জবা - Shajgoj

রূপচর্চা ও স্বাস্থ্যগুণে পরিপূর্ণ জবা

hibiscus-5-conseils-d-entretien

জবা ফুল আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি ফুল। এই ফুলের ব্যবহার হিসেবে আমরা  চুলের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেই । কিন্তু এই ফুলের যে স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে এবং ত্বকের জন্য উৎকৃষ্ট তা অনেকেরই অজানা । এই ফুলে রয়েছে ভিটামিন সি ও এ, আলফা হাইড্রোক্সিল এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা চুলের উপকারের সাথে সাথে স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে ও ত্বক সুন্দর করে । আসুন জেনে নিই জবা ফুলের গুণাবলি সম্পর্কে ।

জবা ফুলের স্বাস্থ্যগুণ

Sale • Oil Control, Dry & Frizzy Hair, Hair Oil

    (১) বমি করতে চাইলে

    হঠাৎ কোন কুখাদ্য খাওয়া হয়ে গেলে , যেটা খেতে অভ্যস্থ নয় যেমন অজান্তে মাছি , চুল অথবা এই ধরণের কোন জিনিস পেটে গিয়েছে , এর পরিণতিতে বমির উদ্রেগ হয় । অথচ বমি হচ্ছে না !এমন অবস্থায় ৪/৫ টি জবা ফুল নিয়ে বোটার সাথে যে সবুজ ক্যালিকাস অংশ থাকে , এই অংশটাকে বাদ দিয়ে ফুল অংশটাকে পানি ও চিনি পরিমাণ মতো দিয়ে চটকে শরবত করে দিনে ২ বা ১ বার খেলে বমি হয়ে যাবে ।

    [picture]

    (২) ঘন ঘন প্রসাব নির্গমন

    যারা প্রচুর পরিগমাণে পানি পান করেন আবার ঘন ঘন প্রসাব করেন অথচ ডায়বেটিস নেই তারা জবা গাছের ছালের রস এক কাপ পানির সাথে পরিমাণ মতো চিনিসহ মিশিয়ে ৭/৮ দিন খেলে উপকার পাবেন ।

    (৩) অনিয়মিত মাসিক

    যারা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা তিনটি পঞ্চমুখী জবা ফুলের কুঁড়ি ও ৩/৪ ইঞ্চি দারুচিনি  আধা অথবা এক গ্রাম এক সঙ্গে বেটে গ্লাস পরিমান পানি মিশিয়ে শরবত করে কয়েকদিন খেতে পারেন। তবে সকালে কিছু খাওয়ার পর খেতে হবে । মাসিকের সময়ে ৩/৪ দিন খেতে হবে মাসিক স্বাভাবিক হওয়া অবধি দিনে একবার করে ।

    (৪) টাক পড়া রোগ

    চুল স্বাভাবিক আছে অথচ ফাঙ্গাসে কিছু জায়গায়  চুল উঠে টাক হয়ে গেছে  এ অবস্থায় জবা ফুল বেটে  ঐ স্থানে নিয়মিত লাগালে কয়েক মাসের মধ্যে চুল গজাবে । ১ বা ২ টা ফুল বেটে ৭ থেকে ৮ দিন যে  কোন সময় লাগাতে হবে । এবং ২ বা এক ঘন্টা লাগাতে হবে । অথবা যতক্ষন সম্ভব রাখতে হবে ।

    (৫) চোখ ওঠা

    চোখের কোনে ক্ষত হয়ে পুঁজ পড়ছে । সে ক্ষেত্রে জবা ফুল বেটে চোখের ভিতরটা বাদ দিয়ে চোখের উপর ও নিচের পাতায় গোল করে লাগিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যাবে । দিনের যে কোন সময় ১ বা ২ টা ফুল বেটে ৭/৮ দিন লাগাতে হবে এবং এক ঘন্টা রাখতে হবে ।

    (৬) হাতের তালুতে চামড়া ওঠা

    শীতকালে হাতের তালুতে চামড়া উঠে খস খস হয়ে গেলে জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায় । দিনে দুই বা তিন বার ১/২ ফুল হাতের মধ্য ঘষে ঘষে লাগাতে হবে । যতক্ষণ সম্ভব লাগিয়ে রাখতে হবে ।

    413c2b0f077af82ea2b872f504779816

    (৭) জ্বর নিয়ন্ত্রণ করে

    ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রমণ ! কিছু জবা ফুলের পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে  চা তৈরি করে পান করুন । জ্বরের সময় জবা ফুলের চা শীতল কারক হিসেবে কাজ করে ।

    (৮) মুত্রনালির সংক্রমন প্রতিরোধ করে

    এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিন এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, জবা ফুলের জীবাণু নাশক ও ছত্রাক নাশক উপাদান ফেনিন্ডা আয়ালিকান্সের বিরুদ্ধে কাজ করে । জবা ফুলের পুষ্টি উপাদান মুত্রনালির ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া দূর করে এবং তা সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেয় । জবা ফুলের চায়ে ফ্লাভনয়েড থাকে যা ইকোলাই ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে ।

    (৯) ব্যথা কমায়

    শরীরে ব্যথা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে জবা ফুল । এজন্য ৫ টি লাল জবার পাতা ও ৫ টি পাপড়ি নিয়ে পানিতে ৩ থেকে ৫ মিনিট ফুটনোর পর মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন । আধা ঘন্টা পর এটি পান করুন । ২১ দিন পর্যন্ত এই মিশ্রণটি পান করলে শরীরে ব্যথা কমবে ।

    (১০) রক্তশূন্যতায়

    শরীরে লৌহের ঘাটতি কমায় লাল জবা । লাল জবার পাপড়ি পানিতে সিদ্ধ করে পান করুন । এছাড়াও জবা ফুলের পাপড়ি সিদ্ধ করে পান করলে বিষণ্ণতা দূর হয় ।

    ত্বকের যত্নে জবা ফুল

    (১) ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও বলিরেখা দূর

    জবা ফুল রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন । তিন চামচ জবা ফুলের গুঁড়ো , চার চামচ টক দই ও এক চামচ চন্দনের গুঁড়ো এক সাথে মিশিয়ে নিন । সবগুলো উপকরণ দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন । এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন । জবা ফুল ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ।

    লাল জবার পাপড়ি রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন । প্রতিদিন দুধ না হয় কমলা রসের সাথে মিশিয়ে মুখে লাগান । মুখের উজ্জ্বলতা বাড়বে ও বলি রেখা কমবে ।

    (২) শুষ্ক ত্বকের  নিরাময়ে

    নারিকেল তেল বা তিলের সঙ্গে জবার পাপড়ি জ্বাল দিন । এরপর ঠান্ডা হলে শুষ্ক ত্বকে লাগান । এটি শুষ্ক ত্বকের নিরাময় করে এবং যেকোন ধরণের ফাটা দূর করে ।

    (৩) ত্বকের টক্সিন ও অতিরিক্ত তেল কমায়

    সপ্তাহে ২ থেকে ৫ দিন ৬ টি জবার পাপড়ি পেস্ট করে এর সঙ্গে চালের গুঁড়ো ও  পানি মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন । এই প্যাকটি সব ধরণের ত্বকের টক্সিন ও অতিরিক্ত তেল থেকে মুক্তি দেয় ।

    চুলের যত্নে জবা

    (১) চুল ঘন করে

    জবা ফুল ও কারি পাতার পাউডার নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিন । এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করুন । চুল পড়া কমে নতুন চুল গজাবে এবং ঘন হবে ।

    ৫ চামচ আমলকি পাউডার নিন । তাতে ৫ চামচ জবা পাতা বেটে মিশিয়ে নিন । এই মাস্কটি চুলে দিয়ে রাখুন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট । এরপর ধুয়ে ফেলুন । আমলকি পাউডার এর পরিবর্তে আমলকি বাটা ব্যবহার করতে পারেন । এভাবে মাসে ২ থেকে  ৩ বার ব্যবহারে চুল হবে মজবুত ও ঘন ।

    ৫ বা ৬ টি পাতা বেটে নিয়ে তাতে দুই টেবিল  চামচ মধু ও চার টেবিল চামচ টক দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন । চাইলে এর সাথে দুধ ও মেশাতে পারেন । মিশ্রণটি ৪০ মিনিট মাথায় রেখে ধুয়ে ফেলুন । এই মাস্কটি ব্যবহারে চুল মোলায়েম হয় ও চুল পড়া কমে ।

    (২) খুশকি সমস্যা রোধে

    খুশকি কমাতে জবা ফুল দারুন কার্যকর । প্রথমে অল্প পরিমাণ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন । এরপর এর সাথে পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল ও জবা ফুলের তেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন । মিশ্রণটি ভালো করে পুরো মাথায় লাগান । তা শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । সপ্তাহে তিন দিন করুন । দেখবেন খুশকির সমস্যা দূর হয়ে গেছে ।

    এক মুঠো জবা পাতা আর সমপরিমান মেহেদি পাতা পেস্ট করে নিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট । এরপর ধুয়ে ফেলুন ।

    ১০ চা চামচ জোজবা তেলের সাথে অর্ধেক চা চামচ করে জবা , গাদা এবং তুলসি তেল মিশিয়ে চুলে ব্যাবহার করুন । ২০ মিনিট রেখে মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন ।

    FHG3O40HMMFC8LF.MEDIUM

    (৩) স্কাল্পের চুলকানি কমায়

    জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ , সি যা স্কাল্পের চুলকানি কমায় । এছাড়া স্কাল্পের যেকোন সমস্যা রোধে জবা ফুলের বিকল্প নেই । অল্প পানিতে জবা ফুল সিদ্ধ করে নিন । সেই পানি ঠান্ডা হলে চুলে লাগাতে হবে । এর ফলে দেখবেন স্কাল্পের চুলকানি কমে গেছে ।

    (৪) অকালে চুল পাকা রোধ

    বর্তমানে বায়ু দূষণের কারণে অনেকেরই চুল অসময়ে পেকে যায় । এই সমস্যা সমাধানে জবা ফুল কার্যকরী । প্রথমে কয়েকটি জবা ফুল বেটে নিতে হবে । এর সাথে টক দই , জবা ফুলের তেল এবং এই পেস্ট মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে । কিছু সময় রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে । নিয়মিত এই ট্রিটমেন্ট করলে অকালে চুল পাকা রোধ হবে।

    (৫) চুলের আদ্রতা বজায় রাখে

    জবা ফুলের তেলের সঙ্গে অল্প পরিমাণে আমলকি পাউডার ও লেবুর রস  মিশিয়ে স্কাল্পে লাগাতে হবে । আধ ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন ।

    (৬) চুলের আগা ফাটা রোধ

    নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলে ২ টি জবা ফুল মিশিয়ে গরম করুন। ফুটাবেন না । এই তেল নিয়মিত চুলের আগায় ব্যাবহার করলে আগা ফাটা সমস্যা কমে যাবে ।

    (৭) মাথা ঠান্ডা রাখতে

    ৫-৬ টি জবা পাতা নিয়ে ২০ বা ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন । তারপর পাতাগুলো পিষে কিছুক্ষণ হাত দিয়ে পানিতে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন । যা থেকে খুব পিচ্ছিল একটা দ্রবণ তৈরি হবে । এই দ্রবণটি মাথায় দিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট । এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল হবে শাইনি ,  কালো এবং মাথা থাকবে ঠান্ডা ।

     জবা ফুলের উপকারিতা  তো জানলেন । তো এবার বাড়ির আঙিনায় আজই লাগিয়ে ফেলুন একটি জবা ফুলের গাছ। এবং জবা ফুলের গুণে সুস্থ থাকুন । চুলকে করুন ঘন , কালো ও ঝলমলে ও ত্বক হোক সুন্দর । তবে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন ফুলটি হতে হবে লাল জবা ।

    লিখেছেন – জোহরা হোসেন

    17 I like it
    0 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort