ভাড়াটের পেইন শুধু ভাড়াটেই জানে, এইটা ধরবেন না, ওইটা ছোঁবেন না, পেরেক ঠুকবেন না, রঙ যেন নষ্ট না হয়! পানি গ্যাসের হাজার সমস্যা, বাড়িওয়ালার উদ্ভট আবদার আর বছর বছর ভাড়া বাড়ার যন্ত্রণায় ওই বাসা সাজানোর ইচ্ছা যেটুকু থাকে তা কখন উবে যায়! টেরও পাওয়া যায় না! ‘রাখতেও পারি না, ফেলতেও পারি না’ বাসা, কিন্তু তাই বলে কি সেখানে একটু রুচিশীল ভাবে থাকবেন না? ভাড়া হোক আর যাই হোক, আপনারই তো ঘর !
ভাড়া বাসা সাজানোর কিছু ইজি টিপস নিয়ে তাই আজকের লেখা।
অবশ্যই বাড়িওয়ালার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখবেন এবং বাসার রঙ বা দেয়াল নিয়ে কিছু করতে চাইলে জানাবেন!
জানি সব মানুষ সমান নয়! কিন্তু না জানিয়ে ছোট একটা পেরেক পোঁতার জন্যও এতো টাকা ভাড়া গোনার পড় খোঁচা মারা কথা শুনতে কি ভালো লাগে? তাই বাড়িওয়ালা যদি রঙ, পেরেক এসব নিয়ে ক্লিয়ারলি আপনাকে রুলস রেগুলেশন ভাড়া নেয়ার সময় জানিয়ে না দেয় তাহলে নিজে থেকে এগিয়ে সব রুলস জেনে নেবেন। নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে নিজের প্রয়োজন নিয়ে আলোচনা করবেন। নিউট্রাল ওয়াল পেইন্ট, লাইট শেড এসব আছে কিনা সেটা দেখে নেয়াটা জরুরী, ভাড়া ছোট বাসার রঙ নিয়ে আগের লেখায় কথা বলেছি, সেটা দেখে নিতে পারেন।
‘লাইটিং’ আপনার প্রবলেম ৫০% সল্ভ করে ফেলবে!
বাসা ভর্তি রুচিহীন টিউবলাইট? হোয়াইট লাইট থাকলে সেই আলোতে কোন ওয়ার্ম টোন বা ফার্নিচার ভালো লাগে না। তাই কে আপনার হাত বেঁধে রেখে বলছে এই টিউব লাইটই জ্বালাতে হবে? বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প শেড কিনুন (অবশ্যই বাসার থিমের সাথে মিলিয়ে) , ফ্লোর মাউনটেড ল্যাম্প, টেবিল ল্যাম্পের হাজার ধরনের প্রোডাক্ট যেকোনো ডেকোরেশন শপে পাবেন। ঘরে আনুন রুচিশীল কিছু ফেয়ারি লাইট! খুবি কম দামে কয়েক ছড়া ফেয়ারি লাইট মুহূর্তে ঘরের ভাইব চেঞ্জ করে ফেলবে। বেডরুমগুলোয় টিউব লাইট না জ্বালিয়ে লো ওয়াটের ওয়ার্ম লাইট বাল্ব কিনে সেগুলো ইউজ করুন। ঘুম ভালো হবে, রিলাক্স থাকবেন আর ঘরটাকেও ঘর মনে হবে।
একগাদা ফার্নিচার কিনে ঘর ভরবেন না!
ফার্নিচার কেনার সময় অনেকেরই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার সময় হয় না, তাই ৯০% ক্ষেত্রে খুব শখের ফার্নিচার এক বাসার জন্য লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয়, তারপর নেক্সট বছর বাসা চেঞ্জ করলে নতুন বাসায় ওই ফার্নিচারই গাবদা হয়ে থাকে, শখের ডাইনিং টেবিল নতুন বাসায় বসানোর পড় সেটার পাশ দিয়ে হাঁটার জায়গাও থাকছে না এমন হরহামেশা দেখা যায়। সুতরাং, স্মার্ট হন, ভাড়া বাসাতেই নেক্সট ১০ বছর যদি থাকতে হয় তাহলে বাসায় ৮ ফিট উঁচু উঁচু আলমারি, ১০-১২ জনের ডাইনিং টেবিল কিনে বসে থাকবেন না! এসব টেনে টুনে নতুন বাসায় তোলা কষ্ট, বাসা চেঞ্জ-এর সময় এতো দামি জিনিসের ক্ষতি হয়ে গেলে সেটাও কষ্ট, আর সেই বাসায় আপনার গাবদা কাঠের টেবিল, আলমারি স্যুট না করলে যে কেমন লাগবে সেটা তো বাদই দিলাম। সেকেন্ড হ্যান্ড ফার্নিচার বিক্রি করার হ্যাসল-এ যেতে চান এমন কজন আছেন, তাই অযথা এটা সেটা বানিয়ে ঘর ভরলেই যে ঘর সুন্দর দেখাবে তা নয়! চিন্তা ভাবনা করে যতটুকু দরকার ততটুকুই বানাবেন! নিউট্রাল ইউনিক কিছু পিস বানিয়ে সেটাকে সেন্টার করে বাসার থিম ঠিক করবেন। বাদবাকি ছোট খাটো জিনিস ভিনিয়ার-এর রেডিমেড বাজেট অপশন দিয়ে ফিল করবেন।
বাসার ফ্লোর কেমন? খেয়াল করেছেন?
একবার এক ভাড়া বাসায় দেখেছিলাম কড়া হলদে মার্বেল টেক্সচার-এর টাইলস! খুব শখ করে বাড়িওয়ালা এই ইউনিক (!) শেডের টাইলস লাগিয়েছেন! এমন অদ্ভুত শেডের ফ্লোরিং থাকলেও একই প্রবলেম-এ আপনি পড়বেন, ওই বাসায় আপনার অলরেডি কেনা রেগুলার ফার্নিচার কিছুই হয়তো স্যুট করবে না! এক্ষেত্রে ফ্লোর থিম খুব ইজিলি চেঞ্জ করতে পারেন! যাদের বাজেট একটু বেশি তারা রেক্সিন ধরনের ফ্লোর কাভার পুরো বাসায় বা ১-২টা রুমে ইউজ করতে পারেন। কিন্তু ভুলেও ভারী পশমি কার্পেট ফেলবেন না যেন! মোটামুটি কারোরই ভ্যাকুম ক্লিনার থাকে না বলে কার্পেট রেগুলার ক্লিন না করায় বাসায় সবার শ্বাসকষ্ট হতে পারে! বাচ্চাদের তো অসম্ভব কষ্ট হয়! বাজেট কম থাকলে রুমে নিউট্রাল ছোট ছোট শতরঞ্চি বা রাগ ফেলে দিতে পারেন। আবার একটু দেশি থিমে ঘর সাজানোর আইডিয়া নিয়ে এগোলে চমৎকার পাটি, শীতল পাটি কালেক্ট করেও ঘরের আবহাওয়া চেঞ্জ করে ফেলতে পারেন! আরামও হবে, পরিস্কার রাখাটাও ইজি হবে। নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, চেয়ারম্যান বাড়ি- এসব এলাকায় বিভিন্ন বাজেটের রাগ, পাটি, শতরঞ্চি পাওয়া যায়। অপশনের কিন্তু অভাব নেই!!
পর্দায় বৈচিত্র্য আনুন!
পর্দা ছোট বাসায় কিভাবে লাগাতে হয় সেটাও আগের লেখায় টাচ করেছি। কিন্তু অভাবে সোজা সোজা পর্দা সব রুমে রাখা একটু বোরিং। ডাইনিং-ড্রয়িং স্পেস-এ পর্দায় বৈচিত্র্য আনতে পারেন খুব ইজি এক্সেসরিজ ইউজ করেই! হাতের কাছে কিছু এক্সট্রা ড্রেপ, এক্সট্রা কারটেইন হোল্ডার রাখুন। বিভিন্ন অকেশন-এ একটু ডিফারেন্ট এক্সেসরি আপনার ঘরের চেহারা সূক্ষ্মভাবে চেঞ্জ করে দেবে।
সফট ফারনিশিং-এর কথা ভুলে গেলে চলবে না!
বেসিকালি সফট ফারনিশিং বলতে বেড কাভার, কুশন, টেবিল রানার এসবের কথা বোঝাচ্ছি। বাসা বোরিং একঘেয়ে হয়ে গেছে? তাই হুট করে ফার্নিচার কিনে ফেলার আগে অবহেলায় থাকা সফট ফারনিশিং-এর দিকে তাকান। যেখানে একটু ইউনিক কুশন বা থ্রো রাগ দিয়ে ড্রয়িং রুম-এর চেহারা পালটে দেয়া যায় সেখানে বোকা না হলে কেউ নতুন সোফা সেট কিনতে দৌড়ায়? কালেকশনে রাখুন রকমারি টেবিল রানার, কুশন, থ্রো রাগ। ডিফারেন্ট অকেশন-এ থিম সেট করে এসব বদলে ফেলুন। এক ঘেয়েমি মুহূর্তে পালাবে!
খুব শীঘ্রই লাইটিং, সফট ফারনিশিং এসব সেপারেট টপিক-এ ডিটেইল-এ লিখবো, যারা এসব ডেকোরেশন অপশনের সাথে পরিচিত নন তাদের হেল্প হবে। আশা করি আজ নতুন কিছু আইডিয়া দিতে পারলাম। প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
লিখেছেন- তাবাসসুম মীম
ছবিঃ সাটারস্টক