রমজান মাসে ঈদের ঠিক ২-৩ দিন আগে থেকে চুল আর ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো লেগে পরে। কিন্তু সেটাতে কোনই লাভ হয় না। চুল আর ত্বকের যত্ন নেয়া খুবই ধৈর্য আর সময়ের বিষয়। তাই ঈদের অনেক আগে থেকেই যত্ন করুন। ত্বক, চুলের অন্যান্য যত্ন এখন থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে নিলে ঈদের আগে আপনার ত্বক ও চুল প্রাণহীন দেখাবে না।
চুল ও ত্বকের যত্ন যেভাবে নিতে পারেন
ত্বকের যত্নে করণীয়
সারাদিন রোজা রেখে ত্বক কিছুটা প্রাণহীন হয়ে পড়ে। এ সময় যত্ন নেয়ার সময়টা তাই পাল্টাতে হয়। যেহেতু পানির অভাবে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। তাই ইফতারের পর থেকে শুরু করতে পারেন ত্বকের যত্ন।
১) পানির অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই ইফতারের পর বা নামাজের পর ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে পারেন। মুখে লোশন লাগিয়ে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা থাকুন। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়বে না।
২) এ সময় সব রকমের টোনার জাতীয় প্রসাধন এড়িয়ে চলুন। মেকআপ কম ব্যবহার করুন।
৩) অনেক সময় চোখের নিচে কালো হয়ে থাকে ক্লান্তির কারণে। তাই ঘুম ঠিক সময়মতো দরকার। আলু, টমেটো ও শসার রস লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে কালো দাগ দূর হবে।
৪) ঘুমানোর আগে ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন । আপনার ত্বকের সাথে যেসব ফেইসপ্যাক স্যুট করে সেগুলো ব্যবহার করুন।
৫) এ সময় গরম বেশি থাকে। রোদের তাপে মুখে কালো দাগ হতে পারে । সেসব থেকে বাঁচতে ব্যবহার করতে পারেন লেবুর ফেইস প্যাক। লেবু, মধু আর মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গোলাপ জল আর শসা দিয়ে তৈরি ফেইস প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটি যেকোনো ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
৬) ঠোঁটের আলাদাভাবে যত্ন নিন। কারণ এ সময় ঠোঁট ফেটে যায়। রাতে ঘুমাবার আগে ঠোঁটে বিট রুট আর দুধ একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে ম্যাসেজ করুন । এছাড়া ঠোঁটের যত্নে নারিকেল তেল ম্যাসাজ করতে পারেন ।
৭) গরমে বডি-লোশন ব্যবহার করতে না চাইলে নিয়মিত ত্বকের উপযোগী ভালো কোন সাবান ব্যবহার করুন।
৮) বাড়িতে এ সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকে। রাতে কলা, পাকা পেঁপে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন সাথে মধু নিন এবং মুখে লাগিয়ে ২০ মিন রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল হবে।
৯) কড়া পারফিউমে ত্বকের ক্ষতি হয় অনেক সময়। তাই সেটা ব্যবহার না করাই ভালো।
১০) রমজানে হালকা মেকআপ-এর মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখুন। অথবা মেকআপ না করাই ভালো। ঘর থেকে বের হবার আগে সামান্য প্রেসড-পাউডার লাগাতে পারেন।
১১) রোজায় ঠোঁটে কোন লিপস্টিক বা প্রসাধনী না লাগানোই ভালো।
১২) পারলে ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।
১৩) রোজায় আমাদের ভাজাপোড়া খাওয়া শুরু হয়ে যায়। এসবের খারাপ প্রভাব পরে ত্বকের উপর। হালকা খাবার খাওয়া এ সময়ে সব থেকে ভালো। ইফতারির একটি ভালো খাবার হলো শরবত। তাজা ফল, টক-দই বা দুধ মিশিয়ে শরবত তৈরি করা যেতে পারে। এতে ত্বক শক্তি ফিরে পাবে।
চুলের যত্নে
১৪) সারাদিন পানি পান করা হয় না। এতে অনেকের চুলও পড়ে যায়। ইফতারের পর পানি পান করতে হবে। এছারাও খেজুর, বিভিন্ন শরবত, দই ইত্যাদি পানি জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
১৫) চুলের যত্নে এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। এবং অবশ্যই প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে। এ সময় হুট করে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যায় এবং পানি কম খেতে হয়। এগুলো প্রভাব ফেলে চুলের উপর , চুল পড়ে এবং রুক্ষ হয়ে যায়। সপ্তাহে দু-তিন দিন ইফতারের পর চুলে তেল মালিশ করুন। এতে রক্ত চলাচল ভালো হবে।
১৬) চুল নরম আর উজ্জ্বল করতে টক দই অথবা কলা লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
১৭) মাথায় অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন।
১৮) চুল ফেটে গেলে লেবুর রস লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সারাদিনের রোজা থাকার ক্লান্তি আপনার ত্বক এবং চুলকেও নির্জীব করে ফেলে। তাই এ সময়ে চুল ও ত্বকের যত্ন নেয়া বিশেষ প্রয়োজন।
ছবি- সংগৃহীত: news18.com