সৌন্দর্যচর্চায়, বিশেষ করে ত্বক ও চুলের যত্ন নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম মাটির ব্যবহার দেখা যায়। প্রাচীন আয়ুর্বেদেও এর ব্যবহার হয়ে আসছে। স্পা’তে একে বলা হয় মাড থেরাপি। মুলতানি মাটি রূপচর্চায় এবং চুলের যত্নেও বহুবছর আগে থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। স্কিনের ডিপ ক্লেঞ্জিং করতে, ডেডসেলস দূর করে উজ্জ্বল করে তুলতে ভীষণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে মুলতানি মাটি। চলুন এক নজরে দেখে নিই, স্কিন আর হেয়ার কেয়ারে বা ত্বক ও চুলের যত্ন কীভাবে মুলতানি মাটি ব্যবহার করে করা যায়।
মুলতানি মাটিতে ত্বক ও চুলের যত্ন
১) ত্বক থেকে বাড়তি তেল শুষে নেয়
যাদের অয়েলি স্কিন তারা সপ্তাহে ২-৩ দিন এই প্যাকটি ব্যবহার করলে স্কিনের বাড়তি তৈলাক্ত ভাব দূর হবে। সমপরিমাণ মুলতানি মাটি আর চন্দন গুঁড়োর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্টের মতো বানিয়ে মুখে এবং গলায় অ্যাপ্লাই করুন। প্যাক শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা স্কিনের পি এইচ লেভেল ঠিক রাখতেও সহায়তা করে।
২) স্কিনকে দাগমুক্ত করে
সমপরিমাণ মুলতানি মাটি, লেবুর রস আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে স্কিনে যেসব জায়গায় স্পট আছে সেসব জায়গায় লাগান। আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্ততপক্ষে তিনদিন ব্যবহারে আস্তে আস্তে স্কিন দাগমুক্ত হবে।
৩) ব্রণ দূর করে
২ চা চামচ মুলতানি মাটি, ১ চা চামচ নিমের গুঁড়ো, গোলাপজল মিশিয়ে পেস্টের মতো বানিয়ে ব্রণের উপর অ্যাপ্লাই করুন। ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন এবং মাইল্ড কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দুই দিন ব্যবহারে স্কিন ধীরে ধীরে ব্রণমুক্ত হবে।
৪) স্কিনকে উজ্জ্বল করে তোলে
সমপরিমাণ মুলতানি মাটি আর টকদই দিয়ে পেস্টের মতো বানিয়ে সেটা আধঘণ্টার জন্য রেখে দিন, এতে সামান্য কাঁচা হলুদের গুঁড়ো যোগ করুন। মিক্স করে মুখ এবং গলায় অ্যাপ্লাই করুন। হাতে পায়েও অ্যাপ্লাই করুন। শুকিয়ে গেলে কুসুমগরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
৫) স্কিনের ইলাস্টিটি বাড়িয়ে তোলে
সমপরিমাণ মুলতানি মাটি, মধু, গ্লিসারিন আর একটা ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিক্স করে মুখে আর গলায় লাগিয়ে নিন। প্যাকটা শুকিয়ে গেলে কুসুমগরম পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি ব্যবহারে স্কিনের ইলাস্টিটি বাড়বে এবং স্কিন আগের চেয়ে ইয়াংগার দেখাবে।
৬) ডেডসেলস (মৃতকোষ) দূর করে
সমপরিমাণ মুলতানি মাটি, নারকেল তেল আর মধু মিক্স করে প্যাক বানিয়ে মুখে অযাপ্লাই করুন। শুকিয়ে গেলে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। স্কিনের ডেডসেলস দূর করে স্কিনকে উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত করে তুলবে এই প্যাকটি।
৭) মাথার চুল এবং স্ক্যাল্পকে খুশকিমুক্ত রাখে
তিন টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, আধ বাটি টক দই, সামান্য অলিভ অয়েল আর ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিক্স করে প্যাক বানিয়ে পুরো মাথার স্ক্যাল্পসহ চুলে লাগিয়ে নিন। আধঘণ্টা পর মাইল্ড কোন শ্যাম্পু নিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২ দুইদিন এই প্যাক ব্যবহার করুন, তৈলাক্ত খাবার বুঝে খান। এবং অবশ্যই নিজের চিরুনি তোয়ালে ব্যবহার করুন ও পরিষ্কার রাখুন। সেই সাথে নিয়মিত বালিশের কাভার নিয়মিত ধুয়ে রাখুন। খুশকি দূর হবে।
৮) চুলের আগা ফাটা রোধ করে
বাসায় হট অয়েল ট্রিটমেন্টের পর মুলতানি মাটি আর কাঁচা তরল দুধ দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার সেই দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। তারপর পানি দিয়ে। চুলের আগা ফাটা কমবে।
৯) চুলকে ন্যাচারালি সোজা করে তুলতে সাহায্য করে
রাতে চুলের গোঁড়ায় গোঁড়ায় বিলি কেটে কোকোনাট অয়েল অথবা অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন। এক কাপ মুলতানি মাটি, ৫ চা চামচ চালের গুঁড়ো ও ২ চা চামচ মধু একটা ডিমের সাদা অংশের সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
সকালে এই প্যাক মাথায় লাগিয়ে চুল সোজা করে আঁচড়ে নিন। ৪০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। তারপর একটা স্প্রে বোতলে ১০০ মিলি তরল কাঁচা দুধ নিয়ে চুলে স্প্রে করে নিন। ১৫ মিনিট পর চুল আবার ও ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। কি? চুল সোজা দেখাচ্ছে না?
১০) মাসলের ক্লান্তি দূর করে
সরাসরি মুলতানি মাটির সাথে পানি মিক্স করে পেস্ট বানিয়ে ক্লান্ত পায়ে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। আপনার পা দুটোর সারাদিনের ক্লান্তি দূর করবে। ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে মাসলের ক্লান্তি দূর করে দেয় মুলতানি মাটি।
আমার স্কিনকেয়ার রেজিমে আমি সবসময় ভেষজ এবং সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করতে চেষ্টা করি। আপনারাও ব্যবহার করে দেখুন। আজ এই পর্যন্তই। ত্বক ও চুলের যত্ন নিয়ে দেওয়া টিপসগুলো আশা করি আপনার উপকারে আসবে।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক