আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, ছোটবেলা থেকে চুলের যত্নে আমি কী ব্যবহার করে আসছি? আমার উত্তর হবে নারিকেল তেল। আমার মতো অনেকেই একই উত্তর দিবে আমি জানি। সাউথ এশিয়াসহ ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টে যুগযুগ ধরে নারিকেল তেল / কোকোনাট অয়েল-টাই হেয়ার কেয়ারের জন্য প্রথম পছন্দ। পশ্চিমা বিশ্বেও স্কিন আর হেয়ার কেয়ারের জন্য এখন কোকোনাট অয়েল-কেই অনেকেই বেছে নিচ্ছে। কোকোনাট অয়েল কেমিক্যালি ট্রীটেড চুলের ডীপ পেনেট্রেশনের জন্য সবচেয়ে বেস্ট অপশন। বর্তমানে আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনে যে পরিমাণ ধুলোবালি আর দূষণ তাতে কমবেশি সবার চুলই এখন ড্যামেজড এবং ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। তো এই চুলের যত্ন এখন না নিলেই না। তাই সবচেয়ে সহজলভ্য এবং অনেক বেশি ইফেক্টিভ অপশনই হলো কোকোনাট অয়েল। আর যদি কোকোনাট অয়েলের সাথে মেলবন্ধন ঘটে ঔষধি গুণাগুণযুক্ত হার্বসের তাহলে সেই তেলের কার্যকারিতা ও কিন্তু অনেকগুণ বেড়ে যায়। আজকে আমি আপনাদের সাথে কীভাবে ঔষধি গুণাগুণযুক্ত হার্বসের সাথে কোকোনাট অয়েলের মেলবন্ধন ঘটিয়ে আপনার নিজস্ব কাস্টোমাইজড হারবাল অয়েল তৈরি করা যায় সেটা জানাতে যাচ্ছি। তো চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
হার্বস ইনফিউজড ম্যাজিকাল কোকোনাট অয়েল বানাতে আমাদের যা যা লাগবে –
(১) পিওর কোকোনাট অয়েল – ২০০ মি.লি.
(২) আমলকি – ১০ টি
(৩) জবাফুল – ১-২টি
(৪) ক্যালেন্ডুলা ফুল – ১-২টি
(৫) মেথি – ৫০ গ্রাম
(৬) কালিজিরা – ৫০ গ্রাম
(৭) তুলসী পাতা – ৮-১০টি
যেভাবে তৈরি করব
সব হার্ব-গুলোকে (আমলকি, জবাফুল, ক্যালেন্ডুলা ফুল, মেথি, কালিজিরা, তুলসীপাতা) ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে, যেন কোন প্রকার পানি না থাকে। এরপর একটি পরিষ্কার শুকনো ঢাকনাসহ কাঁচের জারে প্রথমে সবগুলো উপাদান শুষ্ক অবস্থায় রেখে তার উপর ২০০ মি.লি. কোকোনাট অয়েল ঢেলে দিলাম। এবার কাঁচের জারটির ঢাকনা লাগানো অবস্থায় জারটাকে প্রতিদিন রোদে রাখতে হবে কমপক্ষে এক থেকে দেড় মাস। রোদের তাপ লেগে ধীরে ধীরে হার্ব-গুলোর তেলের সাথে মেলবন্ধন বাড়তে থাকবে এবং ইনফিউশনের প্রক্রিয়াটা পূর্ণ হবে। এবং একসময় তেলের রং-টা বদলে যাবে। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদী হলেও এভাবে হার্বস ইনফিউজড কোকোনাট অয়েল-টা বানালে সেটার কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে।
[picture]
তাছাড়াও আরেকটা পদ্ধতিতে তেলটা তৈরি করতে পারেন। তার জন্য একটি বড় হাড়ি/সসপ্যান নিন। সেই হাড়ির ১/৪ অংশ পানি দিয়ে ভরে তার উপরে আরেকটি ছোট সসপ্যান বসাবেন। ছোট সসপ্যানের উপরে ঐ কাঁচের জারটা বসিয়ে দিন। এবার চুলার আঁচ সবচেয়ে কমিয়ে রেখে ঐ ধীর আঁচে পানির তাপে আস্তে আস্তে তেল আর হার্ব-গুলো ইনফিউশনের সময় দিন। চুলার আঁচ বাড়ানো যাবে না। তাপ বেশি লাগলে তেল এবং হার্বসের স্বাভাবিক গুণাগুণ কমে যেতে পারে। এভাবে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা চুলায় তেল-টা বসিয়ে রাখুন। তেলের রংটা বদলে যাবে। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে নিন এবং স্বাভাবিক রুম টেম্পারেচার-এ তেলটা ঠাণ্ডা হবার জন্য রেখে দিন। চাইলে তারপর তেলটা কোন বোতলে ট্রান্সফার করতে পারেন হার্বস-সহ। অথবা ঐ কাঁচের জারে ও রেখে দিতে পারেন ঢাকনা লাগিয়ে। প্রতিবার ব্যবহারের আগে ভালোভাবে তেলটা ঝাঁকিয়ে নিবেন।
এই তেলে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর গুণাগুণ –
(১) আমলকী : আমলকীর ভিটামিন সি এর কথা কে না জানে। চুলের গোড়া মজবুত করা, চুলকে মসৃণ করা এবং চুল পড়া কমানোর জন্য আমলকীর জুড়ি নেই।
(২) জবাফুল : জবাফুলে আছে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম যা চুলের গোড়া মজবুত করে তুলতে সাহায্য করে এবং চুলের অকালপক্বতা রোধ করে চুলকে কালো করে তোলে।
(৩) মেথি : মেথিতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাসিয়াম, নিকোটিনিক এসিড এবং লেসিথিন। চুল পড়া কমাতে, খুশকি তাড়াতে, নতুন চুলের বৃদ্ধিতে মেথির জুড়ি নেই।
(৪) কালিজিরা : কালিজিরা চুলের ¬গোড়াকে মজবুত করে তোলে, চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং এতে বিদ্যমান অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান চুলের যাবতীয় সমস্যা (যেমন – খুশকি, উকুন, ছোটখাটো ফোঁড়া) সারিয়ে তোলে।
(৫) ক্যালেন্ডুলা ফুল : ক্যালেন্ডুলা ফুল চুলের স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, ফলে চুল পড়া কমে এবং ত্বকের মৃত কোষগুলো দূর হয়।
(৬) তুলসী পাতা : তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চুলের গ্রোথ বাড়াতে সহায়তা করে এবং চুলকে মসৃণ করে তোলে।
দেখলেন তো, কত সহজেই একটু সময় আর ধৈর্য্য নিয়ে ঘরে বসেই হার্বস ইনফিজড ম্যাজিকাল কোকোনাট অয়েল তৈরি করে ফেলা যায়। এটা বানাতে যেসব উপকরণ লাগবে সেগুলো কাঁচাবাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। আর ফুলগুলো নার্সারিতেই পাবেন। নারকেল তেল তো কমবেশি আমাদের সবার বাসাতেই থাকে, নিজে ঘরে বসেও বানাতে পারেন, অথবা মার্কেটেও এখন অনেক ভালো মানের কোকোনাট অয়েল কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো ও কিনে নিতে পারেন। তাহলে আর দেরি না করে আজই এটা বানিয়ে ফেলুন আর নিজেই দেখুন এই তেলের নিয়মিত ব্যবহারে আপনার চুল কতটা হেলদি, শাইনি আর গর্জিয়াস হয়ে উঠছে।
Stay Beautiful, Stay Gorgeous.
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি