রাস্তায় বের হলেই বড় বড় বিলবোর্ডে সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে ঠাসা। টিভি খুলে বসলেও সেই একই দৃশ্য। চারিদিকে শুধু স্লিম আর জিরো ফিগারের জয়জয়কার। পণ্যের মডেল কিংবা ফ্যাশন হাউজ। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা সবখানেই ফিট বা স্লিমদেরই যেন রাজত্ব। বিশ্বায়নের এই যুগে আপনি হয়তো ভাবছেন পছন্দ মতো একটি ফ্যাশনেবল ড্রেস কিনে পড়বেন কিন্তু আপনার গায়ে ওই ডিজাইনার ড্রেসটি ফিট হবে কিনা তা নিয়ে চলছে দ্বিধাদ্বন্দ। কারণ আপনি তো আর মডেলদের মতো হালকা পাতলা বা স্লিম নন। হয়তো অনেকের থেকে আপনি একটু ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী। হয়তো একটু ওভার ওয়েট তাই বলে কি পছন্দ মতো ড্রেস পরা যাবে না!
[picture]
আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আমাদের ছোটকাল থেকে শিখিয়ে এসেছে যারা ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ঠিকঠাক শুধু তারাই সুন্দরের সিম্বল। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মানানসই দেহ কাঠামো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশ্বাস করুন প্রতিটি মানুষ খুব সুন্দর। আপনি যদি নিজেকে নিজের মন মতো করে গুছিয়ে রাখতে পারেন। আপনি যদি নিজেকে ভালবাসেন, আপনি আপনার সাজ পোষাকে যদি নিজের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারেন তাহলেই আপনি অনবদ্য। কখনো আমি একটু মোটা, আমাকে এই পোশাকে মানায় না, ওই গেটাপে মানায় না এসব নিয়ে মন খারাপ করবেন না। শুধু নিজের প্রতি আত্ববিশাস তৈরি করুন আর ইচ্ছে মতো কালার আর ডিজাইনের পোশাক পরে মাতিয়ে রাখুন চারপাশ। এত কিছুর পরেও আপনি যাতে আরো স্বাচ্ছন্দ্য থাকেন সেজন্য কিছু টিপস মেনে চলুন পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে, তাহলে দেখবেন কত সহজে আপনার ভেতর পোশাক নিয়ে একটি কনফিডেন্স গড়ে উঠছে।
(১) প্রথমেই মাথায় রাখুন কি ধরণের পোশাকে আপনি সবচেয়ে কমফোর্টেবল। নতুন কোন জায়গায় যেতে হলে নতুন ধরণের ড্রেস পরার আগে ট্রায়াল দিয়ে নিন কয়েকবার। খুব আঁটসাঁট জামা বা খুব ঢিলেঢালা জামা না পড়ে আপনার সাইজ থেকে সামান্য ঢিলে পোশাক পড়ুন। এতে মোটা দেখানোর অস্বস্তি কেটে যাবে।
(২) বেশিরভাগ সময় গাঢ় রঙ এর ড্রেস বাছুন। হালকা রঙ হলে এক কালার বা কয়েকটি বেসিক কালারের কম্বিনেশন রাখুন। রঙ আর প্রিন্ট পছন্দ করার ক্ষেত্রে বেশী মনযোগী হন। কারণ সাইড প্রিন্টেড বা সাইড স্ট্রাইপে আপনাকে আপনার থেকেও বেশী মোটা দেখাবে। হালকা রঙ এর ড্রেস বানালেও বডির দু পাশে ডিজাইন করে গাঢ় রঙ এর কাপড় লাগিয়ে নিলে খুব সুন্দর দেখাবে। এছাড়া সুন্দর ডিজাইন ও মোটিফের পোশাকে অনেকাংশে স্লিম দেখায়।
(৩) ভারী মোটা কাপড়ের ড্রেস পরা আজই বাদ দিন। আরামদায়ক পোশাক নিন। রাউন্ড কাটিং এর জামা থেকে একছাটে বানানো জামায় ভালো লাগবে বেশী। কিন্তু তাই বলে কি এখন রাউন্ড শেপের জামা পরা বাদ দেব? মোটেও না । সেক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন জামার কলি দেয়ার ক্ষেত্রে তা যেন নাভি বরাবর হয়। বেশী উপরে বা নিচে জোড়ার অংশ দিলে ভালো নাও দেখাতে পারে।
(৪) শাড়ির ক্ষেত্রে একই রঙ এর শাড়ি ব্লাউজ না পরে কন্ট্রাস্ট ব্লাউজ পরুন। থ্রি পিসের ক্ষেত্রেও কন্ট্রাস্ট ওড়না ভালো মানাবে। ভার্টিকাল বা খাড়া স্ট্রাইপের বিভিন্ন নকশার জামা গায়ে চাপুন।
(৫) কলার দেয়া জামায় দেখতে একটু বেশি ফ্লাপি মনে হয়। তাই গলার ডিজাইনে বিশেষ মনযোগী হোন। ভি বা স্কয়ার শেপের গলায় সরু দেখাবে আপনার মুখ, ঘাড় ও গলা। হাতার ক্ষেত্রে আপনার যদি মাসল বেশি ফুলো ফুলো না হয় তাহলে হাফ হাতা বা স্লিভলেস পড়তে পারেন। কিন্তু অনেকের শরীরের তুলনায় হাতে বেশী মেদ জমে তখন ফুলহাতা বা থ্রি কোয়ার্টার স্লিভ পরাই ভালো। সেক্ষেত্রে হাতায় নানা ধরনের নকশা করে নিতে পারেন।
(৬) সাধারণত যাদের ওজন সাধারণের তুলনায় বেশি তাদের খাটো পোশাকে দেখতে বেমানান লাগে। যদি লম্বা জামা বা গাউন পড়েন হিল জুতো দিয়ে তাহলে নিজেকে আবিষ্কার করবেন অন্যরকমভাবে।
(৭) এমন পোশাক নির্বাচন করুন যা আপনার কোমরের অংশ চেপে রাখবে। আপার বডি ও লোয়ার বডি শো করবে বেশি। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে আপনাকে হালকা ওজনের লাগবে।
(৮) বাজারে বডি শেপার বলে কিছু প্রোডাক্ট পাওয়া যায় যা জামার নিচে পড়তে পারেন। সবচেয়ে বেশী নজর দিন আপনার ইনার গার্মেন্টস এর দিকে। আপনাকে ভালোভাবে ফিট না করলে সেটি পড়বেন না। নিজের মাপ অনুযায়ী ইনার বেছে নিন। ফিটিং ছাড়া ইনার আপনার বডি শেইপ বিকৃত করে।
মোট কথা সবসময় মাথায় রাখবেন আপনি সবার থেকে সুন্দর যেভাবেই থাকুন না কেন। নিজেকে নিজে ভালোবাসতে পারলে তার চেয়ে বেশি ভালো আর কিছুই হতে পারে না। সময় ও প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের সাথে মানানসই মেকাপে সাজুন মন মতো। মুখে হাসি আর আত্ববিশাস আপনাকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দেবে।
ছবি – ফ্যাশনপলিস ডট ইন
লিখেছেন – নাজমুন নাহার তুলি