আজকাল মানুষের মাঝে হতাশার পরিমাণ অনেক বেশি দেখা যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় বড় আইকনিক মানুষরাও কিন্তু আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এই কিছুদিন আগেই লিংকিন পার্কের মতো বিখ্যাত ব্যান্ড এর গায়ক চেস্টার বেনিংটন আত্মহত্যা করেছেন। তার দুইদিন পরেই বাংলাদেশের বিখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড মেকানিক্স এর গিটারিস্ট জেহীন আত্মহত্যা করেন। এই মানুষগুলোকে দেখে সবসময় হাসিখুশি দেখালেও ভেতরে যে কতটা হতাশা ও দুঃখ তারা পুষে রেখেছিলেন সেটা তাদের আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত দেখলে বোঝা যায়।
একজন লেখক হিসেবে নিজের অনুভূতিটা লেখার শুরুতে শেয়ার করাটা উচিত বলে মনে হয়। এই ধরণের আত্মহত্যা প্রবণতার চক্রে নিজেও পড়েছিলাম কিছুদিন আগে। ব্যক্তিগত জীবনে ব্যর্থতা, পারিবারিক সমস্যা, কর্পোরেট লাইফে হতাশা সব মিলিয়ে এক বিচ্ছিরি অবস্থার মধ্যে দিন পার করেছি। এক সময় মনে হয়েছে নিজেকে শেষ করে দেই কারণ এত চাপ নিতে পারছিলাম না। কিন্তু হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করে ফেলিনি। সময় নিয়েছি, নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। আস্তে আস্তে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ এনেছি।
সুতরাং একটু ইচ্ছে থাকলেই কিন্তু আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তবে এর জন্য নিজের চেষ্টা যেমন লাগবে তেমনি ধাপে ধাপে নিজের অবস্থার উন্নতি করতে হবে। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই কিন্তু যারা এ ধরণের হতাশা, আত্মহত্যা প্রবণতায় ভুগছেন তারা এই ধরণের অবস্থা থেকে সহজেই বের হয়ে আসতে পারেন। আসুন আজকে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যাক।
যখনই আত্মহত্যা প্রবণতা আপনার মাঝে বিস্তার করবে তখন সবার আগে নিজেকে যেটা বলা জরুরী সেটা হচ্ছে, মেঘের পরেই কিন্তু সূর্যের আলো হাসে। সুতরাং প্রতিটি খারাপ সময়ের শেষ আছে এবং এক সময় ভালো সময় শুরু হবে।
[picture]
যদি কখনো মনে হয় আপনার মাঝে আত্মহত্যার চিন্তা বাসা বাঁধছে, তাহলে আপনার নিয়মিত কাজ কর্ম থেকে বিরতি নিন। পরিবারকে সময় দিন, দূরে কোথাও যান ঘুরতে। আমাদের দেশে এটা একটা সমস্যা। আমরা মানসিক চাপকে গুরুত্ব দেই না কখনোই। কিন্তু এই মানসিক চাপ একসময় বড় ক্ষতির কারণ হয়। সুতরাং যখনই মানসিক চাপ অনুভব করবেন, চেষ্টা করুন নিজেকে খুশি রাখতে। সেজন্য ভ্রমণ বেশ ভালো একটা সমাধান। দুইদিনের জন্য দূরে কোথাও পাহাড় বা সমুদ্রের কাছাকাছি ঘুরে এলে আপনার কাছেই মনে হবে আপনি একটা ভালো সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তখন আত্মহত্যার চিন্তা মাথা থেকে এমনিতেই সরে যাবে।
যখনই মনে হবে বেঁচে থেকে লাভ নেই, তখনই নিজের চারপাশে তাকান। পরিবারের কথা ভাবুন, বন্ধুদের কথা ভাবুন। যখন আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় বাসা বাঁধে তখন একটা ঘোরের মধ্যে আপনি পড়ে যাবেন। আপনার মনে হবে কেউ আপনার কেয়ার করে না। আপনার কেউ নেই। কিন্তু একটু ভালো করে ভাবলেই দেখতে পাবেন আপনার আশেপাশে অনেক মানুষ আছে যারা আপনার কথা ভাবে, আপনাকে কেয়ার করে, ভালোবাসে। তাদের কথা চিন্তা করুন। আপনি মারা গেলে তাদের কতটা কষ্ট হবে সেটা ভাবুন। কাছের মানুষকে কেউ হারাতে চায় না।
আগেই বলেছি, যখনই মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসবে তখনই একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাবেন। আপনার আশেপাশে সবকিছুই নেগেটিভ মনে হবে আপনার। সবকিছুর জন্য নিজেকে দোষারোপ করা শুরু করবেন। এটা কিন্তু খুবই ভয়ংকর একটা ব্যাপার। অপরাধবোধ থেকে আত্মহত্যার সংখ্যা অনেক বেশি। তাই যেটা আপনি করেননি বা আপনার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ নেই সেটার জন্য নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন। সবকিছু সবসময় ঠিকভাবে হবে না এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
নিজের জীবনের দিকে তাকান। সাধারণত অল্প বয়সীরাই আত্মহত্যা প্রবণতায় বেশি ভোগে। সুতরাং ভাবুন ভবিষ্যতে কী কী করা বাকি আছে আপনার। কী কী আপনি করতে পারেননি। আত্মহত্যা করলে কখনোই আর সেগুলো করার সুযোগ পাবেন না। সুতরাং সেইদিকে মনোযোগ দিন।
যদি মনে হয়, যে এভাবে হচ্ছে না। কোনভাবেই নিজেকে নিজের মানসিক চাপ থেকে বাঁচাতে পারছেন না, দিন দিন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, তাহলে একটাই অনুরোধ থাকবে। কিছু করে ফেলার আগে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। একজন অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট, যিনি আপনাকে নতুন জীবন দিতে পারবেন। তার সাথে সব শেয়ার করুন, তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন।
সকল ধরণের নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন। এমনকি সিগারেট ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করুন যদি অভ্যাস থাকে।
সবশেষে নিজের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করুন। কোথাও খেতে ইচ্ছে করলে সেখানে চলে যান, মুভি দেখুন সিনেমা হলে গিয়ে, পছন্দের বইটি পড়ুন। দেখবেন সবকিছু আস্তে আস্তে সহজ হয়ে আসছে। সবকিছু আস্তে আস্তে মিশে যাবে সময়ের সাথে। আপনিও নিজের বিশ্বাস ফিরে পাবেন, মোটিভেশন পাবেন আবার সব শুরু করার। আত্মহত্যা কখনোই সমাধান নয়, নিজেকে রক্ষা করুন এবং অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠুন। সবকিছু এভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে।
ছবি – হাফিংটোন পোস্ট ডট কম
লিখেছেন – ফরহাদ রাকিব