শীতের হাওয়া দিন দিন তীব্র হতে শুরু করেছে। আর এই সময়টাতে তো তৈলাক্ত ত্বকও তার নিজস্ব ময়েশ্চার হারাতে থাকে সেখানে শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের অবস্থাটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে! তাই আজকের পুরো লেখাটি সাজানো হয়েছে ড্রাই বা শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের স্কিন কেয়ার নিয়ে। আমারা কমবেশি সবাই জানি, সাধারনত ৫টি ধরন আছে স্কিনের। অয়েলি স্কিন, ড্রাই স্কিন, নরমাল স্কিন, কম্বিনেশন স্কিন, সেনসিটিভ স্কিন। এই ৫ ধরনের মধ্যে সবচেয়ে কমন হলো ড্রাই স্কিন। তাছাড়াও তরুণদের তুলনায় যাদের বয়স ৬৪ বছরের উপরে, তাদের স্কিন ড্রাই হয়ে যায়। গবেষনায় দেখা যায়, যে সকল মহিলাদের স্কিন ড্রাই, তারা তাদের অধিকাংশ টাকাই খরচ করে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের পেছনে। তাই আজ আমরা জানবো, ড্রাই স্কিন সম্পর্কে।
আপনার ত্বক যে শুষ্ক টা বুঝবেন কি করে? ড্রাই স্কিনের প্রধান লক্ষণ হলো, এই ধরনের স্কিন খুব বেশী রুক্ষ, শুষ্ক হয় এবং ড্রাই রেড প্যাচ দেখা যায়। মাঝে মাঝে এগুলোতে ইচিং হয়। বিশেষ করে, কনুই, হাত, নাকের দুই পাশ, মুখের চারপাশ, তলপেট, হাটু, পায়ের পাতা, গোড়ালি ইত্যাদি জায়গা বেশি ড্রাই হয়।
[picture]
এবার চলুন জেনে নিই, ড্রাই স্কিনের কারণগুলো কী কী হতে পারে?
(১) স্কিন এবং বডি ডিহাইড্রেট রাখা।
(২) শীতকালীন আবহাওয়া ডাই স্কিনের কারন। এইসময় যে কোনো টাইপের স্কিনই কিছুটা হলেও ড্রাই হয়ে যায়।
(৩) দীর্ঘ সময় ধরে হট শাওয়ার নেওয়ার ফলেও স্কিন ড্রাই হয়ে যেতে পারে।
(৪) অনেকেই আছেন, যারা জ্বিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজান। ঠোঁট ড্রাই হয়ে যাওয়ার এটা একটা বড় কারণ।
(৫) বডি লোশন ব্যবহার না করা।
(৬) যারা গৃহিনী, তাদের দিনে প্রচুর পরিমানে হাত ধোয়া হয়। এর ফলে স্কিন ড্রাই হয়ে যায়।
(৭) সঠিক খাদ্য গ্রহন না করাও ড্রাই স্কিনের কারন হতে পারে।
ড্রাই স্কিনের অধিকারীদের যে সকল জিনিস মেনে চলা উচিত!
(১) ডিহাইড্রেশন ড্রাই স্কিনের অনেক বড় কারণ। তাই চেষ্টা করবেন ডেইলি এটলিস্ট ৮ গ্লাস পানি পান করতে।
(২) পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব স্কিন ড্রাই হয়ে যাওয়া, পিম্পল এবং রিংকেলের কারণ হতে পারে। তাই ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর অবশ্যই চেষ্টা করবেন।
(৩) প্রতিবার হাত ধোয়ার পর, হাত মুছে অবশ্যই হ্যান্ড ক্রিম লাগাবেন।
(৪) যতোটা পারবেন হট শাওয়ার এভয়েড করার চেষ্টা করবেন।
(৫) শাওয়ার সবসময় ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করবেন।
(৬) গোসলের জন্যে সবসময় যে কোনো ভালো মানের ময়েশ্চারাইজিং সোপ ব্যবহার করবেন।
(৭) প্রতিবার মুখ পরিষ্কারের পর অবশ্যই ভালো মানের ড্রাই স্কিনের উপযোগী ময়েশ্চারাইজার এবং বডি পার্টস এর জন্যে বডি লোশন ব্যবহার করবেন।
(৮) স্কিনে ড্রাই প্যাচ দেখা গেলে সেগুলো স্ক্রাবিং করে তোলার চেষ্টা করবেন না।
(৯) গোসলের পর কোনো সফট টাওয়ালের সাহায্যে স্কিন প্যাট ড্রাই করে নিবেন।
(১০) আপনার ডায়েট ফুডে অবশ্যই হলুদ, জিরা, ধনিয়া রাখবেন।
এই শীতে ঘরে বসে নিজেই জেন নিজের যত্ন নিতে পারেন সেজন্য কিছু হোম রেমেডি দিয়ে দিচ্ছি-
- স্কিন এক্সফোলিয়েটের জন্যে ব্যবহার করবেন টকদই। এটি স্কিনকে মাইল্ডভাবে এক্সফোলিয়েট করে এবং স্কিনের ড্রাইনেস দূর করতে সাহায্য করে।
- মধুকে ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার বলা হয়। যে কোনো ফেইস প্যাকের সাথে মধু যোগ করতে পারেন। এছাড়াও – টকদই ১ টেবিল চামচ, কোকো পাউডার ১ টেবিল চামচ, মধু হাফ টেবিল চামচ। এই ৩ টি ইনগ্রিডিয়েন্টস মিলিয়ে একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে নিন। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন এবং ময়েশ্চারাইজার লাগান।
- একটি পাকা এভোকেডো নিয়ে এটি কাটা চামচের সাহায্যে ম্যাশ করে নিন। এর মধ্যে ১ চা চামচ মধু যোগ করুন। এই প্যাকটি মুখসহ পুরো বডিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এভোকেডো আপনার স্কিনকে নারিশড করতে সাহায্য করবে।
- কাঁচা দুধ একটি কটনপ্যাডে নিয়ে আপনার ফেস এবং বডিতে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। বেষ্ট রেজাল্টের জন্যে দিন ২ বার করুন।
- গোসলের আগে ১ টেবিল চামচ মিল্ক ক্রিমের সাথে ৩-৪ ফোটা লেবুর রস মিলিয়ে নিয়ে ফেইস এ লাগান। ১০ মিনিট পর গোসল সেরে নিন। এটি স্কিনের এক্সট্রা ড্রাইনেস দূর করবে।
এই তো জেনে নিলেন, ড্রাই স্কিনের আগাগোড়া। আশা করছি এই শীতে শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের একটু হলেও সাহায্য করতে পেরেছি। ভালো থাকবেন।
ছবি – চার্লিসম্যাগাজিন ডট কম
লিখেছেন – জান্নাতুল মৌ