নিয়মিত সকাল-রাত দুই বেলা করে ব্রাশ করার পরও মুখের দুর্গন্ধ কমছে না? আপনার প্রয়োজন একটি ভালো মানের মাউথওয়াশ। মাউথওয়াশ হলো ওষুধ সমৃদ্ধ একটি অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ, যা কুলি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। মুখ ও মুখগহ্বরের সংক্রমণ রোধে মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে যখন দাঁত ব্রাশ করা সম্ভব হয় না বা সমস্যা হয়। যেমন- অপারেশনের পর যখন কোনো রোগী পূর্ণ বিশ্রামে থাকে, সে সময় মাউথওয়াশ দাঁত ব্রাশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যান্টিসেপটিক বা অ্যান্টিপ্ল্যাক মাউথওয়াশ মুখের সেসব জীবাণু ধ্বংস করে যার কারণে মুখের ভেতরে প্ল্যাক, মাড়ির প্রদাহ বা মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে। মাউথওয়াশ শুধু কিন্তু মুখের দুর্গন্ধই দূর করে না, একে আরো নানা কাজে ব্যবহার করা যায়। চলুন তাহলে মাউথওয়াশের ভিন্নধর্মী ব্যবহার দেখে নেয়া যাক।
মাউথওয়াশের ভিন্নধর্মী ব্যবহার
পারসোনাল হাইজিন মেনটেইনের মধ্যে মুখ পরিষ্কার রাখা অন্যতম একটি। এ জন্য মাউথওয়াশ বেশ হেল্পফুল। এর রয়েছে আরও কয়েকটি ব্যবহার। চলুন জেনে নেই এ সম্পর্কে।
১) হাত ও পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে
পেঁয়াজ, রসুন, মাছ ইত্যাদি কাটার পর অনেক সময় আমাদের হাতে গন্ধ থেকে যায়। সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুলেও ঐ গন্ধ সহজে যেতে চায় না। এক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী একটি সমাধান হলো মাউথওয়াশ। অল্প কয়েক ফোঁটা মাউথওয়াশ দুই হাতে নিয়ে ভালো করে মেখে হাত ধুয়ে নিন। ব্যস, দুর্গন্ধ গায়েব।
একটি পাতলা রুমাল জাতীয় কাপড় হালকা ভিজিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা মাউথওয়াশ নিয়ে দুই পায়ে ঘষুন, তারপর পা ধুয়ে ফেলুন। পা দীর্ঘসময় দুর্গন্ধমুক্ত থাকবে।
২) চুলকানি ও ফোলাভাব কমায়
মশা কামড় দিলে দেখবেন খুব দ্রুত ঐ জায়গাটা ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং খুব চুলকায়। বাচ্চাদের স্কিন খুব বেশি সেনসিটিভ হয় বলে এটা তাদের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে বেশি হয়। মশার কামড় দেয়া স্থানে মাউথওয়াশে ভেজানো একটা তুলোর বল কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখুন। ফোলা ভাব ও চুলকানি দুটোই কমে যাবে।
৩) ইনফেকশন শুকাতে সাহায্য করে
যদি আপনি সদ্য নাক/কান/শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে পিয়ার্স (ফোঁড়ানো) করিয়ে থাকেন, আর যদি বাসায় অন্য কোনো অ্যান্টিসেপটিক না থাকে, তাহলে মাউথওয়াশ এক্ষেত্রেও আপনার কাজে দিবে। একটি কটন বলে মাউথওয়াশ লাগিয়ে ফোঁড়ানো স্থানটি দিনে দুই-তিনবার আলতো করে মুছুন। এতে করে ইনফেকশন হবে না এবং জায়গাটা দ্রুত শুকাবে।
৪) মেকআপ ব্রাশ ক্লিন করতে
এক মগ পানিতে ১ টেবিল চামচ ভিনেগার, কয়েক ফোঁটা শ্যাম্পু আর কয়েক ফোঁটা মাউথওয়াশ মিক্স করে তার মধ্যে মেকআপ ব্রাশ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। আপনার মেকআপ ব্রাশগুলো একই সাথে ঝকঝকে আর জীবাণুমুক্ত হবে।
৫) বোতলের দুর্গন্ধ দূর করতে
যে কোনো প্লাস্টিক/কাঁচের বোতল বেশ কিছুদিন ব্যবহার করলে তা কেমন যেন দুর্গন্ধময় হয়ে যায়। ২ চা চামচ মাউথওয়াশ আর আধা কাপ পানি বোতলে ঢেলে বোতলের মুখ বন্ধ করে ঝাঁকিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে উঠে বোতলটি ধুয়ে ফেলুন। ব্যস, দুর্গন্ধ গায়েব হয়ে যাবে।
৬) উকুন দূর করতে হেল্প করে
৪ টেবিল চামচ মাউথওয়াশ এবং ৪ টেবিল চামচ পানি মিক্স করে মাথার তালুতে তুলোর বল দিয়ে ঘষে ঘষে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর মাথা ধুয়ে ফেলুন। উকুন দূর হবে।
৭) কাটা জায়গা ডিজইনফেক্ট করতে
শরীরের কোথাও যদি হালকা কেটে যায় বা ব্যথা পান, এবং হাতের কাছে যদি স্যাভলন না থাকে তাহলে স্কিন ডিজইনফেক্ট করতে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
৮) কাঁচের জিনিস পরিষ্কার করতে
চশমা, কাঁচের যে কোনো জিনিস, আয়নাকে ঝকঝকে করে তোলার জন্য ব্যবহার করুন মাউথওয়াশ। একটি ভেজা সুতি রুমালে কয়েক ফোঁটা মাউথওয়াশ লাগিয়ে চশমা/আয়না/গ্লাস আইটেমে লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। তারপর ঐ রুমালটি ধুয়ে চিপে জিনিসটি মুছে নিন। একদম নতুনের মতো চকচক করবে।
৯) বাথরুম পরিষ্কার করতে
হোমমেইড ক্লিনার হিসেবে মাউথওয়াশের ব্যবহার করেন অনেকেই। বাথরুম পরিষ্কার করতেও যে এটি ব্যবহার করা যায় সেটা কি জানেন? টয়লেটে এক কাপ মাউথওয়াশ ঢেলে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ব্রাশ দিয়ে ঘষে ফ্ল্যাশ করে নিলেই দেখবেন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
দেখলেন তো মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখার পাশাপাশি মাউথওয়াশ দিয়ে নিত্যদিনের কত কাজ করা সম্ভব। দৈনন্দিন জীবনযাপনের অনেক ক্ষেত্রেই এসব ছোটখাটো টিপস কাজে লাগে। এরকম আরো টিপস পেতে সাজগোজের সাথেই থাকুন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাউথওয়াশ শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারবেন। এছাড়া পাবেন পারসোনাল কেয়ারের জন্য আরও নানা প্রোডাক্ট।
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি
ছবি- সাটারস্টক