অফিসের কাজের প্রেশারে নিজের জন্য সময়ই বের করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সারাদিন অফিসের কাজের শেষে বাসায় ফিরেই ঘুম। চেহারায় দিব্যি অযত্নের ছাপ চলে এসেছে। ধরুন, এরই মধ্যে আবার এক কাজিনের বিয়ে। যত যাই হক রূপচর্চার জন্য তো সময় বের করাই লাগে! তবে হাতে তো বেশি সময় নেই তিন দিনের মধ্যেই আবার আগের যায়গায় চলে যেতে হবে। এমন সব সিচ্যুয়েশনে যখন হাতে বেশি সময় নেই আবার ইনস্ট্যান্ট গ্লো-ও প্রয়োজন তখন অনেকেই হাল ছেড়ে দেন ভাবেন এত অল্প সময়ে কীভাবে সম্ভব!
এমন সময় অনেকেরই হাতের কাছের সবচেয়ে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী জিনিসটি রেখে আরেকটু ফর্সা হবার আশায় দামি দামি প্রোডাক্ট ঘষার সাথে সাথে একমাত্র পরিত্রাণের উপায় হয়ে দাড়ায় পার্লার। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারে যে স্থায়ী এবং কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই উজ্জ্বল হওয়া সম্ভব তাও ভুলে যাই। আজ আপনাদের সাথে তেমনই একটি প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে কথা বলব যা আপনার ত্বকে ইনস্ট্যান্ট গ্লো এনে দিবে। আর তা হলো কোকোনাট মিল্ক!
বেসিক্যালি নারকেলের ম্যাচিউরিটি পর্যায়ে ভেতরের নরম সাদা অংশ থেকে মূলত একটি প্রক্রিয়ায় সাদা বর্ণের এক ধরণের ঘন নির্যাস বের করা হয় সেটাই আসলে কোকোনাট মিল্ক হিসেবে পরিচিত। ত্বকের ময়েশ্চার লেভেল ধরে রাখতে যেমনি নারকেল তেল যেমন কার্যকরী ভুমিকা পালন করে ঠিক তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিন্তু কোকোনাট মিল্কের জুরি মেলা ভার। এতে বিদ্যমান ভিটামিন বি৩, বি৫ এবং ভিটামিন সি মূলত ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও আয়রন এবং প্রোটিনের দারুণ উৎস হওয়ায় ত্বকের ময়েশ্চার লেভেল ব্যালেন্সড রাখতে সাহায্য করে।
[picture]
এই তো গেল ত্বকে ইনস্ট্যান্ট গ্লো আনার পক্ষে কোকোনাট মিল্ক এর কার্যকারিতা নিয়ে কথা। এবার আসা যাক, এর প্রয়োগে। আমি এখানে ৩ টি রেসিপি দিয়ে দিচ্ছি। আমার স্কিন কম্বিনেশন টাইপ । গরমের সময় স্কিন খানিকটা তৈলাক্ত হয়ে যায় আবার শীতের সময় বেশ ড্রাই একটা ভাব চলে আসে। তাই আমি শেষের দুটো রেসিপি গরমের সময় ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আর প্রথমটি অবশ্যই শীতের সময়।
আপনাদের মনে আছে কিনা! প্রিভিয়াস একটি আর্টিকেলে আমি বলেছিলাম মুখ বাদে শরীরের বাকি অংশ ভীষণ রকমের শুষ্ক। তাই আমি এই প্যাকগুলো মাঝে মাঝে অ্যাপ্লাই করলেও কোকোনাট মিল্ক সমৃদ্ধ বডি লোশন ব্যবহার করি এতে করে প্যাকগুলো দেয়া মাঝেমধ্যে বাদ পড়ে গেলেও স্কিনে তেমন ক্ষতি হয় না। এবং মুখের সাথে সাথে বডির রঙের সামঞ্জস্যতা থাকে।
রেসিপি ১: ড্রাই স্কিন
এই রেসিপিটি শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা ব্যবহার করতে পারবেন। জানেন তো ড্রাই স্কিনের অধিকারিদের সাধারণ এবং তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারিদের থেকে একটু বেশি সচেতন হতে হয়।
- ২ চা চামচ ওটস
- ৩ চা চামচ নারকেল দুধ
- ১ চা চামচ বাটার মিল্ক
– একটি পাত্রে প্রথমে অটস ভিজিয়ে রেখে দিন। নরম হয়ে গেলে হাতে চটকে নিন।
– এবার অটস বাকি উপকরণ ঢেলে দিয়ে ভাল করে মিক্স করে নিন।
– পরিষ্কার মুখে প্যাকটি লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে তারপর আলতো করে ম্যাসাজ করতে থাকুন।
এতে করে ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যাবে। এবং ব্যবহৃত উপাদানগুলোর পুষ্টি সহজে স্কিন অ্যাবজর্ব করে নিতে পারবে। বাটার মিল্কের উপাদান ত্বক মোলায়েম করাসহ ময়েশ্চার যোগাবে। ওটস এবং নারকেল দুধ ত্বকের ইনস্ট্যান্ট গ্লো এনে দিতে সাহায্য করবে।
ছোট একটি টিপস দিয়ে রাখি ড্রাই স্কিনের অধিকারীরা সবসময়ই ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখার চেষ্টা করবেন। কেননা ড্রাই স্কিন এ যেমন চুলকানি হবার সম্ভবনা থাকে অনেক বেশি ঠিক তেমন কালচে ভাবও চলে অনেক তাড়াতাড়ি।
রেসিপি ২: নরমাল টু তৈলাক্ত ত্বক
এই রেসিপিটি নরমাল টু তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা ব্যবহার করতে পারবেন। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা চাইলে এতে গ্রিন টি ও ব্যবহার করতে পারেন।
- গরুর দুধ কাঁচা ১ চা চামচ
- নারকেলের দুধ ১ চা চামচ
- চালের গুঁড়া ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া সামান্য
- লেবুর রস কয়েক ফোটা
সব উপকরণগুলো একসাথে মিক্স করে নিন। পরিষ্কার মুখে অ্যাপ্লাই করে পনের থেকে বিশ মিনিট রাখুন। মুখ ধুয়ে ফেলার আগে হালকা পানি ছিটা দিয়ে কিছুক্ষন ম্যাসাজ করে তারপর পুরো মুখ ধুয়ে ফেলুন।
চালের গুঁড়া, নারকেলের দুধ এবং কাঁচা দুধে রয়েছে ন্যাচারাল স্কিন ব্রাইটেনিং উপাদান। যার ব্যবহারে ত্বকে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
রেসিপি ৩:ইনস্ট্যান্ট গ্লো প্যাক
এই রেসিপিটি শুরু করার আগেই বলে নিচ্ছি, এটি একটি ব্লিচিং রেসিপি। কাজেই রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বকে এই রেসিপিটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। যদিও এই রেসিপিতে কোন প্রকার ব্লিচিং কেমিক্যাল ইউজ করা হয়নি সবই প্রাকৃতিক উপাদানের মিশ্রণে তৈরি তারপরও যে দুটি উপাদান এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে পুড়ে যাওয়া স্কিনে ইউজ করে স্কিন আর বার্ন হবার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
- নারকেল দুধ ২ টেবিল চামচ
- আনারসের জুস ২ টেবিল চামচ
পরিমাণে বেশি প্রয়োজন হলে সমহারে কুয়ান্টিটি বাড়াবেন। একটি কম একটি বেশি নেয়া যাবে না। একটি পাত্রে উপকরণগুলো নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিন। এবার পরিষ্কার মুখে প্যাকটি অ্যাপ্লাই করে শুকনোর অপেক্ষা করুন। প্যাকটি শুকিয়ে টানটান হয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মুখ মুছে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিবেন। এই প্যাকটি মাসে একবার ব্যবহার করবেন এর চেয়ে বেশি নয়।
ছবি – পিন্টারেস্ট ডট কম, স্টাইলক্রেজ ডট কম, হোমরেমিডি ডট কম
লিখেছেন – নীলা