“ও ভাই কত নিল? ইন্ডিয়ান নাকি দেশী? কোন হাট?”-এমন নানান প্রশ্নে মুখরিত সবাই। কারণ? কোরবানির ইদ যে! দেখে শুনে সাধ্যমত সেরা গরু চাই। তাই যারা এখনো কেনেন নি, তাদেরও যাচাই-বাছাই চলছে সবখানেতেই। কোরবানির ইদে কাজের চাপটা যেন একটু বেশিই। ইদের দিন হিমসিম খেতে হয় না এই কথা খুব কম লোকেই বলে। সে ঘরের কাজ হোক আর বাহিরের। অনেক সময়ই বালতি, হাঁড়ি নিয়ে ঝামেলা বেঁধে যায়। হাস্যকর হলেও সত্যি যে সেই ঝগড়া অনেকের ইদের পর অবধি চলে। তাই কোরবানির ইদের আনন্দ ঝুট ঝামেলা ছাড়া উপভোগ করতে করুন ইদের পরিকল্পনা। হাতে সময় নেই একদম। আড় মাত্র ২ দিন বাকি। করে ফেলুন শেষ মূহূর্তে কাজের লিস্ট। কীভাবে করবেন? দেখুন তো আমাদের কাজের লিস্ট কেমন হলো?
১। প্রথমেই আসুন রান্না নিয়ে ভাবি। ইদের দিন কি কি রান্না হবে, সেমাই, পায়েস বা যেমন মিষ্টি হোক আর ঝোলে ঝালে গরু মুরগি যেমনি হোক রাধতে হবে পারফেক্টলি। খেয়েই যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলার পর সবাই আপনার প্রশংসায় সয়লাব হয়ে যায়। সেই জন্য রান্নার আইটেম-এর লিস্ট তৈরি করে এরপর করুন বাজারের লিস্ট। সেই লিস্ট মোতাবেক সহজেই বাজার করে ফেলুন! দেখবেন কিছুই মিস হবে না। ভুল করার উপায়ই নেই!
২। বাজার ঘরে এনেই সব একসাথে আমরা কেউ রাখি না । তবে কাজ শুরু করব ভেবে সব চোখের সামনে রাখি বলে আবার উল্টা ঝামেলা বাধাবেন না যেন! তাড়া থাকলেও একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে রাখুন। দেখবেন কাজের সময় এটা ওটা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করতে হবে না। সময় বেঁচে যাবে।
৩। কোরবানির সরঞ্জাম রেডি করেছেন? না হলে এখনই করুন। ভালো হয় আলাদা করে কোরবানির বালতি যদি রাখেন। নয়তো বাড়ির অস্থির ছেলে এসে চাইতেই না পেলে আপনাকে হাঁড়ি ধোবার টাইম-তো দেবেই না, উল্টো হাতের কাছের গোসলের বালতি নিয়ে দৌড়াবে। যাবে মেজাজটা তখনই বিগড়ে! আর মাংস কাটার সরঞ্জাম, পাটি, কাগজ, হাঁড়ি, হাত মোছার কাপড় বা গামছা, বালতি ইত্যাদি রেডি রাখুন দু-একদিন আগেই। আপনার গোছলের বালতি নিয়ে টান দিবে না। ও হ্যাঁ, মাংস সংরক্ষণের জন্য পলি কিনে রাখুন আগেই।
৪। যে কোন অনুষ্ঠানে ডেজার্ট না হলে কি চলে? উহু! সবাইকে ভালো মত জিজ্ঞেস করুন কি কি খেতে চায় এবার ইদে। নয়তো খাবার সময় মুখ গোমড়া করে বলবে- “মা ভেবেছিলাম এবার ছানার পায়েস খাবো!” তখন কি মায়ের অপারগতার কষ্ট কাউকে আর বোঝানো যায়? যায় নাহ। তাই সন্তানের উচ্ছ্বসিত মুখ দেখতে ডেজার্ট-এর জন্য ভাবুন ভালো করে। সে অনুযায়ী দুধ চিনি আগেই কিনে রাখুন যাতে কম না পড়ে। কারণ শেষ মুহূর্তে চাইলেও পাবেন না! আর সবাই তো ঈদের রাতেই ডেজার্ট করে রাখেন জানি। এই কথা নাই বা বললাম।
৫। শুধু মাংস আর ডেজার্ট রেসেপি নিয়ে থাকলে তো হবে না। ফ্রিজ-টাও পরিষ্কার করেছেন নিশ্চয়। শেষবেলায় একবার মুছে নিন। ঘরের কোনাকানি ঝাট দেয়া শুরু করে দিন। বাড়তি কাগজ বা বোতল ফেলে দিন। নয়তো খবর দিন রদ্দিওয়ালাকে। নিয়ে যাবে যত্নে। আপনার পছন্দ মত সাজিয়ে নিন আপনার বাসভবন। সাজানো, গোছানো ঘরে রাখতে পারেন তাজা ফুল কিংবা সবুজ গাছ। দেখবেন কেমন শান্তি আর স্নিগ্ধ সজীবতায় মন ভরে যায়!
৬। খাবার হলো, ঘর হলো- বাকি রইলো কী? মনে করতে পারছেন না? বলছি এখনই। কসাইয়ের খোঁজ করেছেন? ছেলেদের কাজ ভাবছেন? হোক ছেলেদের কাজ। মনে করিয়ে দিন তাদের। নয়তো ভুল হয়েই যায়। দেখা যায় ইদের দিন কিছু মানুষ কোরবানি দিতে পারেন না। পরের দিন দেন। এতে ইদের আমেজটা তেমন কী পাওয়া যায় বলুন? তাই কসাইয়ের সাথে কথা বলুন আজই।
৭। সব কাজ এখন মোটামোটি গোছানো হলো। এবার দাওয়াত দেয়া-নেয়ার পালা! মুঠোফোনটা তুলে নিন আর আত্নীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিন। প্রতিবেশীদের বাড়ি গিয়ে দাওয়াত দিয়ে আসুন। সক্ষতা বাড়বে। সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিন!
তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক কিছুই ভুল হয়ে যায়। মাথায় থাকে ঠিকই কিন্তু যেন সব কাজ এলোমেলো হয়ে যায়। তাই একটু গুছিয়ে নিলেই এসকল ঝামেলা এড়াতে পারবেন সহজেই। যখন সব ঠিকঠাক মত হবে তখন আনন্দ বেড়ে দ্বিগুণ নয়, বরং দশগুণ হয়ে যাবে! আরেকটা কথা মাথায় অবশ্যই রাখতে হবে। তা হলো ইদটা এবার গরমে পড়েছে। রান্নাতো করতেই হবে। চুলার ধারে অনেক্ষণ থাকতে হবে তাই ঘামটাও ঝরবে বেশ। সুস্থ থাকতে এই গরমে বেশি বেশি পানি পান করুন। আর ত্বকের সুস্থতার জন্য রান্নাঘরে যাবার আগে সানব্লক দিতে ভুলবেন না যেন! সবাইকে ইদ মুবারাক!
লিখেছেন- শিফাত আরা সঞ্চা
ছবি- সাটারস্টক