শরতের স্নিগ্ধ হাওয়ায় ভাসছে শঙ্খ ধ্বনি। ধুপের সুগন্ধে ম ম করছে পাড়ার বাড়িগুলো। হাট বাজার, অলিতে গলিতে, পাড়ার মোড়ে মোড়ে উৎসবের ছোঁয়া, মা আসছেন। পূজা মানেই মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে বেড়ানো আর অঞ্জলি দেয়া। মহাসমারোহে চলছে পূজার আয়োজন। এত কিছুর মধ্যে নিজেকে কীভাবে সাজাবেন ভেবেছেন কিছু? আপনি যেমন করেই সাজেন না কেন, আপনাকে বুঝতে হবে কিসে আপনি স্বাছ্যন্দ বোধ করেন। তবে ফিউশন, আর ওয়েস্টার্ণ এর বদলে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পূজার সাজ সাজুন, আপনাকে মোহনীয় দেখাবে অনেক বেশি!
বাঙালী নারীর চিরায়ত মায়াবী রূপ লুকিয়ে থাকে পাড় ভাঙ্গা লাল পেড়ে সাদা শাড়িতে। কপালে এক চিমটে সিঁদুর আর আলতা রাঙ্গা পায়ে গোধূলি আলো যখন বালিকার চিবুক স্পর্শ করে তখন মনে হয় সাক্ষাৎ দেবী স্বর্গলোক থেকে নেমে এসেছেন।
পূজার সাজ যেমন হবে
হালকা সাজে সপ্তমী অষ্টমী
দিনের বেলা দেবীর চরণে অঞ্জলী দেয়ার ক্ষেত্রে মেকআপ ও গেটআপে থাকুক প্রকৃতির সজীবতার ছোঁয়া। বেশি মেকআপ না নিয়ে স্নিগ্ধ একটা লুক ক্রিয়েট করতে পারেন। এর জন্য আগে থেকে নিজেকে তৈরি করুন। এখন থেকেই বেশি বেশি ফল আর পানি পান করুন তাহলে উজ্জ্বল দেখাবে ত্বক। পূজার আগে আগে সেরে নিন পার্লারের কাজগুলো।
শাড়ি পরবেন নাকি থ্রি পিস এটা নিয়ে অনেকের দোটানা থাকে। আপনি যদি মনে করেন আপনি শাড়িতে কমফোর্ট ফিল করেন তাহলে একপ্যাচে করে শাড়ি পরতেই পারেন। অন্যথায় কাজ বেশি থাকলে থ্রি পিস বা কুর্তা বেশ মানানসই। শাড়ির রঙ এর ক্ষেত্রে নীল, সবুজ, কমলা, হলুদ, বেগুনী, যেকোন উজ্জল রঙ বেছে নিতে পারেন। শাড়ির ক্ষেত্রে সুতি, সিল্ক, কোটা, হাফসিল্ক, তসর, খাদি, বাটিক, ভেজিটেবল ডাই, বা ফ্লোরাল প্রিন্টের শাড়ি পড়তে পারেন। থ্রি পিস ও কুর্তার পছন্দের সময় একটু কাজ করা বা ডিজাইনার নিলে উৎসবের সাথে খুব মিলে যাবে।
দিনের বেলা সানস্ক্রিন আর ময়েশ্চারাইজার মাস্ট। তারপর হালকা ফাউন্ডেশন বা বিবি/সিসি ক্রিম লাগিয়ে তার উপর লুজ পাউডার বুলিয়ে নিন। চোখে গাঢ় করে কাজল টানুন। আই শ্যাডো হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ম্যাট ফিনিশের কপার, ব্রোঞ্জ, কোরাল রং। চোখের ইনার সাইডে ভাইব্রেন্ট সিলভার বা গোল্ডেন রং এর আলতো ছোঁয়া রাখুন। এতে চোখ অনেক বড় আর আকর্ষণীয় দেখাবে। আই লাইনার হিসেবে কালো, সবুজ, নীল, বাদামী বেগুনি রঙ বেছে নিতে পারেন। আইল্যাশ দিনের বেলা এড়িয়ে চলাই ভালো।
ঠোঁটে লাগান পিচ, রোজি, অরেঞ্জ, টেরাকোটা, মাউভ বা ন্যুড ধরনের রঙ। ম্যাট বা গ্লস যেটা আপনার ভালো লাগে ব্যবহার করুন। আর গালে লাগাতে পারেন ক্রিমি ব্লাশন।
গয়নার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে সবকিছু মিলিয়ে যেন অতিরঞ্জিত না হয়ে যায়। কানে ভারি কিছু পরলে অবশ্যই গলা খালি বা চিকন চেইন পরতে পারেন। আবার গলায় ভারী পরলে কানে পরতে পারেন ছোট টপ। হাতে চুড়ি পরুন ইচ্ছে মতো। সোনালি গয়নার প্রাধান্য যেহেতু পূজাতে বেশি থাকে তাই সোনার বা গোল্ড প্লেটেড গয়নায় সাজিয়ে নিতে পারেন নিজেকে। এছাড়া দিনের হালকা সাজে, শাড়ী বা জামার সাথে মিলিয়ে কাচের চুড়ি পরলে আপনাকে খুব স্নিগ্ধ দেখাবে। অনেকে আবার ফুলের মালাও হাতে পেঁচিয়ে নিয়ে থাকে। সেটিও ভালো লাগে দেখতে।
চুলের সেটিংটা আজকাল মেকআপের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক সুন্দর করেও সেজেও চুলের স্টাইল ভালো না হলে পুরো সাজটাই যেন ফিকে হয়ে যায়। আবার ভারী সাজের সাথে সাধারণ হেয়ার স্টাইল বেমানান। হালকা সাজের সাথে গর্জিয়াস হেয়ার স্টাইল ও মানানসই নয়। তাই মনযোগ দিন চুলের স্টাইলে। দিনে বেশীক্ষণ বাইরে থাকলে চুল খোলা রখাবেন না। সামনে ফুলিয়ে সেট করে পেছনে হাত খোঁপা করে নিতে পারেন। সাথে গুজে দিতে পারেন সুন্দর কোন ফুল। অথবা আপনার পছন্দের সিঁতি কাটুন। দু’পাশের চুল টুইস্ট করে করে ববি পিন দিয়ে আটকে দিন। তারপর সাধারণ খোঁপা করতে পারেন। সাইড খোঁপা/বান ও ইদানিং চলছে খুব। আর যদি একান্তই ছেড়ে রাখতে চান তাহলে, সামনের অংশ সেট করে কার্ল করে নিতে পারেন। অথবা ব্লো ড্রাই করে ছেড়েও রাখতে পারেন। আর একান্ত ইচ্ছে হলে পরে নিন ছোট একটা টিকলি। যা আপনার সৌর্ন্দয্য হাজার গুণ বাড়িয়ে দেবে!
ভারী সাজের নবমী দশমী
ইচ্ছে মতো সাজের সময় হল নবমী আর দশমী। এই দু’দিনেই লাল শাড়ি পরার চল রয়েছে। এই দুই দিন আপনি একদম মন মতো সাজুন একদম নিয়ম না মেনে। শাড়ি অথবা পোশাকের ক্ষেত্রে বেছে নিন গাঢ় রঙ। কাতান, সিল্ক, বেনারসী, কাঞ্জিপুরাম, জর্জেটে ভারি কাজ করা শাড়ি বেছে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন উগ্র না দেখায়। সাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে আপনি কতোটা ক্যারি করতে পারছেন । আর আপনার সাথে আপনার সাজ পোষাক মানানসই কিনা। তবু ভারি মেকআপের কিছু টিপস থাকছে আপনার জন্য।
মেকআপ যেন ভালো করে বসে সে জন্য আগে স্ক্রাবিং করে নিন। তারপর ত্বক অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার আর প্রাইমার লাগিয়ে নিন। ফুল কাভারেজ ম্যাটিফাইয়িং ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। তার উপর প্রেসড পাউডার লাগিয়ে বেইজ সেট করে নিন। তারপর মন মতো করে চোখ সাজান। মাথায় রাখবেন পোশাকের সাথে মিলিয়ে একই কালার না ব্যবহার করে আইশ্যাডোর ক্ষেত্রে কন্ট্রাস্ট কালার বেছে নিন। চোখের মেকআপে এক সাথে কয়েকটা রঙ ব্যবহার করলে চোখের দীপ্তি বহুগুণে ফুটে ওঠে। তারপর নাক, জ লাইন, চিবুক এর অংশ ভালো মতন কন্ট্যুরিং করে নিন। নাকের আগায়, কপালের মধ্যখানে আর ঠোঁটে নিচে হাইলাইটার লাগিয়ে দিন। চোখে ভারি মেকআপ নিলে অবশ্যই ঠোঁটে লাগান হালকা গোলাপি, ন্যুড, পিচ, বারগেন্ডি, বেরিস কালারের লিপস্টিক। ম্যাট ফিনিশ এর লিপস্টিক খুব ভালো লাগে দিনের সাজের সাথে। আর রাতের সাজের জন্য গ্লসি টাইপের লিপস্টিক লাগান। আর চোখের হালকা সাজের সাথে অবশ্যই গাঢ় রঙ লিপস্টিক ব্যবহার করবেন। এর জন্য কোরাল, রেড, চেরি, এপ্রিকট, ডার্ক মেরুন, বেরী শেডের লিপস্টিক লাগান। আর নিজের গায়ের রঙ অনুযায়ী ব্লাশ তো থাকছেই।
গর্জিয়াস স্টাইলের সাজের সাথে চুলের ধরন কেমন হবে? পার্লার থেকে আপনি গর্জিয়াস খোঁপা করে নিতে পারেন। টুইস্ট খোঁপা, স্পাইরাল খোঁপা, মেসি খোঁপা, অথবা ডোনাট খোঁপা। আপনার মুখের শেপের সাথে মিলিয়ে সামনের দিকের চুল সেট করুন। কেমন মুখের সাথে কেমন চুল ভালো লাগবে তা অন্য একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত জানিয়ে দেব।
এবার আসা যাক, গয়নার দিকে। ফাংকি গহনা না পরে সোনা বা রূপার গহনা পরুন। টানা কানের দুলে খুব গর্জিয়াস লাগে দেখতে। এছাড়া কুন্দনের গহনার সেট, আফগানি ও জয়পুরি জুয়েলারি খুব সুন্দর করে ব্যাক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। নাকের নথ ও নাকফুলের অনেক ভেরিয়েশন পাওয়া যায়। সেগুলো পরতে পারেন। আর বাদ বাকি আপনার পছন্দ মতো পড়ে নিন। কারণ উৎসব তো আপনারই।
শেষকথা স্থান কাল পাত্র ভেদে নিজের মনের মতো করে সাজুন। নিজের ব্যক্তিত্ব আর ভেতরের সৌন্দর্য্য আপনি নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলুন। আশা করছি ছোট কিছু সাজেশন আপনার উপকারে আসবে। সবাইকে শারদীয়া শুভেচ্ছা।
ছবি – সাটারস্টক