ছোটবেলায় আমার চুল খুব ঘন ও সুন্দর ছিল। আর মজবুত ছিল এতটাই যে, চুল আঁচড়ালেও খুব কমই উঠে আসতো। আর চুল ভেঙে যাওয়া তো অনেক দূরের কথা! ধরুন যদি মুঠ করে টান দিতাম, উঠতোই না। খেলাধুলা করে ও ধুলোবালি মেখে বাসায় ফিরতাম যখন, মা বকাবকি মোটেও করতেন না। মা-ই আমায় চুলের যত্ন নিতেন। খুব যত্ন করে তেল দেয়াটা মায়ের কাছেই তো শেখা! বিলি কেটে কেটে হালকা ম্যাসাজ করে পুরো মাথায় কি যে সুন্দর করে তেল দিয়ে দিতেন আমার মা!
তারপর ধীরে ধীরে বড় হওয়া আর চুলের রুক্ষ ও দুর্বল হওয়া শুরু। ভার্সিটিতে ওঠার পর থেকে পড়াশোনার চাপ, দৌড়াদৌড়ি, রাস্তার জ্যামে ধুলোবালি আর নোংরা কালো ধোঁয়ার যন্ত্রণা- পোহাতে হয়েছে এই চুলকে অনেক সময় জুড়ে। একটু ধৈর্য ও সময় নিয়ে তেল দেয়াটা দেখা যেত যে সেভাবে হয়ে উঠত না। আম্মু যে কত বলতেন তেল দিতে। সময়ই হত না। বা হয়তো ক্লান্তি আর আলসেমিতে দেয়া হয়ে উঠত না! শ্যাম্পুটাই বেশি করা হত। আর হেয়ারপ্যাক তো দেয়াই হত না! যার কারণে চুলের গোঁড়া নরম হয়ে যাচ্ছিল এবং উঠে আর কমে জায়গায় জায়গায় স্ক্যাল্প দেখা যাচ্ছিল। উফ! সেই দিনগুলো! মনে পড়লেই ভয় লাগে!
কেন হয়েছিল ব্যাপারগুলো? চিন্তা করে করে হয়রান! তারপর এ নিয়ে একটু পড়াশুনা করে যা জানলাম তার একটা ছোট্ট বিশ্লেষণ দিচ্ছি।
চুলের তিনটি লেয়ার থাকে-
মেডুলা: চুলের শ্যাফট-এর একদম মধ্যকার নরম অংশটাকে বলে মেডুলা। ঘন চুলে মেডুলার পরিমাণ বেশি, কিন্তু পাতলা চুলে প্রায় নেই বললেই চলে!
কর্টেক্স: এটি চুলের মোটা স্তরটি, যাতে প্রচুর ফাইব্রাস প্রোটিন থাকে। এটিতেই আছে পিগমেন্ট যা আমাদের চুলের রংটা আনে।
কিউটিকল: আর কিউটিকল হচ্ছে বাইরের সবচেয়ে শক্ত ও রক্ষাকারী স্তরটি।
ধুলো-ময়লায় একাকার হয়ে থাকা চুলকে অতিরিক্ত ধোয়া, স্টাইলিং, কালারিং ও আঁচড়ানোর জন্য কিউটিকল নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে কর্টেক্স-কে অরক্ষিত থেকে যায়। চুলের ভেঙে যাওয়া ও দুর্বল হয়ে পড়ে পাতলা হয়ে যাওয়ার এখানেই হয় শুরু।
ব্যাপারটা নজরে আসতেই শুরু করলাম চুলের যত্ন নেয়া! এবং নিয়ম করে, বিলি কেটে, সময় ও ধৈর্য নিয়ে এবং ম্যাসাজ করে তেল দেয়া শুরু করলাম- ঠিক আম্মু যেভাবে দিয়ে দিতেন। হট অয়েল ম্যাসাজ নিলাম। তেল দিয়ে হেয়ারপ্যাক বানিয়ে নিয়ম করে চুলে দেয়া শুরু করলাম। সময় লাগলো, কিন্তু অনেকদিন পর ধীরে ধীরে আবার আমার ঝলমলে মজবুত চুল আমার কাছে ফিরে এলো। সেই যত্ন আমি এখনো নেই এবং সবসময়ই নেব। চুলে তেল দেয়াটা আর ভুলেও মিস দেই না। আর এখন তো আমি চাকরিজীবী। চুলের গ্রোথেরও একটা ব্যাপার কিন্তু থাকে। চুলে যদি তেল না দেই তবে না পুষ্টি পাবে, আর না হবে মজবুত!
আমার চুল কখনো ছোট, কখনো বড়- মোটামুটি সব ধরনের স্টাইলিং-ই চুলে করেছি। এখন আমার চুলে লং-বব কাট দেয়া। আবারও বড় করবো বলে ঠিক করেছি। তবে যেমনই হোক না কেন, তেল আমার লাগাতেই হবে। আসলে বিশুদ্ধ নারকেল তেলটা পাওয়াটাও কিছুটা ঝক্কির ব্যাপার।
আর নারকেল তেল হচ্ছে ন্যাচারাল কন্ডিশনার। আমি শ্যাম্পু করার আগে প্রায় ১০ মিঃ মাথায় তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে পরে আরও এক্সট্রা ২.৫ ঘণ্টা রাখি। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলি। সপ্তাহে ৩ বার এটা করা আমার ডেইলি হেয়ার কেয়ার রুটিন-এর একটি। এমনিতে গোসলের আগে চুলে নারকেল তেল লাগালে পানিতে চুল ভেজানোর পর চুলের ভেতর পানি শোষণ কম হয়। ফলে ক্ষতিও অনেক কম হয়। আর নারকেল তেল মাখলে চুলের নারিশমেন্ট হয় শতভাগ, চুল অনেক স্মুদ এবং মজবুত হয়। আর হ্যাঁ, আমার কিন্তু কখনোই খুশকি হয় নি। কারণ কি জানেন?- নারকেল তেল! নারকেল তেলে বিদ্যমান ‘লরিক এসিড’ এবং ক্যাপ্রিক এসিড-এর অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রোপার্টিজ স্ক্যাল্প থেকে খুশকি নির্মূল করে চুলকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করে।
নারকেল তেল চুলের প্রোটিন লস কমায় চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে তোলে। ফলে ঐ আগা ফাটা, চুল ভাঙা- এধরনের সমস্যাগুলো কিন্তু এই রেগুলার তেল দেয়ার পর থেকে আসলেই আমি আর ফেইস করি নি।
তাহলে দেখতেই পারছেন, চুলের মজবুত থাকাটা যে বিশুদ্ধ নারকেল তেলের উপর কতটা নির্ভরশীল! তাই আমি সবাইকেই নিয়মিত বিশুদ্ধ নারকেল তেল লাগাতে সাজেস্ট করবো। চুল মজবুত থেকেই না হয় প্রাণবন্ত হয়ে উড়ুক! যত্নে বাড়ুক সুন্দর চুলগুলো। ঘরে ঘরে গড়ে উঠুক আরও নতুন নতুন মজবুত চুলের গল্প!
লিখেছেন- আনিকা ফওজিয়া
ছবি- বিগডেকোট.কম