সময়ের সাথে বদলে গেছে অনেক কিছু। চিঠির বদলে এসেছে ই-মেইল, নৌকোর বদলে লঞ্চ, টেলিগ্রাম এর বদলে মোবাইল ফোন। প্রযুক্তিতে পরিবর্তনের পাশাপাশি পোশাকেও এসেছে বহু পরিবর্তন। আগে সব বয়সী মেয়েরা শাড়িই পরত। কিন্তু যুগ পাল্টেছে, এখন আর মেয়েরা শুধু শাড়িতেই আটকে নেই। সুবিধা অনুযায়ী তারা এখন পরছে বিভিন্ন ধরণের পোশাক, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণীদের মাঝে নানানরকম ফ্যাশনে আগ্রহ বেশি দেখা যায়। আজকাল তরুণীরা কেমন পোশাক পরতে পছন্দ করছে, কেমন দরদাম বা কোথায় এসব পোশাক সহজে পাওয়া যায় তা নিয়েই সুস্পষ্ট ধারণা দিতেই সাজানো হয়েছে আজকের আর্টিকেলটি।
প্রথমেই আসি সালোয়ার-কামিজ বা থ্রি-পিস এর কথায়। রঙিন পোশাকের প্রতিই এ বয়সী তরুণীদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। লাল, কাল, সবুজ, নীল, হলুদ অথবা অনেকগুলো রঙের কম্বিনেশনের ড্রেসগুলোরও বেশ চাহিদা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সালোয়ারটা সিম্পল এক কালার রেখে, কামিজটা বেশ গর্জিয়াস পরছে সাথে ওড়নাটা থাকছে কন্ট্রাস্ট কালার এর। অথবা যদি সালোয়ার এ যদি সুতোর জাঁকজমকপূর্ণ কাজ করা থাকে তাহলে কামিজ আর ওড়নাটা থাকছে খুবই সাধারণ একরঙা। কেউ যদি হালকা রঙের কিছু পরতে পছন্দ করেন, তাহলে তাও করা সম্ভব। আগের মতন এখন আর সালোয়ার এর ফ্যাশন ও শুধু চুড়িদার আর নরমাল সালোয়ারে থেমে নেই। পালাজো, প্যান্ট সালোয়ার, লেগিংস, জেগিংস, শর্ট প্যান্ট সালোয়ার, কুঁচি দেয়া সালোয়ার,পাটোয়ারী সালোয়ার ইত্যাদি। এগুলোতেও রয়েছে নানান ধরণ এবং রঙ।
কোথায় পাওয়া যাবে?
চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, আড়ং, কে ক্র্যাফট, আনারকলি সুপার মার্কেট, গাউসিয়ায় গিয়ে খুব সহজেই রেডিমেইড অথবা গজ কাপড় কিনে নিজের পছন্দ মতো বানিয়ে নেয়া সম্ভব। বিভিন্নরকম দেশি, ইন্ডিয়ান,পাকিস্তানি কাপড় যেমন সুতি, লিনেন, জর্জেট, লন, সফট কাতান, সিল্ক কাপড়ে সালোয়ার বা কামিজ দুটোই খুব ভালো হবে। ওড়না রেডিমেইড কিনে নেয়া যেতে পারে। অথবা কাপড় কিনে লেইস, চুমকি, পাথর বসিয়ে ডিজাইন করা যায়, যাতে পোশাকে সম্পূর্ণ ভিন্নতা এনে দেবে।
[picture]
কেমন দাম পড়বে?
একেক জায়গায় দাম একেকরকম হবে। আড়ং এর পোশাকগুলো তিন হাজার টাকা থেকে শুরু হয়, এই দামের পোশাকগুলো খুব সহজেই প্রতিদিন ব্যবহার করা সম্ভব। রঙ, ডিজাইন দুই-ই বেশ পোক্ত হবে। চাঁদনী চকে পোশাকভেদে দামের ভিন্নতা আছে। সুতি থ্রি-পিস বা টু-পিসগুলো এক হাজার বা বারোশ টাকা থেকে শুরু হবে।
আপনি যদি গজ কাপড় কিনে নিজে ডিজাইন করে পরতে চান, সেক্ষেত্রে দর্জি বিলসহ দামটা একটু বেশিই পরবে। বসুন্ধরায় দেশি দশে থ্রি-পিসগুলো দুই হাজার থেকে শুরু হয় এবং বিভিন্ন ডিজাইনের মধ্যে পাওয়া যায়। তাছাড়াও মার্কেটের ৩য় ও ৪র্থ তলায় আনস্টিচ থ্রি-পিস পাওয়া যাবে পাকিস্তানি লন বা সুতির ভিতর। সেগুলোর দাম শুরু হয় তিন-সাড়ে তিন হাজার থেকে।
ভালো রেডিমেইড পালাজো পাওয়া যাবে ইনফিনিটি, এস্টাসীতে। পালাজো ছাড়াও আরও প্যান্ট সালোয়ার, লেগিংস, শর্টস ও এখানে দুই হাজারের মধ্যে পাওয়া যাবে।
এবার আসি ফতুয়া ও জিন্স এ। এখন সময় এবং ঝামেলা দুই বাঁচাতেই তরুণীরা ঝুঁকছে জিন্স, ফতুয়া তে। রঙ-বেরঙের অথবা সাদা-কাল ফতুয়ার ও বেশ চল রয়েছে। জিন্স হতে পারে নীল, কাল, সাদা, কমলা অথবা লাল। জিন্সের ডিজাইনেও রয়েছে ভিন্নতা। যেমন- ব্যাগি জিন্স, ন্যারো শেপ, স্ট্রেট, স্টিচ ইত্যাদি। শুধু জিন্স প্যান্ট ই নয়, সাথে আরও যোগ হয়েছে ক্যাপ্রি, কারগো, ফরমাল, টুইন, গ্যাবার্ডিন, ট্রাউজার, ডেনিমসহ আরও অনেক কিছু। প্যান্ট পরায় সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এগুলো সব ধরনের ফতুয়া, কামিজ বা টপস এর সাথে পরা যায় এবং শাড়ি বা ওড়না সামলানোর মতো অসুবিধা এতে নেই। ফতুয়ার কাপড় হতে পারে সুতি, লিনেন। যা প্রতিদিন ক্লাস করার জন্য বেশ আরামদায়ক। গোল,ভি-শেইপড গলারই ফতুয়াতে চল বেশি, তাছাড়া শার্ট বা কলার বন্ধ গলাগুলোও ভালোই চলছে। জিন্স ফতুয়ার সাথে ইচ্ছে করলে রঙ্গিন বা একরঙা স্কার্ফ নেয়া যেতে পারে।
কোথায় পাওয়া যাবে?
ফ্যাশন হাউস ক্যাটস আই, লা রিভ, ইয়েলো, জেন্টল পার্ক, আরবান ট্রুথ, এক্সটাসিসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে মেয়েদের প্যান্ট পাওয়া যাবে। ফ্যাশন হাউস ছাড়াও মেয়েদের পোশাক পাওয়া যায়—এমন সব দোকানে নানা রকম প্যান্ট পাবেন, যেমন মেট্রো, প্লাজা এ আর, রাপা প্লাজা, ধানমন্ডি হকারস মার্কেট ইত্যাদি তে। ফতুয়া ভালো পাওয়া যাবে আড়ং, দেশি দশ, অঞ্জন্স, ইয়েলো, টপ টেন এ। চাইলে কাপড় কিনে নিজের পছন্দ মত বানিয়েও নেয়া যাবে।
কেমন দাম পড়বে?
প্যান্টের দাম পড়বে আটশত পঞ্চাশ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। কেও যদি বানিয়ে নিতে চায় তাহলে কাপড় কিনে ফিট এলিগ্যান্ট, টপ টেন, রেমন্ড টেইলরিং শপে বানিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্যান্ট পিসের দাম চারশত টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত পরতে পারে। আর মজুরি একেক দোকানে একেক রকম হবে, তবে এসব জায়গায় মজুরি শুরু হবে পাঁচশত টাকা থেকে কিন্তু গাউসিয়া অথবা নিউমার্কেট এর দর্জি দিয়ে বানিয়ে নিলে মজুরি পড়বে তিনশ থেকে সাড়ে পাঁচশ এর মধ্যে। কাপড়ের মান ও নকশার ওপর ভিত্তি করে দাম কমবেশি হতে পারে। ফতুয়ার দাম কাপড়ের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হবে। সুতি, লিনেন কাপড় এর ফতুয়ার দাম সাতশ থেকে শুরু করে তিন হাজার পর্যন্ত হতে পারে। মার্কেটভেদেও ফতুয়ার দাম ওঠানামা করে। স্কার্ফ এর দাম সর্বনিম্ন আড়াইশ থেকে বারশ পর্যন্ত হতে পারে। আড়ং সহ গাউসিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, চন্দ্রিমা মার্কেটে পাওয়া যাবে।
এবার চলে যাব টপস ও শার্ট এর কালেকশন এ। যারা একটু গতানুগতিক ফ্যাশন থেকে বের হয়ে পশ্চিমা পোশাক পরতে বেশি আগ্রহী তারাই টপস ও শার্ট বেছে নেন। নিজেকে একটু অন্যরকম দেখাতে কার না ভালো লাগে। তাছাড়া এরকম পোশাকের সাথে খুব বেশি জুয়েলারি বা মেইক আপ এর প্রয়োজন পরবে না। গাড় নীল, লেমন কালার, পেস্ট,খয়েরি, কালো,বাদামি এবং ছাইরঙা টপস যেকোনো ধরণের প্যান্ট অথবা জেগিংস এর সাথে খুবই ট্রেন্ডি। ভার্সিটিসহ মার্কেট, বন্ধুর সাথে আড্ডায়, জন্মদিনের পার্টিতে, বেড়াতে যাওয়া থেকে শুরু করে সব ধরণের ক্যাজুয়াল জায়গায়ই এই ড্রেসগুলো পরে যাওয়া সম্ভব বলে আজকাল তরুণীদের টপস খুবই পছন্দের পোশাক। শার্ট সাধারণত একটু হালকা রঙের হলেই ভালো, রুচিভেদে তা গাড় রঙেরও হতে পারে। বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট যেমন বটন-আপ, ব্লাউজ কাট শার্ট এর সাথে ছিমছাম নকশার কোটিও ফ্যাশনেবল। কেউ চাইলে ঢিলেঢালা শার্টও বেছে নিতে পারে রেগুলার ব্যবহার এর জন্য।
কোথায় পাওয়া যাবে?
বসুন্ধরার ফ্রিল্যান্ড, গুলশান এর পিঙ্ক সিটির টপ টেন, এস্টাসি, ইয়েলো, স্মার্টেক্স, ইনফিনিটি, ওয়েসটেক্স এ পাওয়া যাবে বেস্ট কোয়ালিটির টপ্স এবং শার্ট। তাছাড়াও রাইফেল স্কয়ার, নিউমার্কেট এর কিছু দোকানেও ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাবে।
কেমন দাম পড়বে?
টপস বা শার্ট এর মান অনুযায়ী দামের হেরফের হবে। ব্র্যান্ডেড শপগুলোতে এসবের দাম দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাত সাড়ে সাত হাজার পর্যন্ত পরতে পারে। নরমাল শপে দামটা শুরু হবে সাড়ে ছয়শ থেকে তিন হাজার পর্যন্ত। টি শার্ট এবং স্কার্ট এর জনপ্রিয়তা মাঝখানে কমে গেলেও এখন আবার তা নতুন আঙ্গিকে বাজারে এসেছে। ফ্যাশনে এখনকার তরুণীরা একরঙা অথবা হাতের কাজ করা বিভিন্ন ডিজাইনের যেমন ঘের দেয়া, কুঁচি দেয়া, এক ছাঁটের সুতি, লিনেন বা জর্জেট এর স্কার্ট বেছে নিচ্ছে সানন্দে। স্কার্ট পরা যায় ফতুয়া, শার্ট, টপ্স অথবা টিশার্ট দিয়ে। দেখতে আকর্ষণীয় এবং সহজে সব জায়গায় পাওয়া যায় বলে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। এক রঙের টি শার্ট এর সাথে একটু কাজ করা বা নকশা করা স্কার্ট পরা যেতে পারে। টি শার্ট পরা যায় বিভিন্ন রকম প্যান্ট বা পালাজো এর সাথে। গোল, কলার, ভি, বাটন দেয়া লং বা শর্ট যেকোনো ধরণের শার্টই ভালো মানাবে।
কোথায় পাওয়া যাবে?
চাঁদনী চক, গাউসিয়া, ওয়ারী, মিরপুর, সানরাইজ প্লাজা, বসুন্ধরা, আড়ং, কে ক্র্যাফট এ অল্প দামে অনেক রকম স্কারট পাওয়া যাবে। টি শার্ট ভালো পাওয়া যাবে নিউমার্কেট, মেট্রো,ট্রেঞ্জ,উত্তরা ইত্যাদিতে।
কেমন দাম পড়বে?
সুতি, লিনেন স্কার্ট এর দাম সাড়ে তিনশ থেকে শুরু করে পনেরশ পর্যন্ত হবে। একটু গরজিয়াস কাপড় বা নকশার মধ্যে গেলে দামটা শুরু হবে সাতশ থেকে আড়াই হাজার পর্যন্ত। তাছাড়া কেও চাইলে কাপড়, লেইস কিনে নিজের রুচিমত বানিয়েও নিতে পারে। ইস্টার্ন মল্লিকায় টেইলরিং শপগুলোয় পছন্দমত কম দামে বানিয়ে নেয়া যেতে পারে। অবশ্য কাপড় আর ডিজাইনের তারতম্যে মজুরী সাতশ-আটশ পর্যন্ত যেতে পারে। টি শার্ট গুলোর দাম তিনশ থেকে শুরু করে মান অনুযায়ী দুই হাজার পর্যন্ত যেতে পারে।
আজ এই পর্যন্তই পরের পর্বে বর্তমানে ফ্যাশন সচেতন অথচ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলা তরুণীদের পোশাক সম্পর্কে জানাবো। ভালো থাকবেন।
মডেল – সামা মেহজাবিন রিনতি
ছবি – আরিয়ান রাজ
লিখেছেন – মোহছেনা দেওয়ান পৃথিল