এখনকার দিনে ডায়াবেটিস খুব সাধারণ রোগ হয়ে গেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম, অপর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম আর অসময়ের ঘুমের অভ্যাস, এসব কারণেই দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এই ক্রমবর্ধণশীল ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার কারণ। তবে যে ব্যাপারটি আরও ভয়ঙ্কর তা হচ্ছে বাচ্চাদের মধ্যেও এখন ডায়াবেটিস দেখা যাচ্ছে এবং এর সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে। আজ আমি বাচ্চাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে সামান্য আলোচনা করব।
আমাদের শরীরে প্যানক্রিয়াস থেকে একটি হরমোন নিঃসরণ হয় যার নাম ইনসুলিন। এই ইনসুলিন রক্তে খাদ্য উপাদান ভেঙ্গে এনার্জি তৈরি করে। প্যানক্রিয়াস যখন বিভিন্ন কারণে ইনসুলিন নিঃসরণ বন্ধ করে দেয় অথবা কমিয়ে দেয় তখনই ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
বাচ্চাদের মধ্যে দুই ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়, টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরণের ডায়াবেটিস হলে বাইরে থেকে ইনসুলিন নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আর টাইপ টু ডায়াবেটিস এ ইনসুলিন নিঃসরণ কমে যায়। সাধারণত ওবিস বা ওভারওয়েট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে টাইপ টু ডায়াবেটিস দেখা যায়। টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে একটু কড়াভাবে জীবনপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডায়াবেটিস কমে যাওয়ার কিছুটা সম্ভবনা থাকে। কিন্তু বুঝবেন কীভাবে যে আপনার বাচ্চার ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়েছে? ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে খুব সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা যায়।
বাড়তে থাকা ক্লান্তি
বাচ্চাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের একটি প্রধান লক্ষণ হল অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ। রক্তে চিনি যখন এনার্জি তৈরি করতে বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন বাচ্চারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্তবোধ করে।
অধিক পিপাসা এবং প্রসাব
বাচ্চাদের রক্তে সুগার লেভেল বেশি থাকলে তাদের মধ্যে অতিরিক্ত পানি পিপাসা দেখা যায়। বাচ্চাদের বারবার পানি পিপাসা পায় এবং স্বাভাবিক বাচ্চাদের তুলনায় অনেক বেশি পানি খায়। এছাড়া বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রসাব করার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত ক্ষুধা
আর একটি লক্ষণ হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষুধা পাওয়া। ডায়াবেটিস আক্রান্ত বেশিরভাগ বাচ্চারাই প্রায়শই ক্লান্ত থাকে এবং তাদের খুব ঘন ঘন খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয়।
ক্ষত সারতে দেরি হয়
ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হয়। একারণে ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাচ্চাদের যেকোন রোগ সারতে বা কোন কাটাছেড়া বা ঘা-ক্ষত হলে সেগুলো সারতে দেরি হয়।
ত্বক কালো হয়ে যাওয়া
বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হলে ত্বকের বিভিন্ন অংশে বিশেষত গলার ভাজে এবং বগলে ছোপ ছোপ কালো দাগ দেখা যায়। এছাড়া ত্বকে চুলকানিও দেখা যায়।
চোখে ঝাপসা দেখা
ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাচ্চাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে।
শ্বাস প্রশ্বাসে গন্ধ
ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাচ্চাদের নিঃশ্বাসের সাথে সাধারণত এক ধরনের গন্ধ বের হয়। অনেকটা টকটক ফ্রুটি গন্ধ।
[picture]
কেনই বা আজকাল ছোট ছোট বাচ্চারা এমন একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে?
বাচ্চাদের মধ্যে নানা কারণে ডায়াবেটিস দেখা যায়। আজকাল ফাস্টফুড অনেক বেশি সহজলভ্য। আর বাচ্চারা এগুলো খাওয়ার সময় জ্বালাতন করে না বলে অনেক বাবা মায়েরা প্রায় রোজই এগুলো কিনে দেন। তার ওপর এখন খেলার জায়গার অভাবে বাচ্চারা ঠিক মতো কায়িক পরিশ্রম করারও সুযোগ পায় না। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এমনিতেই বেড়ে যায়। এছাড়া ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বিশেষত বাবা অথবা মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে বাচ্চাদেরও তা হবার ঝুঁকি থাকে।
ডায়াবেটিসের পুরোপুরিভাবে কখনোই সারানো সম্ভব না! এর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। এটা সত্য যেখানে বড়দের পক্ষেই সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা সম্ভব হয় না সেখানে বাচ্চাদের জন্য ব্যাপারটা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। এজন্য বাবা মায়েদের ছোটবেলা থেকেই সতর্ক হতে হবে।
- বাচ্চাদেরকে ছোট থেকেই সবজি ও ফলমূল খাওয়ানর অভ্যাস করতে হবে। তাদের ডায়েটে ফ্যাট ও কার্বহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
- অতিরিক্ত চিনি খাওয়ানো যাবে না।
- সেই সাথে তাদের দিতে হবে পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগ। বাচ্চাদের খেলার ছলে ব্যায়াম করা শেখাতে হবে।
- তাদেরকে সময় মতো ঘুমানো ও খাওয়ার গুরুত্ব বুঝাতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
- শিশু বয়স থেকেই যদি বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায় তবে পরবর্তীতে তাদের জন্য ডায়াবেটিস মোকাবেলা করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
ছবি – ফটোগ্রাফারস ডট ক্যানেভেরা
লিখেছেন – সাদিয়া রিফাত ইসলাম