ত্বক-চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আদার তুলনা হয় না। আদায় প্রায় ৪০ রকমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস রয়েছে, যা দেহ থেকে টক্সিন পদার্থকে দূর করতে এবং শরীরে রক্তের সঞ্চালন উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, পর্যায়ক্রমে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতার উন্নতি ঘটিয়ে একে টানটান ও কোমল করে।
এছাড়াও আদা একটি শক্তিশালী কামোদ্দীপক (Aphrodisiac), অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং টোনার যা ত্বকের দূষিত পদার্থগুলোকে পরিস্কার করে, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণকে বিনাশ করে, রোমকূপের সংকোচন করে এবং ত্বকে একটি ঔজ্জ্বলতা আনে। যদি আপনি ভেবে থাকেন, আদার উপকারিতা কেবলমাত্র ত্বকের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ, তবে আরো একবার ভাবুন। আদায় উপস্থিত ফ্যাটি এসিড, স্ক্যাল্পে রক্তের সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করে, নতুন হেয়ার ফলিকল গজাতে উৎসাহিত করে এবং চুলের ভেঙে যাওয়া আটকায়। তাহলে, আপনি আর কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? ত্বক-চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি নিয়ে আর দুশ্চিন্তা নয়! আজ আপনাদের জন্য রইল কিছু আশ্চর্যজনক অথচ সহজ আদার মাস্ক, যেগুলোর জন্য আপনি আমাদের ধন্যবাদ জানাবেন।
১) উজ্জ্বলতা বর্ধক মাস্ক
১ চা চামচ সদ্য নির্যাসিত আদার রস নিন, তাতে ২ টেবিল চামচ গোলাপজল ও ১ টেবিল চামচ মধু মেশান। সব উপকরণ ভালভাবে মিশে যাওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। আপনার মুখ ও গলায় সমানভাবে একটা কোট লাগান। ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে, আদার এই ভেষজ মাস্কটিকে ২০ মিনিটের জন্য থাকতে দিন।
২) ব্রণের জন্য মাস্ক
১চা চামচ আদার গুড়োর সাথে, ১চা চামচ মধু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মেশান। যতক্ষণ না একটা মসৃণ পেস্ট পাচ্ছেন ততক্ষণ মিশ্রণটিকে মেশান। ব্রণ প্রভাবিত এলাকায় মিশ্রণটি লাগান। ৩০মিনিট ঐভাবেই থাকতে দিন। একবার শুকিয়ে গেলে, ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণকে সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে ফেলতে সপ্তাহে একবার এটি করুন।
৩) স্কিনের সৌন্দর্য রক্ষায় সেলুলাইট (cellulite) মাস্ক
১কাপ আমন্ড ওয়েল, ২টেবিল চামচ আদা বাটা ও ১টেবিল চামচ দারুচিনির গুঁড়ো নিন। আপনার চাহিদা অনুযায়ী উপাদানগুলোর পরিমাণ ঠিকঠাক করে নিন। ভালোভাবে মিশ্রণটি মিশে যাওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। সেলুলাইট প্রভাবিত এলাকায় সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। ২০মিনিট এই অবস্থায় রাখুন ও পরে ধুয়ে ফেলুন। যদি আপনার কাছে ত্বকের জন্য আদা ব্যবহার করার আরো কিছু টিপস থেকে থাকে, তবে তা নিচের মন্তব্য বিভাগে লিখে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।
৪) ক্ষতের দাগ হাল্কা করতে
একটি আদাকে ছিলে, কেটে ও ঘষে রস বের করে নিন। ঠান্ডা করতে কিছুক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন। প্রভাবিত এলাকায় নির্যাসটি লাগান। ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলার আগে, ত্বককে নির্যাসটি শুষে নিতে দিন। ক্ষতের দাগ হাল্কা করতে দিনে কমপক্ষে দুইবার আদার এই নির্যাসটি লাগান এবং ৬সপ্তাহ বা তারও কম সময়ের মধ্যেই আপনি তফাৎ দেখতে পাবেন।
৫) ডিটক্স স্নান
কিছু কিছু পেশিকে রিল্যাক্স করতে ও শরীরে রক্ত প্রবাহ উদ্দীপিত করতে, এই সুপার-থেরাপিউটিক ডিটক্স (Detox) স্নানটি ট্রাই করুন। হাল্কা গরম স্নানের জলের সাথে, হাফ কাপ ইপসম সল্ট (epsom salt) ও দুই টেবিল চামচ আদা গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। আপনার প্রতিদিনের স্নানে যাওয়ার আগে, নিজেকে ঐ জলে ভিজিয়ে রাখুন যতক্ষণ না পেশিকে শিথিল হতে আপনি সচক্ষে দেখতে পারছেন।
৬) ত্বকের সৌন্দর্যে বডি স্ক্রাব
২টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, সমপরিমাণ চিনি, ২টেবিল চামচ আদা বাটা এবং কয়েক ফোঁটা লেমন অয়েল নিন। মেশাতে থাকুন যতক্ষণ না আপনি একটি দানাদার পেস্ট পাচ্ছেন। শরীরকে সামান্য ভিজিয়ে নিয়ে, সার্কুলার মোশনে ঐ মিশ্রণটিকে ম্যাসাজ করতে থাকুন। পায়ের থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন। ঠান্ডা জলে ধুয়ে নেওয়ার আগে, ১০-১৫মিনিট ধরে এই ম্যাসাজ করুন।
৭) চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জোজোবা তেলের থেরাপি
আধা কাপ জোজোবা তেলের সাথে ২টেবিল চামচ আদার রস মেশান। ১-২মিনিটের জন্য তেলটিকে গরম করে নিন। ত্বকে সহ্য করার মতো অবস্থা পর্যন্ত তেলটিকে ঠান্ডা করে নিন। এই হাল্কা গরম তেলটিকে আপনার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। তেলকে ভালোভাবে শুষে নিতে ও রক্ত সঞ্চালিত করতে, আপনার আঙুলের নরম ডগা দিয়ে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। সারারাত থাকতে দিন। সকালে হাল্কা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের বৃদ্ধির জন্য, সপ্তাহে কমপক্ষে একবার আদা ব্যবহার করুন।
আদার ব্যবহার ত্বক ও চুলের যত্নে আসলেই যে কতটা কার্যকরী, দেখলেন তো? তাই বলছি, অনায়াসেই কিন্তু আদাটাকে আপনার প্রতিদিনকার যত্নের লিস্টে রাখতে পারেন। সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন!
আপনি যদি ত্বক ও চুলের যত্নে অথেনটিক প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন, তবে সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য ভালো একটি অপশন। আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত সেখান থেকে প্রোদাক্ট কিনতে পারেন। এছাড়া, অনলাইনে প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সুন্দর থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: Shutterstock