এমন একটি ফলের নাম বলতে পারবেন যা দিয়ে তৃষ্ণা মেটানো থেকে শুরু করে রান্না এমন কি রূপচর্চায়ও ব্যবহার করা যায়? নারকেল এমন একটি নিয়ামক যার কোন অংশই আসলে ফেলনা নয়। কুড়নো নারকেল থেকে শুরু করে তেল দিয়ে রূপচর্চায় কতো কিছুই না করা যায়। এর আগের বেশ কয়েকটি আর্টিকেলে আমরা অলরেডি জেনে গিয়েছি ডিপ নারিশমেন্টে কোকোনাট অয়েল কীভাবে কাজ করে। নারকেলের তেলের মতোই নারকেলের দুধের গুণাগুণ কিন্তু বলে শেষ করার মতো না। স্মুদি, কারি স্যুপ থেকে শুরু করে চিংড়ির মালাইকারি রান্নাতে যে কোকোনাট মিল্ক আমাদের মা-নানীরা ব্যবহার করে আসছেন রূপচর্চায় এই নারকেল দুধের ব্যবহারও ত্বকে এনে দিতে পারে আমূল পরিবর্তন।
কীভাবে? খুব সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে নারকেল দুধে বিদ্যমান উপাদান ত্বকের তারুণ্য, ঔজ্জ্বল্য এবং হেলদি ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ১, বি ৩, বি ৫ ই, সি, এ, ক্যালসিয়াম আয়রন এবং প্রাকৃতিক প্রোটিন। নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্ক-রুক্ষ ত্বককে করে তুলে মোলায়েম এবং রেডিয়েন্ট স্কিন। আজ আমারা জানব ত্বকের যত্নে কোন কোন উপায়ে এই কোকোনাট মিল্ক ইউজ করা যেতে পারে তা সম্পর্কে।
[picture]
সোজা উপকারিতায় না গিয়ে একটু কোকোনাট মিল্ক তৈরির রেসিপিটা জেনে নিলে কেমন হয়? কোকোনাট মিল্ক তৈরি কিন্তু সহজ!
(১) ২ কাপ গ্রেট করা নারকেল
(২) ১ কাপ পানি
- প্রথমে পানি সামান্য গরম করে নিন তবে পানি ফুটাবেন না।খুব বেশি গরম বা ফুটনো পানি দিলে নারকেলের প্রাকৃতিক গুণাগুণগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। কাজেই খুব হালকা গরম পানি প্রয়োজন হবে।
- এবার একটি ব্লেন্ডারে গ্রেটেড কোকোনাট নিয়ে তাতে ১ কাপ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। অনেকে হাত দিয়ে চটকেই নারকেল থেকে নির্যাস বের করে নেন।
- এবার একটি পরিষ্কার কাপড়ে ব্লেন্ড করা নারকেলের মিশ্রণ ঢেলে গিঁট দিয়ে ঝুলিয়ে দিন নিচে একটি পাত্র রেখে দিন।
- নিচের পাত্রে দেখবেন খুব ঘন তরল জমেছে। ব্যস তৈরি হয়ে গেল কোকোনাট মিল্ক।
রুক্ষ শুষ্ক ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
শুষ্ক ত্বকের জন্য এর চেয়ে পরম বন্ধু কিন্তু আর একটিও খুঁজে পাবেন না। আমার মুখ কম্বিনেশন টাইপ। কিছু জায়গা বেশ অয়েলি কিছু জায়গা হালকা ড্রাই। তবে মুখ বাদে শরীরের বাকি অংশের স্কিন খুব শুষ্ক। গরমের দিনেও গোসলের পর বডি লোশন না দিলে টানটান অনুভূতি হয়। এর থেকে বাঁচতে আমি কোকোনাট মিল্কের একটি বডি লোশন ইউজ করি। এছাড়া যেদিন হাতে সময় পাই সেদিন কোকোনাট থেকে মিল্ক বের করে তাতে কয়েকটা গোলাপের পাপড়ি আধা কাপ রোজ ওয়াটার এবং এক কাপ কোকোনাট মিল্ক মিক্স করে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে গোসলটা সেরে ফেলি। গোসলের পর নতুন করে আর কোন ময়েশ্চারাইজার লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না।
তবে আপনার কাছে এই পদ্ধতিটা ঝামেলার মনে হলে ড্রাই স্কিনে কোকোনাট মিল্ক রাব করে ৩০ মিনিট সময় দিন স্কিন একাই অ্যাবজর্ব করে নিবে। দেখবেন ধীরে ধীরে ত্বকের ড্রাইনেস মিলিয়ে গেছে।
রোদে পোড়া ত্বকের রঙ ফিরিয়ে আনতে
কেবল এই একটি উপাদান দিয়েই কিন্তু জেদি সান ট্যান রিমুভ করা সম্ভব। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তাহল রোদে পোড়া স্থানে ঠাণ্ডা কোকোনাট মিল্ক দিয়ে মোটা পরত লাগিয়ে রাখুন। এতে থাকা ন্যাচারাল ফ্যাট এবং তেল ত্বকের গভিরে প্রবেশ করে রোদে পুড়ে লালচে হয়ে যাওয়া দাগ রিমুভ করে এবং ময়েশ্চারাইজ করে। রোদে পুড়ে লালচে হয়ে যাওয়া দাগ থেকে মুক্তি পেতে এই প্রলেপ কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে পারেন তবে এই প্রলেপটি সারা রাত রাখতে পারলে বেশি তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়।
বলি রেখা দূর করতে
কোকোনাট মিল্কের নিয়মিত ব্যবহার বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়াতে সাহায্য করে। এই উপাদানগুলো ত্বকের গভিরে প্রবেশ করে এইজিং প্রোসেসকে স্লো ডাউন করে এবং ত্বকের ফ্লেক্সিবিলিটিকে ত্বরান্বিত করে। এভাবেই ত্বক ঝুলে যাওয়া, এইজ স্পট এবং রিংকেল পড়াকে বাধাগ্রস্ত করে। খুব সহজ একটি বডি রিংকেল নাইট ক্রিমের রেসিপি শিখিয়ে দিচ্ছি এরজন্য যা যা লাগবে-
(১) ৬-৮ টা আমন্ড/ কাঠ বাদাম
(২) ৩-৪ টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল
(৩) ২ টেবিল চামচ কোকোনাট মিল্ক
– কাঠ বাদামগুলো সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন খোসা ছাড়িয়ে স্মুদ পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
– কাঠ বাদামের পেস্ট এ বাকি উপকরণ ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং কোকোনাট মিল্ক মিক্স করে নিতে হবে।
– প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই বডি নাইট ক্রিমটি মেখে ঘুমোতে জান। এভাবে ১ মাস পরেই রিংকেল পড়া ত্বক টানটান হয়ে উঠবে।
ক্লিঞ্জার হিসেবে
আমি মেকাপ রিমুভিং এর সাধারণত ক্লিঞ্জিং লোশন ব্যবহার করতাম কিন্তু ঐসব ক্লিঞ্জিং লোশনগুলো বেশ থিক হওয়ায় ত্বকের গভিরে প্রবেশ করতে না পারায় ডার্ট কিন্তু জমতে থাকত জার ফলে ব্রণের উপদ্রপ খুব বেশি আকারে চড়াও হল। এর জন ডিসিশন চ্যাঞ্জ করে মেকাপ রিমুভার হিসেবে যাদের ত্বক খুব সেনসিটিভ তারা এই রেসিপিটি ফলো করতে পারেন। এর জন্য কোকোনাট মিল্কের সাথে কোকোনাট অয়েল মিক্স করে পুরো মুখে ম্যাসাজ করে কটন প্যাড দিয়ে মুছে ফেলুন। কোকোনাটের প্রোপার্টিজগুলো খুব সহজে ত্বকের গভিরে প্রবেশ করে ময়লা দূর করতে সক্ষম। কাজেই নিশ্চিন্তে এই রেসিপি ফল করলে পোর বন্ধ হয়ে ব্রণ গজানোর মতো ভীতি থেকে বেঁচে যাবেন।
কাজেই বুঝে নিলেন তো ত্বকের যত্নে কোকোনাট মিল্ক কতটুকু উপকারী। আজ থেকেই তাহলে ত্বকের যত্নে উপাদানগুলোর মধ্যে যোগ করুন নারকেলের উত্তম নির্যাসটি। আর অবশ্যই আমাদের জানাতে ভুলবেন না। ভালো থাকবেন।
ছবি – হোমরেমেডি ডট কম, রিওয়ার্ডমি ডট কম
লিখেছেন – নীলা