বহুদিন আগে শুরু করা টিন-এজে নিজের যত্ন নেয়ার নিয়ম কানুনের তৃতীয় পর্ব নিয়ে এলাম… আসলে আগের দুটো পর্ব খুবি ভয়ে ভয়ে লিখেছিলাম কারণ অনেকের কাছেই আমার লেখার টোন condescending লাগবে বলেই ভেবেছিলাম। তাই অন্যান্য লেখালেখি করলাম মাঝে। ৩য় পর্ব আর লেখা হল না। কিন্তু দেখলাম যতবারই আগের পর্ব দুটি শেয়ার হচ্ছে ততবারই অনেকের কাছ থেকে পজিটিভ ফিডব্যাক পাচ্ছি ! এটা আশার অতীত ছিল। তাই আর দেরি না করে শুরু করলাম নেক্সট পর্ব।
আমি আমার পিউবারটি এবং তারপরেও (বয়স ১২- বয়স ২২) প্রচণ্ড ব্রণের সমস্যায় ভুগেছি। টিনএজের দিনগুলোতে মুখ ভর্তি ব্রণ এবং ব্রণের দাগ নিয়ে ঘরে বসে থেকেছি দিনের পর দিন। নিজের মুখের এই অবস্থা দেখতে ভালো তো লাগেই না, কিন্তু তারচেয়েও বড় প্রবলেম কি ছিল জানেন? আমার সাথে আমার আশেপাশের প্রাপ্তবয়স্ক দের আচরন!এমন দিন গেছে যে ক্লাস ৬ এর আমি বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছি, এক পরিচিত আন্টি আমাকে ডেকে বলেছে-
“এই মেয়ে, তোমার মা তোমার মুখের এই অবস্থা দেখে কিছু বলে না? মাকে বলবে মসুর ডাল বেটে তোমার মুখে লাগিয়ে দিতে। এই অবস্থা এখন হলে বড় হয়ে অনেক ঝামেলা হবে!”
১২ বছরের আমি “বড় হয়ে ঝামেলা হবার চিন্তায়” আমার মাকে মসুর ডাল বেটে দিতে বলিনি। আমার মা নিজেই কিছুদিন পর কোথা থেকে নিম পাতা, কাঁচা হলুদ এসব কি কি যেন বেটে ফ্রিজে রেখে বলেছিল আমি যেন রোজ স্কুল থেকে এসে এই ঘোঁট মুখে মাখি… apparently এক শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবি তাকে বলেছে এটা মাখলে ব্রণ চলে যাবে…
আমি কি খুশি হয়েছিলাম? ব্রণ চলে যাবে শুনে? বড় হয়ে আর “ঝামেলা” হবে না শুনে?
বিঃ দ্রঃ – “ঝামেলা” বলতে এখানে “বিয়ে হতে ঝামেলা হবে মিন করা হচ্ছে” কারণ ব্রণের গর্ত হয়ে গেলে বিয়ে হবে না এজন্য ক্লাস ৬ থেকে প্রস্তুতি নেয়াটা আন্টির মতে আমার এবং আমার মায়ের করনীয়।
না, আমি সাংঘাতিক লজ্জা পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল সবাই নিশ্চয়ই আমাকে খুব কুৎসিত ভাবে, বাইরে গেলে সবাই আমার মুখের ব্রণের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবং বিশ্বাস করুন পাঠক, ব্রণের জন্য কি কি মাখতে হবে সেই জ্ঞান আমার স্কুলের শিক্ষিকাও আমাকে দিয়েছেন… ক্লাস ৮ এ…
স্কুলের খুব ভিভিড স্মৃতিগুলোর মধ্যে এই দিন কয়েকটা খুব উজ্জ্বল… নিজের বিচার বুদ্ধি ব্যবহার করে বলুন, ১২-১৩ বছরের বাচ্চার স্মৃতিতে এ ধরনের কিছু থাকা উচিত কিনা!
এবং এক্স্যাক্টলি ক’জন নারী পুরুষ এখন এই লেখাটি পড়ছেন যাদের সাথে এই একি ঘটনা ঘটেছে? এবং এখনও ঘটছে ?
আপনি যদি “ব্রণ” শব্দটা দেখে পোস্ট পড়া শুরু করেন তাহলে নিশ্চয়ই এক্সপেক্ট করছেন যে যেকন মুহূর্তে আমি ১,২,৩ নাম্বার দিয়ে ব্রণ দূরীকরণ ম্যাজিকাল মলম/পুলটিস/পানিপড়া/তেলপড়া/ ক্রিমের নাম লেখা শুরু করে দেব! তাই না? অনলাইন পেজে তাইতো দেখি আমরা…
আপনাকে হতাশ করতে বাধ্য হব… ওয়েবসাইটের স্বল্প পরিসরে টিন এজে ব্রণের কারণ, সমস্যার ফলে তৈরি দাগ, গর্ত, দাগ গর্তের ফলে তৈরি মানসিক কষ্ট, আশে পাশের “সো কলড শুভাকাঙ্ক্ষীদের” “হেল্প”, ব্রণের আসল প্রতিকার সব মাত্র ৫/১০ টা মাস্ক/ ক্রিম দিয়ে ঠিক করে ফেলা গেলে ভালোই হত… কিন্তু ম্যাজিক হ্যারি পটারের পাতাতেই সত্যি, রিয়েল ওয়ার্ল্ডে এমন কিছু নেই!
[picture]
আগে ১২ বছরের আমি (ইন্টারনেট ফেসবুকের আগের যুগ) ঘরের দরজা বন্ধ করে গল্পের বই পড়তাম, যাতে ভুলেও এই কুৎসিত ব্রণ ভর্তি মুখ নিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষীর সামনে আমাকে পড়তে না হয়… আর আজকের ফেসবুকিয় ১২ বছরের বালক বালিকা, বীরদর্পে ফেসবুকে পাওয়া জাদুকরী মাস্ক রেসিপি নিজে নিজে বানিয়ে মুখে মেখে ফেলে… যাতে শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে আর “হেল্পফুল উপদেশ” দিতেই না আসে… তাই না?
যেহেতু বুঝে গেছেন পোস্টের নামে ব্রণ শব্দটি থাকলেও এটা আসলে – “জেনে নিন কীভাবে ব্রণ দূর করবেন মাত্র ৫ টি ক্রিমে/ মাস্কে/ পরশপাথরের ছোঁয়ায়” –মার্কা কিছু নয়, অনেকে এতক্ষণে বিরক্ত হয়ে পড়া বন্ধ করেছেন… যারা এখনও আছেন তারা চলুন নেক্সট ধাপে…
কেন ১২ -১৩ বছরের বাচ্চার মুখে ব্রণ উঠেছে? কেনই বা সেই ব্রণ ৮-৯ বছর ধরে উঠেই যাচ্ছে… ?
আপনার বয়স যদি ১৩-১৯ হয়ে থাকে এবং আপনি রেগুলার স্কিনে ব্রণের সমস্যা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের “ভালো চাওয়ায়” অতিষ্ঠ হয়ে থাকেন তবে আগে খুব ভালোভাবে জেনে নিন, এক্স্যাক্টলি কোন কোন কারণে আপনার মুখে ব্রণ উঠছে-
স্কিনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে যাকে বলে রোমকূপ। এই রোমকূপের মুখে তেল ময়লা জমে গেলে এর ভেতর থেকে স্কিনের ন্যাচারাল তেল যার নাম সেবাম, সে বের হতে পারে না। তখন এই সেবাম জমে যায় রোমকূপের ভেতরেই, এতে ইনফেকশন হয়, হতে হতে একসময় রোমকূপটা আহত হয়ে ফেটে যেতে/ বড় হতে শুরু করে। এর রঙ হয় লাল এবং স্কিনের ওই অঞ্চলে লালচে ভাব দেখা যায়, এবং ব্যথা, চুলকানি শুরু হয়। শুধু ময়লা তেলের জন্যই নয়, অনেক সময় স্কিন এত বেশি সেবাম তৈরি করে যে পরিষ্কার রোমকূপ থেকেও পুরোটা বের হতে পারে না। তখনও রোমকূপ একইভাবে আহত হয়। আর এই পুরো বেপারটাই হচ্ছে- “ব্রণ”
তো এখানে কালপ্রিট কে?
- বাইরে জমে থাকা ময়লা, তেল
- স্কিনের নিজের তৈরি করা সেবাম।
(অনেকেই এখন 1+1 = window হিসাব করে নিজের বুদ্ধিতে অভিভূত হয়ে দিনে ১০ বার সাবান দিয়ে মুখ ধোয়া শুরু করবেন তাই না? জোক করছি না, এমন ইনবক্স আমরা পেয়েছি যেখানে ব্রণ কাউন্টার করতে নিজে ফন্দি এঁটে একজন দিনে ১০ বার মুখ ধুচ্ছেন ! )
থামুন, “ পেয়েছিরে” বলে প্রব্লেমের উপরে লাফিয়ে পড়বেন না… কারণ সমস্যা এর থেকে একটু কমপ্লেক্স!
কীভাবে মুখে ময়লা আসে?
যদি দিনে ৩ বার মুখ ধুলেই সারাদিন স্কিন জার্ম ফ্রি থাকতো ভালোই হত। কিন্তু, ব্যাকটেরিয়া ময়লা আমাদের আশে পাশে সব খানে আছে। আপনি ঘরের ভেতরে বসে আছেন? ঘরের বাতাসে মিলিয়নের উপরে ধুলা ময়লা আছে। রাস্তায় বের হলে তো কথাই নেই! এগুলো আমরা জানি। কিন্তু মুখে সবচেয়ে বেশি ময়লা, তেল ব্যাকটেরিয়া আসে কিন্তু অন্য জায়গা থেকে –
(১) আপনার হাত- বাসের হ্যান্ডল ধরেছেন, টাকা লেনদেন করেছেন। এরপর স্কুলে পৌঁছুলেন। সেই হাতটা গালে লাগিয়ে বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডায় বসলেন। ফলাফল, পরদিন গালে ব্রণ! আপনি অবাক! আরে! এতো কিছু মাখি আমি, এতো ক্লিন রাখি মুখ, তাও ব্রণ কেন যায় না? ক্রিমের সাথে সাথে পুরো এলাকার সব জার্ম স্যাম্পলও যে আপনি হাতে করে মুখে মেখেছেন! সেটা লক্ষ্য করেছেন কখনও?
(২) মোবাইল স্ক্রিন- গালে মোবাইল ঠেকিয়ে কথা বলছেন? ঘণ্টার পর ঘণ্টা? আপনি কি জানেন আপনার মোবাইল স্ক্রিন টেস্ট করলে আজ থেকে ১ বছর আগে গালে কোন ক্রিম মেখেছিলেন সেটার কিছু অংশ এখনও পাওয়া যাবে? ঘৃণা হচ্ছে? হওয়া উচিত… অপরিস্কার মোবাইল স্ক্রিন থেকে স্কিনে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হওয়াটা খুবি স্বাভাবিক। এবং না, একটা ন্যাকড়া/ জামায় ঘষে নিলেই জার্ম চলে যাবে না। অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ওয়াইপ অথবা রাবিং অ্যালকোহল দিয়ে রোজ স্ক্রিন পরিস্কার করতে হবে, এবং ট্রাই করুন হেডফোন দিয়ে কথা বলতে। মোবাইল কোম্পানির অ্যাডের মডেলের মতো ভঙ্গি করেই কথা বলতে হবে এমন কোন রুলস নেই।
(৩) নোংরা চুল, নোংরা বালিশ ও কাভার- ম্যাক্সিমাম ছেলে মেয়েদের চুল বিভিন্ন কাটের জন্য মুখে এসে পড়ে বার বার। অনেকে চুলে তেল দেন সেই চুলের তেল এই ব্যাংস বেয়ে এসে আপনার মুখে লাগে। সপ্তাহে ২-৩ রাত চুলে তেল নিয়ে ঘুমিয়েছেন, ১ মাস ধরে বালিসের কাভার চেঞ্জ করেননি। উলটো পাল্টা হয়ে বালিসে মুখ ঘষে রাতে ঘুমাচ্ছেন? কি হচ্ছে? সারা মাসের চুলের তেল, ময়লা, খুশকি সব চাষবাস করে যত ব্যাকটেরিয়া বানিয়েছে সবকিছুতে মুখ ঘষে নিচ্ছেন! ফলে কি হচ্ছে? একের পর এক ব্রণের উৎপত্তি হচ্ছে? রিলেট করতে পারছেন কি?
তো উপরের কোন কিছু অথবা সব কিছুই কি আপনি করেন? এবং আপনি চিন্তায় মরে যাচ্ছেন? যে মুখ ১০ বার ধুয়েও ব্রণ যায় না কেন? প্লিজ মুখ ধোয়া কমান। যেসব জিনিস পরিষ্কার রাখা উচিত সেগুলো পরিস্কার করুন, ওকে?
- কোনভাবেই ফ্রেশলি ধোয়া হাত না হলে সেই হাত দিয়ে মুখ টাচ করবেন না। অবশ্যই অবশ্যই হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোবেন। বাইরে গেলে সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখবেন। হাত পরিষ্কার রাখা খুবি ভালো অভ্যাস, টিন এজেই এটা তৈরি করে ফেলবেন।
- আগেই বলে দিয়েছি, রোজ /২-৩ দিনে একবার অবশ্যই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ওয়াইপ অথবা রাবিং অ্যালকোহল দিয়ে মোবাইল স্ক্রিন পরিষ্কার করবেন। চুলে তেল কোনভাবেই এক রাতের বেশি রাখবেন না। আরও ভালো হয় ২ ঘণ্টা পরেই শাম্পু করে ফেললে। বেশি ভাত খেলে বেশি মোটা হবেন, এই রুল তেলের বেলায় খাটে না। অনেকে ৩-৪ দিন মাথায় তেল দিয়ে রেখে চুলের বাম্পার চাষ করবেন বলে বিশ্বাস করেন। তাদের জন্য এই পয়েন্ট বেশি ইম্পরট্যান্ট। আপনি চুলও নষ্ট করছেন, স্কিনও নষ্ট করছেন।
- বালিশের কাভার প্রতি তিন দিনে একবার চেঞ্জ করবেন। ভালো হয় বালিসে মুখ টাচ যেন না করে সেই হ্যাবিট বানাতে পারলে। আমি পারসনালি এতে বেস্ট রেজাল্ট পেয়েছি। কিন্তু সেটা না পারলে কাভার চেঞ্জ আপনাকে করতেই হবে।
নেক্সট পয়েন্ট, স্কিন অতিরিক্ত সেবাম প্রডিউস কেন করে?
প্রথমত, ১৩-১৯ বয়সটা বৃদ্ধির। এখন আপনি বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হবার মধ্যে আছেন… স্কুলের বইয়ের এই চ্যাপ্টার আমার টিচার সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছিলেন, হয়ত আপনার টিচারও গেছেন। কিন্তু আপনার শরীরে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে এটা বোঝার জন্য ওই চ্যাপ্টার নিয়ে বন্ধুদের সাথে কুৎসিত রসিকতা না করে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। নিজের এবং বিপরীত লিঙ্গের মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন বুঝতে চেষ্টা করুন। আফটার অল এই যে বিভিন্ন ভুল ধারণা, ফলাফলের হতাশা এসবই কিন্তু হচ্ছে মন দিয়ে বয়ঃসন্ধির ব্যাপারটা না বোঝার কারণে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আন্টিও বোঝেননি, আমার টিচারও বোঝেননি, আমিও বুঝিনি (বুঝলে নিজের স্বাভাবিকতার জন্য লজ্জিত হতাম না নিশ্চয়ই!) আশা করি আপনারা কেউ কেউ স্বাভাবিক বিষয়কে স্বাভাবিকভাবে দেখবেন।
এই বয়সে শরীর অনেকগুলো হরমোন নিঃসরণ শুরু করে দেহের বৃদ্ধি ঘটিয়ে একে পূর্ণ রূপ দেবার জন্য, গ্রোথ স্পারট হয়, এবং শুক্রাণু ডিম্বাণু নিঃসরণ এবং অন্যান্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাচ্চা যখন ছিলেন তখন ছেলে মেয়ে দুই দল মোটামুটি সমান থাকলেও এই পর্যায়ে এসে এরা একটু আলাদা হতে শুরু করে। এবং দুই ধরনের দেহে আলাদা দুই হরমোন বেরতে শুরু করে। হরমোন কি? কোনগুলো বের হয় এসব স্কুলের বইতে লেখা আছে পড়ে নিন।
এক জিনিস বারবার লিখব না। যেটা লিখব সেটা হচ্ছে, হরমোন সবার দেহে একইভাবে, একই পরিমাণে নিঃসরিত হয় না। অনেক সময় একটু এদিক ওদিক (যেটা এমনিতেই একেবারেই হারমলেস) হয়ে থাকে। যে কারণে দেহের ইনফ্লেমেশন খুব বেড়ে যেতে পারে । এর ফলে ত্বক খুব সেনসিটিভ হয়ে যাওয়া এবং ব্রণ লাল হয়ে প্রচণ্ড ব্যথা করা, অনেক পুঁজ তৈরি হওয়া এসব হতে পারে।
আরেকটা ঘটনা এসময় ঘটতে পারে, সেটা হচ্ছে স্কিনের সেবাম গ্ল্যান্ড অতিরিক্ত সচল হওয়া। অর্থাৎ সে দরকারের থেকেও বেশি সেবাম তৈরি করতে শুরু করবে।
আর এই দুই জিনিসেই স্কিনের ব্রণের প্রকোপ, আকার আকৃতি সবই বেড়ে যায়। (কি বাজে ব্যাপার তাই না?) এই দুটো প্রক্রিয়াই যদি আপনার ১৩-১৯ বছর বয়সে ঘটে থাকে তবে মোস্ট লাইকলি আপনি আজ ব্রণের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এবং স্কিন অনেক কেয়ার নিয়ে পরিস্কার রেখেও ব্রণ কনট্রোল করতে পারছেন না।
খুব সংক্ষেপে নন মেডিক্যাল অ্যান্ড নিজে একজন সাফারার হয়ে আমার মতে এইগুলোই টিন এজে ব্রণ ওঠার প্রধান কারণ। তাহলে আসুন এখন জেনে নিই কেন ব্রণ ওঠে না-
(১) পাপের ফল হিসেবে ব্রণ হয় না। সো কোন বন্ধু ফিচলে হাসি দিয়ে আপনার ব্রণ দেখে এ ধরনের মন্তব্য করলে সেটা বিশ্বাস করে বসে থাকবেন না।
(২) অন্য বান্ধবীরা ১৩-১৪ বছরের বাচ্চা বয়সে পার্লারে “ম্যাসাজ” (এই জিনিস কি এবং এতে কি হয় আমি এখনও বুঝলাম না! কিন্তু আপারেনটলি আমাদের অনেক পাঠক রেগুলার “ম্যাসাজ” করেন! ) ফেসিয়াল, ফেয়ার পলিশ করায়, আপনি করেন না। সেই বান্ধবিদের কেউ বলল আপনি এগুলো করেন না বলেই আপনার মুখে ব্রণ । “ভুল” খবরদার, তাদের এসব কথায় বিশ্বাস করবেন না।
(৩) পাড়ার আন্টি বাসায় বেড়াতে এসে বলল আপনি ডেইলি মুখে নিম পাতা, চাল, ডাল মাখেন না বলে ব্রণ ওঠে। এটাও ভুল। ভদ্রভাবে হেসে মাথা নাড়ুন। তারপরে এসব ভুলে যান।
আসুন জেনে নিই, টিন এজের ব্রণের ফলে কী কী হতে পারে ভবিষ্যতে-
(১) আপনি যদি পরিষ্কার হাত তত্তে বিশ্বাসী না হয়ে থাকেন এবং রোজ ১ ঘণ্টা আয়নায় দারিয়ে ব্রণ খুঁটে খুঁটে ভেতরের পুঁজ বের করার চেষ্টা করেন, অথবা আরও ভয়াবহ, পার্লারে ম্যাসাজ করে আকনে সটীক নামক জিনিস দিয়ে টিপে ব্রণ স্কিনের ভেতরে ফেরত পাথাবার ট্রাই করেন তবে ১০০% চান্স আছে আপনার স্কিনে খুবি খুবি খুবি দীর্ঘস্থায়ী একটা দাগ পড়বে। কেন? পরের পড়বে আলাপ করব। কিন্তু আমার হাঁটুতে ছোটবেলায় পড়ে গিয়ে ছিলে যাওয়ার একটা দাগ আজ ১০ বছর পড়েও আছে। অ্যান্ড বিলিভ মি, আমি যতটুকু জোরে পড়ে গিয়েছিলাম টার চেয়েও বেশি জোর দিয়ে অনেকে নিজের গালের ব্রণে চাপ দেন! এবং না, সামনে বড় বনের বিয়ে বলে ১ সপ্তাহে মন্ত্রবলে এই দাগ আপনি উড়িয়ে দিতে পারবেন না। সো ব্রণ টেপার অভ্যাস থাকলে কএকবছর মুখে দাগ নিয়ে ঘোরার প্রস্তুতি নিয়ে গালে হাত দিন। “১ সপ্তাহে দাগ ছুমন্তর করে দিন আপি” এই ধরনের মামার বাড়ির আবদার তখন আর করবেন না। কেমন!
(২) ব্রণ অতিরিক্ত খোঁটাখুঁটি খোটাখুঁটি করে দাগ পড়ে গেছে? আপনি বেঁচে গেছেন! আপনার স্কিনে গর্ত হয়ে যেতে পারত। আমার মুখ ভর্তি ব্রণের সময়টায় আমার মা তটস্থ থাকতেন এবং বারবার আমাকে মুখে হাত না দেবার কথা মনে করিয়ে দিতেন যেন স্কিনে গর্ত না পড়ে। এবং আমার ১৩-১৯ বছর বয়স্ক ভাই ও বোনেরা, অমুক এর মা, তমুক স্পা, অমুক ক্রিম, সমুক ফেসিয়াল যতই চিৎকার চেঁচামেচি করুক না কেন! মুখ থেকে ব্রণের গর্ত প্রফেসনাল কেমিক্যাল পিল/ মাইক্রোনিডলিং/ মাইক্রোডারমব্রেশন আবার খুব ভয়ঙ্কর কেসে ফেসিয়াল ফিলার ছাড়া দূর করা একেবারেই অসম্ভব।
সো ২ টা ফেসিয়াল করে সব ঠিক করে ফেলব। পাড়ার পার্লারে ট্রিটমেন্ট করে ভেবে নতুন উদ্যমে ব্রণ টেপা শুরু করেছেন কি মরেছেন! যতক্ষণে আপনি টের পাবেন যে ফেসিয়াল, ক্রিম, ম্যাসাজ করে ঘণ্টা লাভ হয়েছে আপনার ততক্ষণে আপনি লাখের উপরে টাকা পার্লারে ঢেলে দিয়ে আসবেন।
এবং প্লিজ মনে রাখুন, আপনি বাচ্চা, সো মোস্ট লাইকলি আব্বু আম্মুর টাকা খরচ করছেন, সো কাইন্ডলি তাদের কস্টের টাকা বিনা কারণে এইসবের পেছনে ওড়াবেন না।
এখন আসুন জানি, টিন এজের ব্রণে ভবিষ্যতে কী কী হবে না-
(১) “ঝামেলা” হবে না। সুতরাং প্রাপ্তবয়স্করা যদি এই লেখা পড়ে থাকেন তবে, নিজের নাকটা যেখানে বিলং করে সেখানে তাকে যত্ন করে রেখে দিন। এবং টিন এজাররা, আবার ভদ্র হাসি দিয়ে মাথা কাত করুন। তারপরে “ঝামেলার” কথা ভুলে যান।
(২) এখন আপনার মুখে ব্রণ আছে তার মানে সারাজীবন থাকবে তা কিন্তু নয়! সো প্যানিক করবেন না। আপনার ফ্রেন্ডদের সবাই মধ্যে আপনার ব্রণ বেশি? এতে আপনার সম্মান/ গুণ/ দোষ/ রূপ কোনটাই বাড়ছেও না কমছেও না। জানি কম্পেয়ার করে মাথা ঠাণ্ডা করা আর মনে কষ্ট না পাওয়াটা টাফ। কিন্তু চেষ্টা করুন প্লিজ।
জানি অনেকেই কমেন্ট বক্সে গালাগাল করে নিজের চরিত্র এবং আপব্রিঙ্গিং এর পরিচয় দেয়া শুরু করে দিয়েছেন এতক্ষণে, যে এত কেচাল করলাম, কি সেই মলম যেটা মাখলে ব্রণ চলে যাবে সেটার কথা বললাম না! তার সময় নষ্ট হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমি আজ সেই কথাগুলই লিখেছি যেগুলো আমি নিজে যখন ১৪ বছর বয়সে মুখ ভর্তি ব্রণ নিয়ে মন খারাপ করে বসে থেকেছি তখন একজন রেস্পন্সিবল অ্যাডালট আমাকে বললে আমার একটু হলেও কাজে লাগত। সুতরাং এই লেখায় কেউ যদি একটা হেল্পফুল লাইনও পান আমি খুশি হব।
আজ কাভার করলাম ব্রণ কেন হয়, কেন হয় না, এবং ব্রণ দেখে আমাদের সমাজের কিছু অসুস্থ মানুসের কথায় কেন আমরা কান দেব না সেটা নিয়ে। নেক্সট লেখায়, ব্রণ প্রিভেনট করতে টিন এজে এক্স্যাক্টলি কি করবেন এবং কি করবেন না সেটা সময় নিয়ে বিস্তারিত লিখব। দয়া করে অপেক্ষা করুন।
আগের পর্ব:
আপনি কি টিন-এজার? নিজের যত্ন নিজেই নিতে শিখুন (পর্ব-১)
আপনি কি টিন-এজার? কীভাবে করবেন প্রপার ক্লিনজিং! (পর্ব-২)
ছবি – ফটোগ্রাফারস ডট ক্যানেভেরা
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মীম