আর কয়েক মাস বাদেই বিয়ের ঘণ্টাটা বাজতে চলেছে। হাতে বেশি সময়ও নেই আমার। সপ্তাহে ছয় দিনই আট ঘণ্টা কাজ করে এসে শরীরে আর সেই জোর থাকে না যে নেট ঘেঁটে এটা ওটা বের করে বেটে-টেটে মুখে লাগিয়ে বসে থাকব। এই দিনগুলোতে বাড়িতে এসে কোনরকম মুখটা ক্লিন করেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়াই আমার কাজ। নিজে কষ্ট করে এক গ্লাস পানি খেতে ইচ্ছে করে না সেখানে হোম মেইড ফেইসপ্যাক বানিয়ে তারপর মুখে অ্যাপ্লাই করে বসে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। তাহলে কেবল একটি উপায়ই বাদ থাকে তা হলো পার্লার। ছুটির দিনে লম্বা সময় জ্যাম ঠেলে পার্লারের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তাড়াহুড়ো করে এক দিনেই ফেসিয়াল, মেনিকিউর-পেডিকিউর, ওয়াক্স করার মতো বোকামিটাই আমি এতো দিন করে এসেছি। এতে করে সময়ের সাথে সাথে কিন্তু টাকাগুলোও জলেই ফেলেছি। যারা আমার মতো কর্মজীবী একই সাথে টু বি ব্রাইড তারা হয় তো এই একটি দিন চাইবেন পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। এই সময়গুলো তো আর এভাবে ফিরে আসবে না! কিন্তু বিয়েতে সুন্দর লাগতেই হবে। আর সুন্দর ফ্ললেস মেকাপের জন্য স্কিনটাও হওয়া চাই। ভাবছিলাম আমাদের দেশে যদি এমন কোন সেবা থাকতো বাসায় বসেই এই সুবিধাগুলো পাওয়া যেত!
অফিস কলিগের সাথে আলাপকালে জানতে পারলাম আমি আসলেই বোকার রাজ্যে বাস করছি। আমার ফেল কলিগ বলল সে তো গত দু’মাস নাকি পার্লারেরই মুখ দেখেনি। অথচ বাসায় বসে বসে সেই সেবা পাচ্ছেন! তার কাছ থেকে জানতে পারলাম “সেবা এক্স ওয়াই জেড” সুবিধাটা নিয়ে এসেছে! শুনে তো মনে হল আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেছি। ঝটপট জিজ্ঞেস করলাম কেমন লেগেছে সে বলল, ভালো লেগেছে। আমারও মনে হল একবার ট্রাই করা মাস্ট! কথা চলছে এরই মধ্যে সেবার অ্যাপ টি ডাউনলোড করে ফেললাম। সোজা ট্রেন্ডিং অপশনে গিয়ে বিউটি সার্ভিস এ ক্লিক করতেই ফেসিয়াল, হেয়ার ট্রিটমেন্ট, মেকআপ, ব্রাইডাল মেকাপসহ আর কিছু অপশন দেখতে পেলাম। প্রথমেই ফেসিয়াল অপশনটাতে গিয়ে গ্লো ফেসিয়ালটা সিলেক্ট করে তার সাথে ফুট ওয়্যাক্স অ্যাড করে দিলাম।
[picture]
ব্যস, ৩০ মিনিটের মধ্যেই বেল বাজার শব্দ!! খুলে আমি অবাক! আমার ধারণা ছিল কমপক্ষে ১ ঘণ্টা তো আমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। প্রথম ধাক্কাতেই আমি ইম্প্রেসড! এবার বলি আসল পার্টটা নিয়ে ফেসিয়ালের ধরণ অনুযায়ী প্রাইসটা আমার কাছে ঠিক লেগেছে আমি সাধারণত যেই পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করাতাম প্রাইস রেঞ্জটা তেমনই। ওহ এখন তো কত পড়েছে তাই বলা হল না। আচ্ছা আগেই বলেছিলাম যে গ্লো ফেসিয়ালের সাথে আমি ফুট ওয়্যাক্স জুড়ে দিয়েছিলাম। গ্লো ফেসিয়াল এর জন্য ৮০০ এবং ফুট ওয়াক্স এর জন্য ৫০০ টাকা। সো টোটাল বিল হয়েছিল ১৫০০ টাকা। প্রাইস আমার কাছে ঠিকই মনে হয়েছে। কারণ নিজের ঘরে বসে অ্যাকচুয়ালি নিজের কমফোর্ট জন এ এভাবে ফেসিয়াল করানোটা আমার জন্য নতুন এবং এমনটাই তো চাচ্ছিলাম। কারণ পার্লারে গিয়ে তাদের দেয়া স্কার্ট জড়ানোটা আমার ব্যস অপছন্দের! এবং অস্বস্তিবোধ তো থাকেই।
এবার আসা যাক সার্ভিসের ব্যাপারটিতে। অর্ডারটি প্লেস করার সময় এই ফেসিয়ালে কি কি ধাপ ফলো করা হবে তা উল্লেখ করাই ছিল। দেখলাম প্রপার ক্লিঞ্জিং থেকে শুরু করে স্ক্রাবিং, ব্ল্যাকহেডস রিমুভিং এবং মাস্ক অ্যাপ্লাইং সবশেষে ময়েশ্চারাইজিং প্রতিটা ধাপ খুব যত্ন নিয়ে মেয়েটি করে দিয়েছে। এবং সে যে বেশ স্কিল্ড এই প্রফেশনে তা তার কাজ দেখেই বুঝতে পেরেছি। অথচ পার্লারে প্রতিবার আমাকে বলতে হয়েছে আপু এটা একটু সাবধানে করবেন আমার স্কিন বেশ সেনসিটিভ। অথছ এই মেয়েটি প্রথমে এসেই আমাকে বেশ ভালো করে লক্ষ্য করে বলল ম্যাডাম আপনার স্কিন অনেক পাতলা এবং সেনসিটিভ আমি সেটা মাথায় রেখেই ম্যাসাজ থেকে শুরু করে সবগুল স্টেপ ফলো করবো। ভালোই লাগলো। এবং আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি আসলেই সে খুবই ভালো করেই ফেসিয়ালের পর্বটি শেষ করেছিল।
এরপর আসি ওয়্যাক্স করার পালায়।ওয়্যাক্স করার সময় পার্লারের যে বিষয়টি খুব বিরক্তিকর লাগত তা হল বেশ গরম মানে স্কিন পুড়ে যাওয়ার মতো গরম অবস্থায় স্কিনে লাগিয়ে দিত। এই ব্যাপারটির কারণে আমি পার্লারে গিয়ে ওয়্যাক্স করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই সেবাটি নেয়ার সময় এমন কোন সমস্যা হয়নি। বেশ স্মুদলি পেইনফুল ওয়্যাক্স সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল।
সব মিলিয়ে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটে আমার ফেসিয়াল এবং ফুল ওয়্যাক্স সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। আর একটি ব্যাপার যেটি আমার ভালো লেগেছে তা হল সার্ভিসটি শেষ হওয়ার পরেই পে করতে হয়।
সবশেষে আমি বলব “সেবা এক্স ওয়াই জেড”র এই সেবাটিতে আমার মতো যারা কর্মজীবী তাদের জন্য আকাশের চাঁদ পাবার মতো একটি বিষয়। আমি তো এখন সেবার লয়াল কাস্টমারে পরিণত হয়েছি। আপনাকেও সাজেস্ট করবো একবার হলেও এই সেবা এক্স ওয়াই জেড এর সার্ভিস নিয়ে দেখুন।
লিখেছেন – নীলা