হেয়ার পোরোসিটি | আমার চুল রুক্ষ-শুষ্ক তোমার চুল মসৃণ কেন?

হেয়ার পোরোসিটি | আমার চুল রুক্ষ-শুষ্ক, তোমার চুল মসৃণ কেন?

hair porosity test

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, একেক জনের চুলের ধরণ কেন একেক রকমের হয়? কেন কারো চুলে তেল দিলে সহজে বসতে চায় না, আর কারো চুলে তেল দেওয়া মাত্রই পুরো চুলে তেল অ্যাবসর্ব হয়ে যায়? কেন একেকজনের চুল রুক্ষ-শুষ্ক, আর একেকজনের চুল মসৃণ হয়? এটার কারণ হচ্ছে হেয়ার পোরোসিটি। পোরোসিটিকে শুদ্ধ বাংলায় অনুবাদ করলে এর অর্থ হচ্ছে ‘ছিদ্রতা’। হেয়ার পোরোসিটি মানে হচ্ছে, আপনার চুল কতটুকু আর্দ্রতা গ্রহণ করতে এবং ধরে রাখতে পারে। চুলের কিউটিকলের গঠনের উপর নির্ভর করে আপনার হেয়ার পোরোসিটি।

হেয়ার পোরোসিটি কয় ধরণের?

হেয়ার পোরোসিটি তিন ধরনের হয়। চলুন জেনে নিই এ নিয়ে বিস্তারিত…

Sale • Hair Oil, Hair Cream & Masks

    ১) লো হেয়ার পোরোসিটি

    লো পোরোসিটির চুলের কিউটিকল লেয়ার-টা খুব টাইটলি বাউন্ডেড থাকে, ফলে চুলে ময়েশ্চার সহজে প্রবেশ করতে পারে না, আবার একবার প্রবেশ করলে সহজে বেরও হতে পারে না।

    ২) মিডিয়াম হেয়ার পোরোসিটি

    মিডিয়াম পোরোসিটির চুলে ময়েশ্চার মোটামুটি সহজে প্রবেশ করতে পারে, খুব তাড়াতাড়ি বেরও হয়ে যায় না।

    ৩) হাই হেয়ার পোরোসিটি

    হাই পোরোসিটির চুলের কিউটিকল লেয়ারে অনেক ছিদ্র থাকে, ফলে ময়েশ্চার সহজে প্রবেশও করে, আবার বেরও হয়ে যায়। এ ধরণের চুল ফ্রিজি হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।

    হেয়ার পোরোসিটি জানার উপায়

    ১. ওয়াটার টেস্ট

    হেয়ার পোরোসিটি জানতে ওয়াটার টেস্ট - shajgoj.com

    চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে আমাদের সবারই কমবেশি চুল চিরুনিতে আটকায়। ওখান থেকে পরিষ্কার একটা চুল নিয়ে একটা পানি ভর্তি গ্লাসে ফেলে দিন। কয়েক মিনিট পর যদি চুলটা গ্লাসের নিচে থাকে, তাহলে আপনার হেয়ার পোরোসিটি লো, যদি মাঝামাঝি ভেসে থাকে, তাহলে হেয়ার পোরোসিটি মিডিয়াম, আর যদি উপরে ভেসে থাকে, তাহলে হেয়ার পোরোসিটি হাই বলে ধরে নেয়া যাবে।

    ২. স্প্রে বটল টেস্ট

    চুলের ছোট্ট একটা সেকশন নিয়ে একটা স্প্রে বটলের সাহায্যে তাতে সামান্য পানি স্প্রে করি। যদি পানিটা ভেসে ভেসে থাকে, তাহলে আপনার লো পোরোসিটির হেয়ার। যদি পানিটা চুলে অ্যাবজর্ব হয়ে যায়, তাহলে আপনার হাই পোরোসিটির হেয়ার। আর যদি কিছুটা সময় নিয়ে তারপর চুলটা ভিজে, তাহলে আপনার হেয়ার পোরোসিটি মিডিয়াম।

    ৩. স্লাইড টেস্ট

    একটি চুলে আঙুল বোলান। যদি মনে হয় চুলটা স্মুদ লাগছে, তাহলে আপনার লো পোরোসিটির হেয়ার, যদি কিছুটা আঙুলে বাধে, তাহলে মিডিয়াম পোরোসিটির, আর যদি বেশ অসমান লাগে, তাহলে আপনার চুলের পোরোসিটি হাই।

    ভিন্ন ভিন্ন পোরোসিটির চুলের যত্নআত্তি কিভাবে করবেন?

    ১) লো পোরোসিটি হেয়ার

    • চুলে ময়েশ্চার সহজে প্রবেশ করে না, একবার প্রবেশ করলে সহজে বের হতে চায় না।
    • প্রোডাক্ট বিল্ড-আপ চুলে থেকে যায়।
    • হেয়ার কালার বা হেয়ার ট্রিটমেন্ট সহজে অ্যাবজর্বড হতে চায় না।
    • চুল শুকাতে সময় লাগে।
    • চুল এমনিতে হেলদি দেখায়, কিন্তু ইলাস্টিসিটি বা ভলিউম ভালো থাকে না।

    এমন চুলের যত্নে 

    ১. কিউটিকল খুলে ময়েশ্চার প্রবেশ করার জন্য স্টিম নেয়া ভালো। স্টিম সরাসরি নিতে না পারলে একটা বড় টাওয়েল গরম পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে তারপর মাথায় পেঁচিয়ে রাখতে পারেন ১০-১৫ মিনিটের জন্য।

    ২. খাঁটি নারকেল তেল, আরগান অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু এ ধরনের চুলে সহজে ময়েশ্চার প্রবেশ করতে পারে না, তাই চুল যেন মজবুত আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকে, তাই নিয়মিত চুলের গোঁড়ায় বিলি কেটে খাঁটি নারকেল তেল ম্যাসাজ করাটা জরুরী। কারণ এটি চুলের গোঁড়ায় নারকেল তেল সহজেই প্রবেশ করে চুলকে গোঁড়া থেকে মজবুত করে তুলতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে শ্যাম্পু করার আগে স্টিম নেয়াটা জরুরী।

    ৩. চুলে যেন কোন প্রোডাক্ট বিল্ড-আপ না জমে, তার জন্য অ্যাপল সাইডার ভিনেগার, মুলতানি মাটি– এগুলো হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

    ২) মিডিয়াম পোরোসিটি হেয়ার

    • পারফেক্ট অ্যামাউন্টের ময়েশ্চার গ্রহণ করে এবং ধরে রাখতে পারে।
    • চুল দেখতে সুন্দর হয় এবং শাইনি, ঘন আর মজবুত হয়।

    এমন চুলের যত্নে 

    ১. শুধু নিয়মিত খাঁটি নারকেল তেল দিয়ে স্ক্যাল্প এবং চুলের আগা গোঁড়া নিয়মিত ম্যাসাজ করুন।

    ২. রেগুলার শ্যাম্পু, কন্ডিশনার আর সপ্তাহে একবার প্রোটিন কন্ডিশনিং হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।

    ৩) হাই পোরোসিটি হেয়ার

    • সহজে ময়েশ্চার প্রবেশ করে, কিন্তু ধরে রাখতে পারে না।
    • চুল শুষ্ক এবং নিষ্প্রাণ দেখায়।
    • সহজে জট বেঁধে যায়।
    • ভেজা চুল সহজেই শুকিয়ে যায়।
    • চুল ফ্রিজি হয়।

    এমন চুলের যত্নে 

    ১. নিয়মিত স্ক্যাল্পে খাঁটি নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। আর সেই সাথে চুলের আগা-গোঁড়া নারকেল তেলই ব্যবহার করুন। কারণ এমন চুল মজবুত রাখতে এবং ড্যামেজড কিউটিকল সারাতে নারকেল তেলের বিকল্প নেই।

    ২. হেয়ার মাস্ক হিসেবে ডিম, টকদই, খাঁটি নারকেল তেল, অ্যালোভেরা জেল– এ জাতীয় ডিপ-কন্ডিশনিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।

    তো আজই টেস্ট করে ফেলুন যে আপনার চুলের পোরোসিটি কেমন আর সেই অনুযায়ী চুলের যত্ন নিন।

    মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য কিছু বেসিক জিনিস

    • নিয়মিত চুলে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করা। স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলেই চুল পড়া বন্ধ হবে, নতুন চুল গজাবে এবং চুল গোঁড়া থেকে মজবুত হয়ে বেড়ে উঠবে।
    • মাইল্ড শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
    • নিয়মিত নিজের চিরুনি, হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ, বালিশের কাভার ইত্যাদি ধুয়ে ফেলুন।
    • খুব জরুরী না হলে হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্টস, হেয়ার স্ট্রেইটেনিং, কার্লিং- এসব করা থেকে বিরত থাকুন।
    • চুলে কখনোই অত্যাধিক তাপ ব্যবহার করবেন না- না চুল ধোয়ার পানিতে, না হেয়ার স্টাইলিং-এর সময়। কিউটিকল ড্যামেজ হয়ে চুলের গোঁড়া ভঙ্গুর হয়ে চুল আর মজবুত থাকবে না।
    • নিয়মিত ৮-১০ গ্লাস পানি পান, ৮ ঘণ্টার ঘুম আর ব্যালেন্সড ডায়েট-ও কিন্তু চাই-ই।

    তো এই বেশ জেনে ফেললেন হেয়ার পোরোসিটি নিয়ে আদ্যোপান্ত। এখন চুলের যত্ন হোক ঘরে বসেই।

    ছবিঃ সংগৃহীত – Shutterstock

    23 I like it
    6 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort