‘লাভ-হেট রিলেশনশিপ’…. কনসেপ্ট-টা কি সেটা যারা বোঝে না তাদের জন্য কি করা উচিত জানেন? জাস্ট এক জোড়া ৩ ইঞ্চি হিল পড়িয়ে তাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান…! তার পা লম্বা লাগবে, দেখতে স্লিম লাগবে, হাইট একটু বেড়ে যাওয়ায় সবাই ঘুরে ঘুরে তাকে দেখবে…… চমৎকার একটা এক্সপেরিয়েন্স! কিন্তু একইসাথে ১ ঘণ্টা পর পায়ে ফোস্কা, ২ ঘণ্টায় সেই ফোস্কায় বিশাল একটা ক্ষত, আর ৩ ঘণ্টার মাথায় পায়ের পাতায় ব্যথা, ফোস্কার যন্ত্রণায় চোখে পানি নিয়ে একটা বসার জায়গা বা বাসায় কিভাবে দ্রুত চলে যাওয়া যায় সেই ফন্দী আঁটা!
কইতেও পারি না… সইতেও পারি না… এই হচ্ছে- ‘হাই হিল চরিত’।
পেন্সিল হিল পড়ে যারা সুন্দরভাবে হাঁটতে পারেন তারাই জানেন হাই হিল-এর সৌন্দর্য আর এই এক জোড়া জুতোর পাওয়ার আসলে কতটা! কিন্তু এই বিরাট কনফিডেন্স বুস্ট-এর সাথে আসে বেশ অনেকখানি ব্যথা। কেউ কেউ ‘Beauty is pain’ – জপে দাঁতে দাঁত চেপে দিন পাড় করেন, আবার কেউ- “দরকার নেই এসব, আরামে থাকি সেই ভালো”- ভেবে নরম মাখনের মতো স্যান্ডেল বা ফ্লিপ ফ্লপ বেঁছে নেন।
[picture]
কোন পক্ষই ভুল নন, এবং হ্যাঁ, ফ্যাশনের সাথে আরাম আর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখতে হবে,কারণ দিন শেষে জোর করে নিজের সহ্য ক্ষমতার বাইরের হিল পড়া কোনভাবেই হেলদি নয়!
তবে কি হিল বাদ? না, অবশ্যই না। আপনার ইচ্ছামত যেটুকুতে আপনি কমফোর্টেবল সেটা আপনি অবশ্যই পড়বেন। আর হিল পড়ে দিন কাটানোটাকে আরেকটু সহজ করে যদি নেয়াই যায় তবে ক্ষতি কি রাইট? তাই জানতে হবে হাই হিল জুতোগুলোকে আরও কমফোর্টেবল করার টিপস আর ট্রিকস-গুলো।
জুতো কিনতে যাবেন? মাথায় রাখুন এই পয়েন্টগুলো-
- শুরুটা করতে হবে কোথায় কোন জুতা পড়বেন সেটা মাথায় রেখে। অল্প সময়ের জন্য রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফে-তে যাচ্ছেন? নাকি পার্টি-তে যাচ্ছেন? নাকি অফিস বা ভার্সিটি? প্রত্যেকটা অকেশন-এ কতসময় বসে থাকবেন আর দাঁড়িয়ে হাঁটাচলা করবেন সেটা হিসেব করে প্রোপার ফুটওয়ার চুজ করতে হবে।
- হিল-ই যদি কিনতে চান তবে একটু ভালো মানের জুতোয় ইনভেস্ট করুন, স্পেশালি সেটা যদি ডেইলি পড়ার মতো জুতা হয়। অনেকেই প্রফেশনাল বা কর্পোরেট লুক-এর সাথে হিল পড়েন, এক্ষেত্রে ব্র্যান্ডেড ভালো লেদার বা কমফোর্টেবল ম্যাটেরিয়াল-এর কোন তুলনা নেই! নিশ্চয়ই চাইবেন না একদিন অফিস পার্টিতে বা মিটিং-এ আনকমফোর্টেবল হিল পড়ে পরের ২ সপ্তাহ ফোস্কার যন্ত্রণায় ফ্লিপ ফ্লপ পড়ে ঘুরতে, রাইট?
- আপনি কি ডেইলি লাইফে ফ্ল্যাট বা ওয়েজ হিল পড়েন? সেক্ষেত্রে হঠাৎ একদিন ৪ ইঞ্চি পেন্সিল হিল পরে সারাদিন কাটানো আপনার পক্ষে ইম্পসিবল হবে। ব্যালেরিনা, ফ্ল্যাট বা জুত্তি পড়ে যারা অভ্যস্ত তাদের ডেইলি ওয়্যার হিল হওয়া উচিত ২.৫ থেকে ৩ ইঞ্চি। ব্লক হিল আজকাল ফ্যাশনে আছে। এগুলো অত্যন্ত কমফোর্টেবল। পেন্সিল হিল-এর বদলে ব্লক হিল বা মিউল কিনতে পারেন।
ছবিঃ ব্লক হিল
- যারা রেগুলার হিল পড়েন না তাদের জন্য ‘ankle strap’ অত্যন্ত হেল্পফুল। পায়ের পাতায় ফোস্কা সাধারনত হয় উঁচু জুতা থেকে পা যখন বারবার পিছলে নিচে নেমে আসে। গোড়ালিতে বাঁধন থাকলে এই পিছলে গিয়ে ফোস্কা পড়া কমে প্লাস ব্যালান্স-ও বাড়ে। তাই অবশ্যই strap দেয়া জুতো কেনার ট্রাই করবেন।
Strap = কমফোর্টেবল strapless heel = আনকমফোর্টেবল
- সোলের থিকনেস যত বেশি হবে জুতা ততই কমফোর্টেবল হবে। তাই সোল-এর থিকনেস-টা খেয়াল করবেন।
প্ল্যাটফর্ম হিল = কমফোর্টেবল থিন সোল হিল = আনকমফোর্টেবল
হাই হিল সারভাইভাল গাইড
সত্যি কথাটা হল, সবচেয়ে কমফোর্টেবল জুতাগুলো কখনোই খুব সুন্দর বা খুব ফ্যাশনেবল হবে না… #ফ্যাক্ট । কিন্তু সুন্দর একটা হিল আজকের আউটফিট-এর সাথে খুব ভালো যাচ্ছে, আর আপনি যাচ্ছেন এমন কোন কাজে যেখানে আপনাকে হয়তো অনেক হাঁটতে হবে/দাঁড়িয়ে থাকতে হবে! সেক্ষেত্রে পায়ের বারোটা বাজা ঠেকাবেন কিভাবে? চলুন দেখি কিছু সলিউশন-
- ব্যান্ড এইড বাসায় থাকলে হিল পড়ার আগে দুটো ব্যান্ড এইড দিয়ে নিজের দু’পায়ের ২ আর ৩ নম্বর আঙ্গুল একত্রে টেপ করে ফেলুন। হিল পড়ে অনেক হাঁটাহাঁটি করলে পায়ের পাতায় বা ‘বল অফ ইয়োর ফিট’-এ যে প্রচণ্ড ব্যথা হয় সেই ব্যথা অনেক অংশেই কমে যাবে। পায়ের পাতায় চাপ কমে যাবার কারনে ইজিলি বেশ অনেক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পাড়বেন।
এভাবে টেপ করবেন, ব্যান্ড এইড যেকোনো ফারম্যাসি-তে পাবেন।
- হিল পড়ে হাঁটাহাঁটি করা বা সারা দিন কাটিয়ে দেয়ার দরকার হলে অবশ্যই একেবারে নতুন জুতা পড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন না, খবরদার! ১৫ মিনিট পরেই ওই জুতা আপনার জীবন ধ্বংস করে দেবে! তাই, বিশেষ অকেশন-এ কেনা নতুন টাইট জুতা কীভাবে একটু কমফোর্টেবল করবেন?
পায়ে মোটা একজোড়া মোজা পড়ুন। তার উপরে আপনার হিল জোড়া পড়ুন। এবার একটা ব্লো ড্রায়ার দিয়ে ১৫-২০ মিনিট হালকা গরম বাতাস জুতার উপরে দিন। এতে খুব কুইকলি নতুন কেনা টাইট জুতার এক্সট্রা টাইট অংশগুলো আপনার পায়ের মাপে ফিট হয়ে যাবে। আর জুতা পড়ার কিছুক্ষণের ভেতরেই পায়ে ব্যথা, ফোস্কার যন্ত্রণা পোহাতে হবে না।
- ঘরে ‘মোলস্কিন রোল’ রাখতে পারেন। ফোস্কা পড়ছে বা পড়ার চান্স আছে এমন অংশে মোলস্কিন টেপ করে রাখলে বেশ অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়। ফারম্যাসি-তে মোলস্কিন পাবেন। স্পেশালি স্টিলেটো-এর জন্য এটা বেশ হেল্পফুল।
- অ্যান্টি-ব্লিসটার সটীক ইউজ করতে পারেন। ফোস্কা যেসব জায়গায় পড়ে সেসব জায়গায় আনকমফোর্টেবল লাগলেই এটা লাগিয়ে নেবেন। এতে ফোস্কা পড়া বা ফোস্কা ফেটে ক্ষত তৈরি হওয়া আর জুতার ঘষায় পায়ে বাজে দাগ ছোপ পড়া কমবে। এই প্রোডাক্ট দেশে তেমন অ্যাভেইলেবল না। কিন্তু খুব ইজিলি অ্যামাজন বা বুটস থেকে অর্ডার করতে পারেন। দাম কখনোই খুব বেশি হয় না।
বুটস অ্যান্টি ব্লিসটার সটীক, দাম- ৪ পাউন্ড-এর মতো।
- হিলের সোলে বারবার পা পিছলে যাওয়াটা একটা বড় সমস্যা। এই ফ্রিকশন থেকেই পায়ের নিচে খুব বাজে ভাবে ফোস্কা পড়ে। এটা ঠেকাতে ‘সোল প্যাড ইনসার্ট’ ইউজ করতে পারেন।
সফট হিল ইনসার্ট যেকোনো হিল জুতাকে নিমেষেই কমফোর্টেবল করে ফেলতে সক্ষম। অ্যামাজন-এ ১০-১৫$ এ বেশ ভালো কোয়ালিটির লং লাস্টিং হিল ইনসার্ট পাবেন।
- Strap ছাড়া জুতার ক্ষেত্রে ‘হিল গ্রিপ’ পড়তে পারেন। এতেও পা সোল-এর উপর পিছলে গোড়ালির পেছনে আর পায়ের পাতায় ফোস্কা পড়ার হার কমবে। ‘হিল লাইনার’ বা ‘হিল গ্রিপ’ অ্যামাজন, বুটস-এ পেয়ে যাবেন।
হিল লাইনার-এর সেটের দাম পড়বে ৭-১০$ এর মতো।
যন্ত্রণার ভয়ে হিলের র্যাক-এর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়েও একজোড়া ফ্ল্যাট কিনে বাড়ি ফিরবেন ভাবছেন? হয়তো উপরের উপায়গুলো ইউজ করে আপনিও সেফলি কমফোর্টেবল-ভাবে একটু আধটু হিল ট্রাই করে দেখতে পারবেন।
সাহস করে শখের জুতা জোড়া কিনেই ফেলুন তাহলে, কেমন?
লিখেছেন- তাবাসসুম মীম