কিছুক্ষণ আগে কলেজের পিকনিক থেকে ফিরেছে মুন্নি। এই পিকনিকের জন্য মুন্নি আর তার বন্ধুদের কতদিনের অপেক্ষা ছিলো! কত পরিকল্পনা ছিলো তাদের এই দিনটা নিয়ে। বন্ধুবান্ধব আর শিক্ষকদের সাথে খুব আনন্দেই কেটেছে দিনটা। মা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন, মেয়ে এসে গল্প শোনাবে পিকনিকের। মেয়ে এলো বটে, মুখহাত ধুতে যাবার আগে হাসিমুখেই কথা বললো মায়ের সাথে, তারপরেই তার মেজাজ একদম পাল্টে গেলো! মুখ কেমন থমথমে করে রেখেছে মুন্নি। মাকে রুম থেকে এক প্রকার তাড়িয়েই দিলো চেঁচামেচি করে, গল্প বলার মন তার এখন নেই। মা হতভম্ব প্রায়, হুট করে কী হয়ে গেলো মেয়ের? কেন করছে এমন অদ্ভুত আচরণ?
মেজাজ এমন হুট করেই পাল্টে যাওয়া, মন ভালো আর মন খারাপের অলিগলিতে ক্রমাগত ঘুরপাক খাওয়া, ক্ষণে হাসিমুখ তো পরক্ষণেই ক্রোধিত রূপ, এসবই মনের একটা অসুখের লক্ষণ। অসুখের নাম ‘মুড সুইং’। এই মুড সুইং ভারী আজব এক অসুখ। মুড সুইংয়ের শিকার ব্যক্তি অনবরত বিপরীতধর্মী সব আবেগের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। মন ভালো থেকে একটু খারাপ, অনেক বেশি খারাপ, তীব্র হতাশা, আবার খুশি হয়ে যাওয়া- এইসবই ঘটতে পারে অল্প সময়ের ব্যবধানে।
[picture]
মুড সুইং, এই বিষয়টা আজকাল খুব একটা অপরিচিত নয়। অনেকেই জানেন এই ব্যাপারে এবং সচেতনতাও রাখেন। মুড সুইং অধিক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয় মেয়েদের মাঝে। বিশেষ করে পরিবর্তিত শারীরিক অবস্থায় তাদের মুড সুইং হয় চোখে পড়ার মত, সেটি ঘটে মাসিক ঋতুচক্রের সময় আর গর্ভাবস্থায়। এসব দিনে শরীরে হরমোনের তারতম্যে একজন নারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। আর এই বিপর্যয় তাকে হালকা কিংবা চরম মাত্রার মুড সুইং দিতে পারে। ঋতুচক্রের সময়টা অল্পদিনের হয় বলে এই সময়ের মুড সুইং দ্রুত কেটে যায়। কিন্তু গর্ভকালীন মুড সুইং দীর্ঘমেয়াদী হয় স্বাভাবিকভাবেই, আর খুব প্রবল মাত্রায় ঘটতে পারে। তাই বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন এই সময়টায়। হবু মায়ের তো বটেই, মুড সুইং নিয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন তার কাছের মানুষদেরও। সন্তান জন্মদানের পরেও মানসিক অশান্তির রেশ থেকে যেতে পারে আর সেটা মা ও বাচ্চা দুইজনের জন্যই বেশ ভয়াবহ।
তাই বলে মুড সুইং একচোখা অসুখ নয়! কেবল নারীরাই মুড সুয়িংয়ের শিকার হয় না, মুড সুইং ঘটে পুরুষদেরও। ক্রমাগত মনমেজাজ বদলানোটা কয়েকদিন ধরেই ঘটতে থাকা, এটা পুরুষদের মাঝেও খুব সাধারণ বিষয় হতে পারে। খুব বাড়াবাড়ি না হলে কখনোই এটা নিয়ে বেশি ভাবার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ এসব স্বল্পকালীন ঘটনা হলে, আর খুব ঘনঘন না হলে দুশ্চিন্তা করার
কিছুই নেই। হালকা মাত্রায় মুড সুইংকে নিরীহ হিসাবেই নেয়া চলে। কিন্তু মুড সুইং হচ্ছে নিশ্চিত হবার প্রায় সপ্তাহকাল পেরিয়ে গেছে, কিংবা আরো বেশি সময় হয়েছে যে আপনি এই দ্রুত পরিবর্তনশীল মেজাজ নিয়ে বিপদে আছেন, তাহলে চিন্তা করা লাগবে বৈকি! আপনার এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কারো মতামত বা কাউন্সেলিং প্রয়োজন।
আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও মুড সুইং ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি এমনকি নিজেকে ধ্বংস করার চিন্তাও রাখে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আর তাই নিয়মিত নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা উচিত প্রতিটি মানুষেরই। সামান্য মুড সুইংকেও সাবধানী নজরে দেখা চাই, সেটা যেন মনের অজান্তে মনের বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ না নিয়ে ফেলে। অসুখ হবেই, কিন্তু তা যেন অল্পেই সেরে যায় এটা নিশ্চিত করার চেষ্টাই করা উচিত। তা সে অসুখ শরীরেই হোক, কিংবা মনে!
লিখেছেন- মুমতাহীনা মাহবুব
সুত্র- মেডিসিননেট.কম, হেলথলাইন.কম, সাইকসেন্ট্রাল.কম