সেই ছোট্টবেলার বৃষ্টির দিন গুলোর কথা কি মনে পরে আপনার? আকাশের এক কোণে যখন কালো মেঘের ঘনঘটা চলে, তখন বন্ধুদের সাথে হৈ চৈ করে মাতে নি এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। শহুরে বেড়াজালেও যারা বড় হয়েছেন,-‘আয় বৃষ্টি ঝেপে, ধান দেব মেপে’ – এই ছড়াকাটা নিয়ে মেতেছেন তারাও। আর গ্রামাঞ্চলের মাঠে কি বাড়ির উঠোনে যারা বৃষ্টি নামানোর খেলা খেলছিলেন, তারা বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা মাথায় পড়তেই ইয়া বড় এক কচু পাতা মাথায় দিয়ে জোরসে দৌড় বাড়ির পানে! কেউ কেউ আবার কচু পাতা জোগার না করতে পারলে হাতের কাছের গাছ তলায় আশ্রয় নিত। হালকা বৃষ্টি হলে এভাবে গা বাঁচানো যায়। কিন্তু যখন ভারী বর্ষণ? তখন তো না কচু পাতা আর না গাছতলা, কোথাও ঠাই নেই। কাকভেজা হয়ে সব একাকার হত! চলছে বর্ষাকাল। মেঘের আভাস দেয়া বৃষ্টির সাথে মেঘ না চাইতে বৃষ্টিও দেখা দিচ্ছে আপনি না চাইলেও। কখনো ঝুম বৃষ্টি কি কখনো ইলশে গুড়ি। আবার প্রায়শই প্রবল বেগে ঝড় হাওয়ার সাথে বৃষ্টি হয়ে থাকে। শিলা বৃষ্টির শিল কুড়ানোর কথা নাই বা বললাম।
বৃষ্টি নিয়ে তো অনেক কথা বললাম! আচ্ছা বাইরে কোথাও যখন যান ইম্পরট্যান্ট কাজে, তখন কী হঠাৎ বৃষ্টি ভালো লাগে? অবশ্যই না! ড্রেসিং আর স্টাইলিং – সবকিছুকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে তাই চাই ছাতা। বৃষ্টির যখন এত ধরন, ছাতা তার কত রকম চলুন তো দেখি!
[picture]
- ক্লাসিক আম্ব্রেলা: সবচেয়ে কমন ছাতা হল এই ক্লাসিক ছাতা। এটা হল সেই বিশাল বড় কাঠের ডাটি ওয়ালা ছাতা। কাঠের ডাটি ছাড়াও মেটাল অথবা প্লাস্টিক দিয়েও এই ক্লাসিক ছাতার ডাটি বা হাতল তৈরি করা হয়। আর ক্যানোপি মূল অংশ যাকে বলা যায়, তাতে মাইক্রো ফাইবারের পলিএস্টার কাপড় ব্যবহার করা হয়।
- অটোমেটিক আম্ব্রেলা: কয়েক দশক পুরনো সেই ক্লাসিক ছাতা আকারে বড় হওয়ায় আর ব্যস্ত জীবনের সাথে তাল মেলাতে অটোমেটিক ছাতার আবির্ভাব। ক্লাসিক ছাতার মত-এ ছাতা দু হাতে খুলতে হয় না। আর ছাতা খুলতে গিয়ে আঙ্গুলে ব্যথাও পাওয়া যায় না। এক বাটনেই বাজিমাত। মানে বাটন টিপলে ছাতা খুলে যায় আবার বাটন টিপলেই বন্ধ! আকারে ক্লাসিক ছাতার চেয়ে অনেকটাই ছোট বলে ব্যাকপ্যাক, ভ্যানিটি ব্যাগ বা ব্রিফকেস এ সহজেই ক্যারি করা যায়।
- পকেট আম্ব্রেলা: এই ছাতা তৈরিই করা হয়েছে হঠাত বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য। আপনার ছোট হাত ব্যাগেও অনায়াসে ঢুকে যায় এই পকেট ছাতা। খুবই হালকা তাই ক্যারি করতেও কোনো ঝামেলা মনে হয় না। তবে হালকা হওয়াতে যেমন সুবিধা কিছুটা অসুবিধাও আছে।এই ছাতার কনস্ট্রাকশন তেমন মজবুত নয়। তাই হলো ঝড়ো হাওয়ার বৃষ্টিতে উল্টে গিয়ে বা ছাতার হাতল বাঁকা হয়ে গিয়ে আপনাকে ভিজিয়ে দিতে পারে। পকেট ছাতাকে কমপ্যাক্ট ছাতাও বলা হয়।
- বাবল আম্ব্রেলা: বাবল ছাতার ক্যানোপি মানে মাথা ঢাকার অংশটা বাবল শেইপ-এর হয়। অর্থাৎ সাধারন ছাতার তুলনায় একটু বেশি প্রসস্থ। এই ছাতার আরেকটি দিক হল, এর ক্যানোপি কাপড়ের পরিবর্তে ট্রান্সপারেন্ট প্লাস্টিক দিয়ে করা হয়। এর অবশ্য একটি বড় কারণ আছে। যেহেতু বাবল শেইপড ক্যানোপি তাই এতে চোখ ঢাকা পড়ে যায়। দেখার সুবিধার্তেই বাবল ছাতাতে ট্রান্সপারেন্ট ক্যানোপি ব্যবহার করা হয় আর সেই সাথে এই ছাতা বৃষ্টির সময় বাতাস থেকেও রক্ষা করে।
- হাই উইন্ড বা স্টর্ম আম্ব্রেলা: যখন ঝড়ো হাওয়া আসে, তখন কি হয়? ছাতা উলটে ভিজে যাই আমরা? আরে নাহ, সবসময় নয়! সেই জন্যই আছে হাই উইন্ড আম্ব্রেলা। সাধারণত উপকূলবর্তী এলাকাতে ঝড়ো বৃষ্টি বেশি হয়ে থাকে। আর তখন এই স্টর্ম আম্ব্রেলা আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। তবে ঘন্টায় নূন্যতম ৫৫ মাইল বেগে ঝড় না হলে এই হাই উইন্ড আমব্রেলার দরকার খুব একটা হয় না!
- ফ্যাশনেবল আম্ব্রেলা: সেই প্রাচীন কালের কচু পাতার ছত্রছায়া থেকে আজ ছাতা আমাদের কাছে এক ফ্যাশন অনুষঙ্গ। বাহারি রঙ আর নানান ঢং এর ছাতা ফ্যাশনে যেন এক নতুন মাত্রা যোগ করে দেয়। ফ্যাশন ডিজাইনাররা আজকাল বিভিন্ন নান্দনিক কাপড় দিয়েও সাধারণ ছাতাকে করে তুলছেন আকর্ষনীয়। রাস্তায় বের হলেই আজকাল যেন ফ্যাশনেবল ছাতার প্রতিযোগিতা দেখা যায়। তাছাড়া ফ্যাশন ফটোগ্রাফীতে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় ছাতা কেমন ফ্যাশন অনুষঙ্গ ।
- পেপার আমব্রেলা: পেপার আম্ব্রেলা সাধারণত ২০০০ বছর আগে প্রাচীন চীন দেশে দেখতে পাওয়া যায়। এই কাগজের ছাতাকে তারা নিজেদের সংস্কৃতিতে ধারন করার পাশাপাশি আশেপাশের এশিয়ান দেশগুলোতেও ছড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য যে, এই পেপার আমব্রেলা চীনাদের একটি ধর্মীয় প্রতীকও বটে।
- গ্যাজেট/ ফানি আম্ব্রেলা: এই গ্যাজেট বা ফানি আম্ব্রেলা মূলত পকেট আমব্রেলা-রই পরিবর্তিত রূপ যা আসলে বাচ্চাদের জন্য বানানো হয়েছে। হালকা ওজনের এই আমব্রেলা পাওয়া যায় বিভিন্ন শেইপ-এ। রেইনবো আম্ব্রেলা আর সুন্দর সুন্দর উজ্জ্বল একরঙ্গা বা কার্টুন প্রিন্ট-এর বিভিন্ন আম্ব্রেলা-তো আছেই। সেই সাথে বাটারফ্লাই, বেয়ার শেইপ দেয়ার পাশাপাশি এইসব ছাতার আকর্ষণ আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে এর চমকপ্রদ কেইস। কোনটা বানানা শেইপ, কোনটা ডল আর এমন কত কিছু! হ্যান্ডেল দেখলে খুঁজে পাওয়া যাবে সামুরাই সোর্ড, ডল হেড- এমন সুন্দর সুন্দর অংশ। বাচ্চারা বৃষ্টিতে ভিজবে এমন ছাতা ফেলে? অসম্ভব!
- পার্সনাল প্যারাসল ও স্টেশনারি প্যারাসল আম্ব্রেলা: বৃষ্টি থেকে বাঁচার প্রয়োজনীয়তা ছাড়িয়ে যখন ফ্যাশন জগতের মানুষেরা তাদের স্কিন প্রটেকশন-এর জন্য অর্থাৎ রোদের প্রকোপ থেকে বাঁচতে প্রায় প্রত্যেকেই ছাতা ব্যবহার শুরু করলো, তখন থেকেই এই প্যারাসল ছাতার উদ্ভব। এই প্যারাসল ছাতা সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রে থেকে প্রটেক্ট করতে পারে। এশিয়ার মানুষ এই প্যারাসল ছাতা বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর স্টেশনারি প্যারাসল কোনটা? কি কাজ? স্টেশনারি প্যারাসল ছাতাও পার্সনাল প্যারাসল ছাতার মতই। শুধু আলাদা এটুকুই যে এটি আকারে বড় হয় এবং স্ট্রিট ফুড কোর্ট, বিচ- এমন সব উন্মুক্ত জায়গায় এদের ব্যবহার। স্টেশনারি প্যারাসল আকারে বড় তাই এক্ষেত্রে অনেকেই এর উপযোগীতা পায়।
- গলফ আম্ব্রেলা: গলফ প্লেয়ার-রা তাদের খেলার জন্য এই আমব্রেলা ব্যবহার করে থাকেন। এটির ক্যানোপি ৭০ ইঞ্চি ডায়ামিটার-এর। এই আম্ব্রেলা গলফ ব্যাগেও ক্যারি করা যায়। আর গলফ আম্ব্রেলা ক্যারি করার প্রধান কারণ হল খেলার সময় আকস্মিক বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পাওয়া। এই গলফ আম্ব্রেলাও একত্রে অনেক মানুষকে সেইভ করতে পারে।
আর, ছাতা যে শুধু বর্ষাকালেই আমাদের বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে না, কাঠফাটা রোদ্দুর থেকেও বাঁচিয়ে রাখে- আমাদের তা তো সবারই জানা! সূর্যের ইউভি রে থেকে ত্বককে আড়াল করে আগলে রাখে। রোদে ঘেমে আর বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাধানো আর না! আর নিজের ড্রেস আর অন্যান্য এক্সেসরিজ-এর সাথে ম্যাচ করে যেকোনো টা চুজ করতে পারেন অনায়াসেই, স্টাইল-টাও মেইন্টেইন হবে দারুণভাবে!
তাই চলুন, থাকি ছাতার ছত্রছায়ায়… সুস্থতার মায়ায়!
লিখেছেন- শিফাত আরা সঞ্চা