নিজের ঠোঁট লাল-গোলাপি হলে কার না ভালো লাগে! চেহারায় গোলাপি ঠোঁট-টাই কিন্তু সবার প্রথমে নজর কাড়ে। মন্টানা ফ্লোরিডার ৪টা লাইন মনে পড়ে গেল, ঠোঁট হচ্ছে মুখের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। একটু অসতর্কতার কারণে হতে পারে বেশ বড় ধরণের সমস্যা। তাই কোন ধরণের হেলাফেলা না করে নিজের সমস্যা বুঝে নিতে হবে সঠিক যত্ন।
ঠোঁটের কিছু সাধারণ সমস্যার কথা তুলে ধরা হল
ঠোঁটের কোণায় কেটে যাওয়া – কখনও অসাবধানতাবশত অথবা রুক্ষতার কারণে ঠোঁটের কোণায় কেটে যেতে পারে। হতে পারে জ্বালাপোড়াসহ রক্ত পড়ার মতো সমস্যা। এক্ষেত্রে ঠোঁটে বাম বা জেল লাগাতে হবে, ভ্যাজলিন ( নিজের ত্বক অনুযায়ী প্যাপায়া,অরেঞ্জ,স্ট্র-বেরি,লিচি,কিউকাম্বার) ফ্লেভার পছন্দ করতে হবে। বেশি অসুবিধা বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
ঠোঁট চুলকানো এবং এলাজি হওয়া – এই সমস্যাটি হয় কোন লিপস্টিক, টুথপেস্ট, খাবার, কোলা অথবা রেগুলার কোন ওষুধ ব্যবহারের ফলে, যা আপনার ত্বকের জন্য সঠিক নয়। এ ধরণের জিনিস ব্যবহারের ফলে ঠোঁটে চুলকানোসহ র্যাশ ওঠার মতো সমস্যা হতে পারে। ডারমাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিয়ে হাইড্রোকরটিজন ক্রিম ব্যবহারে র্যাশ আর ইরিটেশন দূর হতে পারে।
ঠোঁটের চারপাশে কুঁচকে যাওয়া – সূর্যের বেগুনি রশ্মি,উত্তপ্ততা, বয়স, ধূমপানজনিত কারণে ঠোঁটের চারপাশে কুঁচকে যেতে পারে এবং দাগের সৃষ্টি হতে পারে। মুখের অন্যান্য স্থানের কুঁচকে যাওয়া অংশ যেভাবে ট্রিট করছেন, ঠিক একইভাবে এই অংশটিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।বাজারে ভালো এবং উন্নতমানের অ্যান্টি-এইজিং ক্রিম পাওয়া যায়, ত্বক অনুযায়ী এটা ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়াও ভিটামিন সি বেশি করে খেতে হবে তার সাথে ঘরোয়া কিছু প্রক্রিয়াও গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত পাতলা ঠোঁট – যদি কারো ঠোঁট বেশি পরিমাণে পাতলা এবং চিকন হয় তাহলে ঠোঁটের সুন্দর, চাহিদা মতো শেইপ আনতে অস্থায়ী চিকিৎসা করা সম্ভব। যেমন কোলাজেন ইঞ্জেকশন প্রতি ৬ মাস পর পর একটি করে দিলে ঠোঁটের পছন্দ মতো শেইপ পাওয়া যায়।
কিছু পদ্ধতি যা অবলম্বনে ঠোঁট হবে সুন্দর এবং আকর্ষণীয়
যেখানেই যাবেন সাথে সবসময় পানি রাখবেন – পরিমাণ মতো পানি পান করা একজন মানুষের সজীব এবং সুস্থ থাকার প্রথম শর্ত।অপর্যাপ্ত পানি দেহের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির মুল কারণ। কম পানি পান করার ফলে ঠোঁটে শুষ্কতা,রুক্ষতা তৈরি হয়।যা অসুন্দর এবং নিষ্প্রাণ ঠোঁট এর প্রধান কারণ।তাই প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং সাথে সবসময় পানি রাখতে হবে।
জিহ্বা দিয়ে বারবার ঠোঁট ভেজানো যাবে না – অনেকেরই জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট বারবার ভিজানোর অথবা ঠোঁট কামড়ানোর অভ্যাস থাকে। যা খুবই খারাপ একটি অভ্যাস। এতে ঠোঁটের আদ্রতা নষ্ট হয় এবং ঠোঁট শুষ্ক হয়। এটি না করে ঠোঁটে নিয়মিত লিপজেল দেয়া যেতে পারে।
নিজের ত্বক বুঝে নেয়া – যদি আপনার ঠোঁট হয় স্পর্শকাতর তাহলে ক্যাম্ফর বেসড লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ জবজবে তেল, নারিকেল তেল, বাদাম তেল, শিয়া বাটার সমৃদ্ধ লিপজেল অথবা বাম ব্যবহার করতে হবে।অন্য কারো দেখাদেখি কিছু না লাগানোই ভাল, সবার ত্বক কিন্তু এক না !
বেশিক্ষন এসি তে না থাকা – দিনে ও রাতের বেশিরভাগ সময় যদি এসি তে কাটানো হয় অথবা যদি আবহাওয়া অতিরিক্ত ঠান্ডা হয় তা ঠোঁটের পাতলা ত্বকের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, যদি সারাক্ষন এসি তে থাকা টা বাধ্যতামুলক হয় তাহলে বারবার জেল দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিতে হবে। শীত বেশি হলে ত্বকের সাথে সামঞ্জস্য করে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকও আদ্র থাকবে সাথে রুক্ষতাও তৈরি হবেনা।
নিস্ক্রিয় চামড়া তুলে ফেলা – ঠোঁটের নির্জীব ভাব দূর করতে এর নিস্ক্রিয় বা মরা চামড়া তুলে ফেলাটা খুব জরুরী।ত্বকের স্পর্শকাতরতা অনুযায়ী সপ্তাহে ১দিন থেকে ২-৩দিন এটি করা যেতে পারে। বাজারে একধরণের ফ্রুট এসিড বিশিষ্ট জেল পাওয়া যায় যা এই মরা চামড়া তুলে ফেলতে সাহায্য করবে এবং ঠোঁট করবে আরও প্রাণবন্ত।এগুলো কে বলে লিপ এক্সফলিয়েটরস। এলারজির অসুবিধা হলে ফ্লেভার চেঞ্জ অথবা আপনার ডারমাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন – রোদ থেকে বাঁচতে ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগান, যেমন নিউট্রজিনা লিপ ময়েশ্চরাইজার এসপিএফ ১৫ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ঠোঁটের কাল দাগ, রুক্ষতা, কুঁচকে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সূর্যের উত্তাপ।
সবসময় ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করবেন না – ম্যাট লিপস্টিক ঠোঁটকে অতিরিক্ত শুষ্ক করে দেয়। দীর্ঘক্ষণের জন্য ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। কিছু লিপস্টিক আছে যেগুলো দেখতে ম্যাট এর মতো দেখায় কিন্তু এগুলোতে ভিটামিন ই রয়েছে, এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রথমে ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
ঠোঁট বিষয়ে কিছু সাধারণ টিপস
ঠোঁট লিপস্টিক লাগানোর পরে এবং ব্রাশ করার সময় নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
বাইরে যাওয়ার আগে এমনকি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও আপনার ত্বক অনুযায়ী লিপজেল লাগিয়ে নিন।
গোলাপজল অথবা গোলাপের পাপড়ি কাঁচা দুধে ভিজিয়ে ঠোঁটে সপ্তাহে ২-৩বার লাগাতে পারেন। এটি ঠোঁটের কালো দাগ দূর করবে, ঠোঁট উজ্জ্বল করবে, পরিষ্কার ও নরম করবে।
লিপস্টিক গ্লিসারিন অথবা নারিকেল তেল তুলোতে লাগিয়ে আলতো করে পরিষ্কার করবেন। চাইলে অন্য তেল যেমন বাদাম তেল, অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন।
উন্নতমানের বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের লিপজেল বা লিপস্টিক-লাইনার-গ্লস ব্যবহার করুন এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।
প্রচুর পানি পান করার পাশাপাশি ভিটামিন সি,ই সমৃদ্ধ ফল এবং খাবার খাবেন।
মাঝে মাঝে হালকা গরম পানির ভাপ নরম তোয়ালে ব্যবহার করে ঠোটে দেবেন, বরফ ব্যবহার করাও ঠোঁটের জন্য ভালো।
ধূমপান ত্যাগ করতে চেষ্টা করুন।
ঠোঁটে ঘনঘন সার্জারি করা থেকে বিরত থাকুন।
না জেনে বুঝে কোন প্রসাধনী বা ওষুধ ব্যবহার করবেন না।
বাহিরে মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকলে ভেজা টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে পরিষ্কার করে নিন।
সবচেয়ে জরুরী ব্যাপার হচ্ছে কারো ব্যবহার করা লিপস্টিক-লাইনার-গ্লস ব্যবহার করবেন না, নিজেরটাও করতে দেবেন না।
ঠোঁটের সাজের দুটো সিম্পল টিপস
- লিপ লাইনার-টি লিপস্টিক বা লিপগ্লস এর চেয়ে একটু বেশি গাঢ় করে দিন। লিপস্টিক লাগানোর পর লাইনার টি দিয়ে ঠোঁট আরেকবার স্পষ্ট করে এঁকে নিন। লিপস্টিকের রঙ ভাল দেখাতে, প্রথমে ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগানোর পর অল্প একটু পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে রঙ আরও বেশি ফুটে উঠবে। আর অবশ্যই ঠোঁটের শেইপ অনুযায়ী ঠোঁট আঁকবেন,যদি ঠোঁট চিকন হয় তাহলে একটু মোটা করে আর মোটা হলে একটু চিকন করে আঁকলে আরও বেশি সুন্দর দেখাবে।
লিপস্টিক লাগানোর পর ঠোঁটের ঠিক মাঝে ছোট্ট এক ড্রপ ফাউন্ডেশন তর্জনী দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন তারপর ঠোঁটে পছন্দের রঙের গ্লস দিয়ে নিন।এটি ঠোঁট কে আকর্ষণীয় দেখাতে সাহায্য করবে।
সবশেষে আজকের লেখাটি শেষ করছি ঠোঁটের প্রসাধনীর মধ্যে আমার প্রিয় কিছু ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে
ভিটামিন সমৃদ্ধ লিপস্টিক – আলমেয় (Almay ) ওয়ান কোট লিপ ক্রিম, যা ভিটামিন এ,সি এবং ই সমৃদ্ধ।
লং লাস্টিং লিপস্টিক – লরিয়েল (L’Oréal ) ইন্ডলেস লিপকালার এবং ম্যাক্স ফ্যাক্টর লিপ ফিনিটি
ফ্লেভার – অরিজিনস লিকুইড লিপ কালার। এটি মিন্ট ফ্লেভারযুক্ত সাথে আছে হাইড্রেটিং এলোয়,ভিটামিন ই এবং রাইস-ব্র্যান অয়েল
ময়েশ্চারাইজিং – মেবেলিন ময়েশ্চার হুইপ লিপস্টিক
লিপগ্লস- এভন হার্টস অফ ইউ লিপ গ্লস
- প্রিয় লিপস্টিক – স্ম্যাশবক্স
- লিপ লাইনার – এল এ গার্ল
- ন্যাচারাল লিপটিন্ট – রেভলন লিপ
ছবি – পিন্টারেস্ট ডট কম
লিখেছেন – মোহছেনা দেওয়ান পৃথিল