আর্দ্র বা শুষ্ক আবহাওয়াতে কোঁকড়া চুলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ফ্রিজি হয়ে যাওয়া। মেঘবরণ কুঞ্চিত কালো কেশ কিংবা ঢেউ খেলানো চুলের উপমা তখন আর মানায় না। তবে শুধু কোঁকড়া চুলই না, সব ধরনের চুলই ফ্রিজি হতে পারে। চুল যদি ফ্রিজি হয়, মন তো খারাপ হতেই পারে। আসুন জেনে নিই, চুল ফ্রিজি হওয়ার কারণ ও এর থেকে পরিত্রাণে কিছু টিপস।
চুল ফ্রিজি হওয়ার কারণ ও এর পরিত্রাণে টিপস
চুল ফ্রিজি কখন হয়?
যাদের চুল কোঁকড়া, একটু আর্দ্রতা পেলেই চুল উস্ক খুস্কো হয়ে যায়! চুলের মোট তিনটি স্তর আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বাইরের স্তরের নাম কিউটিকল লেয়ার। এটা আমাদের চুলের ছাদ হিসেবে কাজ করে। যখনই শুষ্ক চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো হয়, এই লেয়ার এর ভিন্নধর্মী একটি আচরণের কারণে চুল ফ্রিজি হয়ে যায়, বিশেষ করে কোঁকড়া চুলের ক্ষেত্রে। কিন্তু সব ধরনের চুলেই ফ্রিজ হতে পারে।
চুল ফ্রিজি হওয়ার কারণ কী?
- কোঁকড়া চুল।
- নিয়মিত ব্লো ড্রাই করা।
- অতিরিক্ত প্রসাধনী চুলে লাগানো।
- চুলে কালার করা।
- শুষ্ক চুল।
- ব্লিচ করা।
- নিয়মিত চুল স্ট্রেইট করা।
- আবহাওয়া।
- অতিরিক্ত গরম তেল দেওয়া।
- বংশগত।
ফ্রিজি চুলের যত্ন
ফ্রিজি চুলের জন্য নিয়মত যত্ন নিতে হয়। কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ঝামেলা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। এই জন্য দরকার সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করা।
(১) ড্রাই চুলে ব্রাশ ব্যবহার না করা। ভেজা চুল শুকানোর পর অনেকেই ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ে নেন। এটা ফ্রিজি চুলের অন্যতম কারণ। ভেজা চুল আঁচড়ালে চুলের গোঁড়া নরম হয়ে চুল পড়ে যায়। এ কারণেই চুল শুকিয়ে আসার আগেই চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিতে হবে, তবে একেবারে ভেজা অবস্থায় না। যদি চুল শুকানোর পর আঁচড়াতে চান, সেক্ষেত্রে হাত পানিতে ভিজিয়ে চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে নিন। তারপর ধীরে ধীরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। কিন্তু কখনোই ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
(২) চুল ধোঁয়ার পর তোয়ালে দিয়ে হালকা চাপে পানি ঝরিয়ে নিন। কখনোই জোরে জোরে চুল ঘষা যাবে না। অনেকেই ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে ঝাড় দেয়ার মত করেন, এটা করা যাবে না।
(৩) চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু করতে হবে। এজন্য রাফ বা হার্ড শ্যাম্পু করা যাবে না। সপ্তাহে তিনদিন শ্যাম্পু করতে হবে। যেসব শ্যাম্পুতে সালফেট আছে, সেগুলো পরিহার করুন। শ্যাম্পু ব্যবহার করার আগে পানিতে মিশিয়ে লঘু করে নিন।
(৪) শ্যাম্পু দেওয়ার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তেলমুক্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। বাজারে যেসব অ্যান্টি ফ্রিজ কন্ডিশনার পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করলেই ভালো হবে। কন্ডিশনার ব্যবহার করুন ফ্রিজ হয়ে যাওয়া চুলে এবং চুলের আগায়। চুলের গোড়ায় না।
(৫) সপ্তাহে একদিন প্রোটিন রিচ কন্ডিশনার লাগিয়ে রাখুন অন্তত ৩০ মিনিট, তারপর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। কখনই গরম পানি চুলে লাগাবেন না।
(৬) অনেকেরই সকালে বাইরে যেতে হয়, অথচ ফ্রিজ হয়ে যাওয়া চুলকে বশে আনতে পারছেন না। এভাবেই উস্ক খুস্কো চুলে বাইরে যাবেন? তাদের জন্য পরামর্শ হল রাতের বেলায়ই গোসল করা। সেক্ষেত্রে অ্যান্টি ফ্রিজ কন্ডিশনার একটু বেশি পরিমাণে লাগাতে হবে। ভেজা চুলে পুরনো পরিষ্কার কোন টিশার্ট জড়িয়ে ঘুমাতে যান। সকালে পাবেন ফ্রিজমুক্ত চুল। কিন্তু এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে কারণ ভেজা চুলে ঘুমালে চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
(৭) ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ন্যাচারাল অয়েল ব্যবহার করুন। চুলের ফ্রিজ হওয়া অংশে নিয়মিত ব্যবহার করুন। অন্তত সপ্তাহে তিন দিন তেল লাগিয়ে, তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন ৩০ মিনিট এর মত। এতে করে শোষণ ক্ষমতা বাড়ে। নারিকেল তেল এবং অলিভ তেল ব্যবহার করতে পারেন।
(৮) ভেজা চুলে হেয়ার সেরাম ব্যবহার করুন। বিশেষ করে সিলিকন বেজড হেয়ার সেরাম। চুল শুকানোর জন্য ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না। প্রাকৃতিকভাবেই চুল শুকান। চুলে অ্যালকহলযুক্ত কোনও প্রসাধনী লাগাবেন না। এতে চুল শুষ্ক এবং ফ্রিজি হয়ে পড়ে।
(৯) চুল শুকানোর সময় কখনই হাত দিয়ে চুল ধরবেন না। চুলকে বিভিন্ন সাজে সাজাতে জেল ওয়াক্স ব্যবহার করুন।
(১০) ফ্রিজি হয়ে যাওয়া চুলের অংশে নিয়মত ট্রিম করতে হবে।
(১১) সপ্তাহে অন্তত একবার ভিনেগার দিয়ে চুল ওয়াশ করুন।
(১২) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে কন্ডিশনার হিসেবে লাগান।
(১৩) এক চামচ মেয়োনিজ নিয়ে তাতে ডিম ফেটে নিন। ক্রিম হয়ে গেলে চুলে লাগান আর ২০ মিনিট চুলে রাখুন।
(১৪) চুলের প্যাক হিসেবে অলিভ অয়েল এর সাথে ডিম মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
(১৫) শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল ম্যাসাজ করতে হবে। অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, বাদাম তেল বা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অ্যাভকেডো তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। জোজোবা তেল দিয়ে উষ্ণ ম্যাসাজ করলে অনেক উপকৃত হবেন।
(১৬) টকদই ও বাটা মেহেদি একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো মাথার চুলে লাগিয়ে রাখুন ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
(১৭) টকদই, লেবু ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে প্যাক হিসেবে পুরো চুলে লাগান। ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
(১৮) এছাড়া প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর এক কাপ চায়ের লিকারের সঙ্গে (দুই টেবিল চামচ করে ভিনেগার, কফি, সেদ্ধ বিটের রস) একসঙ্গে মিশিয়ে কন্ডিশনার হিসেবে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
(১৯) এ ধরনের চুলে প্রয়োজন প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট। তাই ১৫ দিনে একবার ডিম, টক দই, নিমপাতা বাটা, পেঁয়াজের রস, মেথি গুঁড়া মিশিয়ে মাথায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের মতো রাখতে হবে। পুরোপুরি শুকানোর আগেই ধুয়ে ফেলতে হবে। একইভাবে চুলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নিতে ডিম ও কলার মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত যত্নে আপনার চুল হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয়, সুন্দর এবং ফ্রিজমুক্ত। আর এখন তো জেনেই গেলেন চুল ফ্রিজি হওয়ার কারণ ও এর পরিত্রাণে করণীয়।
ছবি – সাটারস্টক