ওজন কমাতে খাবার টিপস নিয়ে অনেক দিন কিছু লেখা হয় নি। এ নিয়েই আজ আপনাদের জানাবো। তবে তার পূর্বে আমার প্রতিবেশী রেশ্মার কথা দিয়েই শুরু করি। রেশমার ওজন শুধু বেড়েই চলেছে। কত রকম ডায়েট করলো। কোনভাবেই কিছু হয় না দেখে সে একেবারে খাওয়া দাওয়াই কমিয়ে দিল। দিনে একবেলাও ঠিকভাবে খেত না। পরে সে শুকিয়েছে ঠিকই, কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। না খেয়ে থাকার কারণে তার শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। সে রক্তশুন্যতায় ভুগতে থাকে। পরে ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি ডাক্তার তাকে বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং জানান সে যদি এইভাবে না খেয়ে ডায়েট করে তবে পরে তাকে কোনরকম চিকিৎসা করে সুস্থ করার উপায় থাকবে না।
এমন ভুল আমরা অনেকেই করে থাকি, তাই নয় কি?। ওজন কমানোর জন্য খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেই। যার ফলে আমাদের শরীর সচল রাখার জন্য যতটুকু প্রোটিন, ভিটামিন ও নিউট্রিশন দরকার হয় তাও পায় না শরীর। এভাবে না খেয়ে ডায়েট করে কি লাভটি হলো রেশমার? এখন ঠিকই তাকে বেশি বেশি খেতে হবে। তাই সঠিক সময়ে সঠিকভাবে খেয়ে কীভাবে ডায়েট করলে আপনার ওজনও কমবে, সাথে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিও ঠিক থাকবে এমন ডায়েট প্ল্যান জানা দরকার, তাই না? এমনই একটি ডায়েট প্ল্যান আজ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
ওজন কমাতে খাবার টিপস
(১) সকালের নাস্তার আগে
ঠিক করেছেন নিশ্চয় সকালের নাস্তাই করবেন না তাই না? নাস্তার কথা পরে বলছি। তার আগে সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস গরম পানিতে একটি লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। এই লেবুর পানিটি অবশ্যই খালি পেটে খাবেন। এটি আপনার শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করবে এবং ডিটক্স হিসেবে কাজ করবে। সাথে সাথে শরীরের মেটাবলিজমও বৃদ্ধি করবে।
(২) সকালের নাস্তা
এইবার লেবু পানি খাওয়ার আধা ঘন্টা পর নাস্তার কথা ভাবতে পারেন। নাস্তা মানেই হলো ফ্রুটস। কেউ যদি আপনাকে ডায়েটের জন্য সারাদিন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তবে সেটি অবশ্যই ভুল। ফল খাওয়ার পারফেক্ট সময় হলো সকাল বেলা। কারণ, ফলে যে সুগার থাকে তা আপনার সারা সুন্দরভাবে ডিস্ট্রিবিউট হয় সকালবেলা।
আপনি ২টি কমলা, ২টি আপেল, ২টি মালটা বা পেয়ারা, ২টি নাশপতি একসাথে মিশিয়ে সালাদের মত খেতে পারেন। সাথে একমুঠো আমন্ড বা কাজু বাদামও যোগ করতে পারেন। এইভাবে ফলে থাকা সুগার আপনাকে সারাদিনের কাজের জন্য শক্তি যোগাবে আর সাথে সাথে এর প্রোটিন আপনার ক্ষুধা দূর করবে।
(৩) দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবারের সময় আপনি এক পিস মাংস রাখতে পারেন আপনার ডায়েটে। তবে সেটি হতে পারে গরু, মুরগী বা খাসীর মাংস। তবে গরু বা খাসীর ক্ষেত্রে অবশ্যই কচি হতে হবে। কারণ কচি মাংসে ফ্যাট থাকে না। চেষ্টা করুন এর সাথে ভাত বা ব্রেড এড়িয়ে যেতে। তার পরিবর্তে ২কাপ টকদই খান। সালাদ খেতে চাইলে ক্রিমি সালাদ খাবেন না। কাঁচা সবজি দিয়ে সালাদ তৈরি করে মাংসের সাথে সাইড ডিশ হিসেবে খেতে পারেন।
(৪) স্ন্যাক্স
দুপুরের খাবারের কয়েক ঘন্টা পর সবারই ক্ষুধা পায়। কিন্তু যারা ওজন কমাতে চান, তারা খিদে পেলেও খান না। আমি একদমই এর পক্ষে নয়। ক্ষুধা লাগ্লে স্ন্যাক্স খেতে পারবেন আপনি তবে কিছু ব্যাপার একটু খেয়াল রাখলেই হবে। স্ন্যাক্স হিসেবে চিপস, চকোলেট, তেলে ভাঁজা খাবার খাবেন না। যেকোন মৌসুমি সবজি নিয়ে সালাদ বানিয়ে নিন। তাতে এক চিমটি লবণ ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। ব্যস আপনার স্ন্যাক্স তৈরি। খিধে ও মিটবে, পুষ্টিও পাবে শরীর, সাথে ওজন বাড়ারও ভয় থাকবেনা।
(৫) রাতের খাবার
রাতের খাবারটি হলো সারাদিনের শেষ খাবার। কিন্তু এটি হতে হবে একদমই হালকা। রাতের মেনু তে রাখুন ২টি সেদ্ধ ডিম, গ্রীন সালাদ অথবা শশার সালাদ। এটিই আপনার ডিনার মেনু। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ডিনার করার অভ্যাস করুন। রাত ৯টার মধ্যেই রাতের খাবার খেলে খুব ভাল হয়।
(৬) ডিনারের পর
রাত ৯টার মধ্যেই ডিনার শেষ করার কথা বললাম আর নিশ্চয় ভাবছেন এরপর খিদে পেলে কি করবেন? রাতের খাবারের পর যখন খিধে পাবে তখন এক মগ গরম পানিতে ২ব্যাগ গ্রীন টি দিয়ে চা বানিয়ে নিন। পুরো মগ একবারেই খাওয়ার দরকার নেই। অল্প অল্প করে খেতে পারেন শোয়ার আগ পর্যন্ত।
ওজন কমাতে খাবার টিপস যা দিলাম তা আপনি কয়দিন মেনে চলবেন সেটি সম্পুর্ণ আপনার ইচ্ছে। তবে মোটামুটি ১০ দিনের মধ্যেই আপনি এর রেজাল্ট দেখতে পাবেন এতোটুকু আমি বলতে পারি। একেক মানুষের শারীরিক গঠনের ভিন্নতার কারণে এই সময় কম বেশিও হতে পারে।
সবশেষে শুধু একটি কোথায় বলবো, “ ওজন কমাতে খাবার টিপস আজ জানালাম। ফলে ওজন কমানোর জন্য না খেয়ে থাকার কোন মানে নেই। শুধু জানুন কোন খাবারটি কোন সময় কীভাবে খাবেন।”
ছবি – সংগৃহীতঃ সাটারস্টক